হলুদ চাষে কৃষকের মুখে হাসি, স্বপ্ন ঘরে তুলেছে কৃষক

এই তো ক’দিন পূর্বেই সিরাজগঞ্জে দিগন্তজোড়ো ফসলের মাঠ ঢেকে ছিলো হলুদ সরিষা ফুলে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের মাধ্যমে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন এ জেলার কৃষকেরা। উচ্চ ফলনশীল আগাম বারি-১৪ জাতের সরিষার চাষ করায় কৃষকের স্বপ্ন সত্যি হয়ে ধরা দেবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।

সিরাজগঞ্জে এবার রবি মৌসুমে সরিষার ব্যাপক চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলার মাঠে প্রায় শেষ হয়েছে সরিষা কাটা-মাড়াই। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার নয়টি উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়া দাম ভালো পাওয়ায় বেশ ফুরফুরে কৃষকরা।

আমন ধান কাটার পর এই অঞ্চলের কৃষকরা বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে থাকে। সরিষা বিক্রি করে যে টাকা পায় ওই টাকা দিয়ে আবার ইরি বোরো মৌসুমে ধান রোপণ করে তারা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আমন ধান ও বোরো চাষের মাঝামাঝি সময়ে সরিষার আবাদ করে থাকেন কৃষকরা। এছাড়াও জমি থেকে সরিষা ওঠার পর ওই জমিতে বোরোর আবাদও করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

জেলার শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের কামারপুর গ্রামের আব্দুল বারেক বার্তা বাজারকে জানান, আমি প্রতি বছর আমন ধান কাটার পর জমিতে সরিষা চাষ করি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। আমার সরিষা কাটাই-মাড়াই দু একদিনের মর্ধ্যে শেষ হবে। ফলন ভালো পেয়েছি এবং বাজারে দামও ভালো পাচ্ছি।

একই গ্রামের মো. বাবু সেখ বার্তা বাজারকে জানান, এক বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাত মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতিমণ ১ হাজার ৮’শ দরে সাত মণের দাম দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬০০ টাকা। আর বিঘায় খরচ বাদে লাভ হয় ১০ হাজার ১০০ টাকা। আর সরিষা চাষ করলে বোরো রোপণের সময় আলাদা ভাবে ওই জমিতে আর সার দিতে হয় না। সরিষা বিক্রি করে টাকাও পাওয়া যায় আবার তেলের চাহিদাও মেটাতে পারি।

রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রম্মগাছা ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের আফসার সেখ বার্তা বাজারকে জানান, বাড়তি ফসল হলেও এবার বাজারে এর দাম ভালো আছে। প্রতি বিঘায় এ বছর সরিষার ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ । বাজারে প্রতি মণ সরিষা ১৭’শ থেকে ১৮’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমরা খুব খুশি। এই টাকা দিয়ে বোরো রোপণ করতে পারছি।

রায়গঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বার্তা বাজারকে জানান, সরিষা মূলত একটি মসলা জাতীয় ফসল। অল্প সময়ের মধ্যে অধিক ফলন পেতে আমরা কৃষকদের প্রতিনিয়ত নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাছাড়া সরিষার চাষের পাশাপাশি মৌও চাষও করা যায়। এতে বাড়তি মুনাফা আসে কৃষকের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হানিফ বার্তা বাজারকে বলেন, কৃষকরা এই ফসলটাকে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে চাষাবাদ করে থাকে। আমরা প্রতি বছর সরিষা চাষের জন্য কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দিয়ে থাকি এবারও দিয়েছে। এ রবি মৌসুমে এ জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৬’শ ৮০ হেক্টর। আর অর্জিত হয়েছে ৪৯ হাজার ৫’শ ৫০ হেক্টর।

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৬’শ ৪০ হেক্টর জমির সরিষা কৃষক কর্তন করেছে। অথাৎ পুরো জেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে ৯৪ দশমিক ৬ শতাংশ। যার মর্ধ্যে কৃষক সরিষা মাড়াই করে ঘরে তুলেছে ৮০ শতাংশ। আশা করছি কৃষকরা বাজারে ভালো দামও পাবেন।

এম এ মালেক/বার্তাবাজার/হৃ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর