চট্টগ্রামে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের সামনে অবৈধ ঝুপড়ি দোকান, দুর্ঘটনার শঙ্কা

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার স্টিলমিল এলাকায় অবস্থিত হালিশহর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের আওতাধীন ১৩২/৩৩/১১ কেভি গ্রীডের সাব-স্টেশন (উপকেন্দ্র)। সাব-স্টেশনটির গেইটের দুই পাশে রয়েছে সারিবদ্ধ ১৫টি অবৈধ ঝুপড়ি দোকান।

যে দোকানগুলোর সাথেই লাগানো বৈদ্যুতিক খুঁটি। আর সেই খুঁটির ওপর রয়েছে উচ্চ ভোল্টেজ সম্পন্ন বৈদ্যুতিক কেবল। দোকানের জঞ্জালের কারণে যেকোনো সময়েই ঘটতে পারে অগ্নিকাণ্ডসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

শুধু তাই নয়, সাব-স্টেশনটির ঠিক বিপরীতেই রয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড)। কেইপিজেড গেইট থেকে গার্মেন্টসের বাসগুলো বের হতে গেলেই প্রতিদিন সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। আর সড়ক দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা চলাচলকারী পথচারী, চাকুরিজীবী, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীসহ সকলকেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনটির বাউন্ডারি দেয়াল ঘেষে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ১৫টি চা, পান, সিগারেটের দোকান ও দুরপাল্লার বাস কাউন্টার। আর সেই দোকানের ওপরেই রয়েছে উচ্চ ভোল্টেজ সম্পন্ন বৈদ্যুতিক ক্যাবল। দোকানের জঞ্জালের কারণে সাব-স্টেশনের সিসি ক্যামেরাও থেকে যাচ্ছে আড়ালে। যার ফলে স্টেশনটির সার্বিক নিরাপত্তা ব্যহত হচ্ছে।

দোকানগুলো মূল সড়ক লাগোয়া তার ওপর সামনেই রয়েছে বসার বেঞ্চ৷ যেখানে দিন থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত নানা শ্রেণি পেশার মানুষের আড্ডা জমে৷ বেশিরভাগ সময় সেখানে উঠতি বয়সী কিশোরদের দলবেঁধে আড্ডা দিতে দেখা যায়। যার ফলে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতাও।

ঝুপড়ি দোকান ঘিরে সেখানে সবসময় ৮-১০টি করে রিকশা ও মোটরসাইকেল সড়কের উপর অবস্থান করে থাকে। যার ফলে প্রায়ই সাব-স্টেশনের সামনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

এছাড়া এই এলাকায় অবস্থিত র‍্যাব-৭ কার্যালয়, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঘাঁটি ও তৈল শোধনাগারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এমন একটি এলাকার মূল সড়কের পাশে এ ধরনের অবৈধ ঝুপড়ি দোকান কোনো অবস্থাতেই থাকা উচিত নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বার্তা বাজারকে বলেন, ঝুঁকি রয়েছে জানি। কিন্তু কি করব? দোকান বসানো যায় বলেই দোকানদারি করছি। আর কিছু বলতে পারব না।

কারা এসব দোকান বসানোর অনুমতি দিয়েছে তা জানতে চাইলে কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের কিছু অসাধু লোকের সাহায্যে বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল বারেক কোম্পানি, আরাফাত গলির নাসির, আনোয়ার ও হারুনসহ বিভিন্ন নেতারা গড়েছেন এসব অবৈধ ঝুপড়ি দোকান। দোকানপ্রতি মাসিক মাসোহারা পান তারা।

ইতোপূর্বে চায়ের দোকান হতে আগুনের সূত্রপাত হয়ে সাব-স্টেশনের ক্যাবলেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো। যার ফলে সাব-স্টেশনের একটি ব্রেকারও নষ্ট হয়ে যায়। ওই সময় বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হতে প্রায় ১৫-১৬ ঘন্টা সময় লেগেছিলো।

২০২০ সালের ৪ মার্চ এ বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছিলেন হালিশহর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন।

ওই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছিল জেলা প্রশাসক, প্রধান প্রকৌশলী, ডিজিএফআইয়ের পরিচালক, র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক, উপ-পুলিশ কমিশনার, এনএসআইয়ের উপ-পরিচালক, বিউবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, পিজিসিবির হালিশহর ১৩২/৩৩/১১ কেভি গ্রীড উপকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী, পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অত্র দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীকেও।

চিঠিতে গিয়াস উদ্দিন বলেন, হালিশহর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের আওতাধীন হালিশহর ১৩২/৩৩/১১ কেভি গ্রীড উপকেন্দ্রটি সরকারের একটি IA Category KPI ভূক্ত স্থাপনা। উক্ত স্থাপনার সামনে উচ্চ ভোল্টেজ সম্পন্ন ক্যাবল রয়েছে। উক্ত স্থানে অবৈধভানে ফুটপাত দখলের মাধ্যমে ও বিউবো’র সীমানা প্রাচীর ভেদ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ক্যাবলের ওপরেই চায়ের দোকানসহ কিছু দোকান গড়ে ওঠেছে। যা খুবই বিপদজনক। ইতিপূর্বে চায়ের দোকান হতে ক্যাবলে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। উপকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য উক্ত অবৈধ দোকানঘর সমূহ জরুরী ভিত্তিতে উচ্ছেদ করা প্রয়োজন।

তিনি চিঠিতে আরও বলেন, বর্ণিত উপকেন্দ্র হতে দুই লাখ গ্রাহক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগসমূহ, বেপজা, বিমানবন্দরসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উক্ত অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদের করার অনুরোধ জানান তিনি।

নির্বাহী প্রকৌশলীর চিঠি দেয়ার একবছর পার হতে চললেও অদ্যাবধি কোন সুরাহা মেলেনি। তার ওপর যেন আরও ঘটাও করে চলছে অবৈধভাবে সড়ক দখল করে ফুটপাত বাণিজ্যের মহোৎসব।

হালিশহর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বার্তা বাজারকে বলেন, এমন একটি জনবহুল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের সামনে দোকান, তাও আবার অবৈধ! যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা হলে এর দায় কে নিবে? এর আগেও এসব চা দোকান থেকে আগুন লেগে প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বার্তা বাজারকে আরো বলেন, এবিষয়ে সংশ্লিষ্টদেরকে চিঠি পাঠিয়েও এসব অবৈধ দোকানঘর উচ্ছেদ করতে পারিনি। চিঠি দেয়ার প্রায় এক বছর হতে চলল। কিন্তু কি কারণে এসব দোকানঘর উচ্ছেদ হচ্ছে না তা সংশ্লিষ্টরাই ভাল জানেন।

এবিষয়ে ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের কাছে জানতে মুঠোফোনে কল করা হলে বার্তা বাজারের প্রশ্ন শোনার পরই তিনি বলেন, আমি মোবাইলে এত কথা বলিনা। আপনার কিছু জানার থাকলে আপনি বাসায় আসেন। আমি এখন অসুস্থ। আপনি বাসায় আসেন আপনাকে লিখিত দিচ্ছি যা যা লাগবে।

এবিষয়ে পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহেসান মুরাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বার্তা বাজারকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি খোঁজ নিচ্ছি। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রবিউল ইসলাম/বার্তাবাজার/হৃ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর