১৪ ম্যাচে ৫, ৩ ম্যাচে ১০, যেন ফকির থেকে আমির

কে জানত বিশ্বকাপের ঘোষিত স্কোয়াডে না থাকা ছেলেটা ফের চূড়ান্ত দলে ঠাই পাবেন?যা হোক জায়গা না হয় পেলেন কাকতালীয়ভাবে। এটা কে জানতে যে, সেই অবহেলিত ছেলেটাই বিশ্বকাপে ট্রাম্প কার্ড হবেন?দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক তিনি।চলতি বিশ্বকাপে মাত্র তিন ম্যাচ খেলে উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় তিনি এখন সবার শীর্ষে।বলছি, পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমিরের কথা।

ক্রিকেটপ্রেমীদের নিশ্চয় মনে আছে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালি লড়াইয়ের কথা। মাত্র ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভারতীয়দের কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন একাই, পাকিস্তান সেবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতেছিল প্রথমবারের মতো। কিন্তু ওই ম্যাচের পর থেকে আমির প্রায় ‘ফকির’—উইকেটখরার জন্য—বনে গিয়েছিলেন! শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে আমির ফিরলেন আমিরের মতোই। ৩ ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়া পাকিস্তানি পেসার এরই মধ্যে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

মাঝের এ সময়ে আমির যে খুব খারাপ বোলিং করেছিলেন তা নয়। এ সময়ে তার ইকোনমি রেট ছিল ৪.৫৮। কিন্তু আমিরকে যে লোকে শুধু কিপটে বোলিংয়ের জন্য চায় না, তার কাছে দলের মূল চাওয়া হচ্ছে উইকেট, সেখানেই হালে পানি পাচ্ছিলেন না। বিশ্বকাপে তার প্রথম ম্যাচের আগে ১৪টি ওয়ানডেতে উইকেটসংখ্যা ছিল ৫। আমিরের মতো বোলার, যাঁর কিনা নিয়মিতই উইকেট পাওয়ার কথা, দলের বোলিং বহরকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, তার এমন উইকেটখরা মনে ধরেনি নির্বাচকদের। তাই শুরুতে জায়গা পাননি বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলেই।

তবুও সাবেকদের চাওয়া ছিল, আমিরকে বিশ্বকাপে দরকার। দলের পেস অ্যাটাকের নেতৃত্ব কে দেবেন, সে প্রশ্ন থেকেই আমিরকে দলে চাচ্ছিলেন সাবেকরা। আর ইংলিশ কন্ডিশনে আমিরের কার্যকারিতা নিয়েও বিশ্বাস ছিল তাদের। শেষে সবদিক বিবেচনা করে পাকিস্তানের নির্বাচকেরা জুনায়েদ খানের কপাল পুড়িয়ে আমিরকে দলে নিলেন। তা নিয়ে টুইটারে জুনায়েদ খানের অভিনব প্রতিবাদ আমিরের ওপর কিছুটা চাপও তৈরি করেছিল বৈকি!

সব চাপকে পেছনে ঠেলে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই পেয়ে যান ৩ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে দাঁড়াতে না পারলেও আমির কিন্তু নজর কেড়েছিলেন তার নিয়ন্ত্রিত লেংথ এবং ভয় ধরানো গতি দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে যা কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছিল, তার পুরোটাই আমিরের সুবাদে। কিন্তু সমালোচকেরা পিছু ছাড়লেন কোথায়! পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক তার গতি নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। আমিরের গতি এবং সুইংয়ের স্বল্পতা মনে ধরেনি মিসবাহর।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের অবিশ্বাস্য জয়ের দিনে আমির কিছুটা খরুচে বোলিং করেছেন। ওভারপ্রতি গড়ে ৬.৭ রান করে দিলেও বাটলার আর আর্চারের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দুটি নিয়ে পুষিয়ে দেন। আর কাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করলেন একদিনের ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং! ১০ ওভারে ৫ উইকেট তুলে নিলেন মাত্র ৩০ রান খরচায়। গত চার বছরের মধ্যে ম্যাচে বোলিংয়ের কোটা পূর্ণ করা কোনো পাকিস্তান পেসারের এটিই সেরা বোলিং পরিসংখ্যান। পুরো ১০ ওভার বোলিং করেও আমির মাত্র একটি বাউন্ডারি হজম করেছেন। অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের শেষ ১০ ওভারে তিনটি ওভার করে ১১ রান দিয়ে ৪টি উইকেট তুলে নেন। তিন শ পেরোলেও তাই আমিরের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সুবাদেই সংগ্রহটাকে বেশি উঁচুতে নিয়ে যেতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।তবে আমিরের এমন বোলিং পারফরম্যান্সের দিনে ব্যাট হাতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা।ফলে ৪১ রানে হেরে যায় সরফরাজের দল।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর