দেয়াঙ পাহাড়ের বেতগাছ বিলুপ্তির পথে

দখল-দূষণ ও নির্বিচার নিধনের ফলে দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বন ও বনভূমি ধ্বংসের কারণে বিরল ও বিপন্ন বহু প্রজাতির ঔষধি, ফলদ ও বনজ গাছপালা এখন বিলুপ্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

একসময়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত দেয়াং পাহাড়ের ভেতরে সবুজে সারিবদ্ধ সমারোহ পাহাড় আর পাহাড়। এসব পাহাড়ের আঙ্গিনার গড়ে উঠেছে পরিবেশ বান্ধব বিশাল এক শিল্পের ভান্ডার। এ পাহাড়ে লতাপাতা আর সবুজ শ্যামলে ভরপুর। পাহাড়ে ঝোঁপে ঝাড়ে অনেক দেশী গাছগাছালি পাওয়া যেত কিন্তু এখন অনেক গাছগাছালি গুলোও বিলুপ্তির পথে। এরমধ্যে রয়েছে অন্যতম বেতগাছ। এখন আর আগের মতো বেত গাছ দেখা যায় না কোন পাহাড়ে।

পাহাড়ে এক বাস্তব চিত্র গড়ে তুলেছে কোরিয়ান ইপিজেড। এসব পাহাড় হয়ে উঠেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে। আর কেউ পরিদর্শনে এলে বিভিন্ন মনোরম দৃশ্য দেখলেও খুব একটা দেখা যায় না বেত গাছ। চারদিকে সবুজের প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়নাভিরাম সড়ক, ফলমূলের বাগান। আর এরই মাঝে গড়ে উঠেছে কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রিজ। কাঁটাযুক্ত বেত গাছ লতার মতো হলেও এটি নরম প্রকৃতির নয়। ফলকে বেত ফল বা বেতুন বলে। আঙগুরের মতো থোকা থোকা ফল চৈত্র ও বৈশাখ মাসে পেকে থাকে। দুষ্ট ছেলেমেয়ের দল অনেক কষ্ট শিকার করে এসব বেত ফল সংগ্রহ করে লবণ-মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে তা খুব মজা করে খেতো।

শুকনো বেত দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পের কদর অনেক বেশি এবং এ গুলা অনেক পরিবেশবান্ধব। বেত দিয়ে তৈরি হস্তশিল্প গুলো হচ্ছে- চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারী, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোলা, টোপা, চাঁচ, ধামা, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা এবং ফুলদানি তৈরীসহ নানা কাজে বেতের অনেক কদর রয়েছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যাও কমিয়ে ফেলেছে।

সাবাড় করে দিয়েছে পাহাড় বা বাড়ির আশপাশের ক্ষুদ্র প্রকৃতির বন। তাই গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান বেত। যাকে গ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় বেতমুড়া বলা হতো। অথচ আজ কয়েক গ্রাম হাঁটলেও একটি বেতমুড়া বা বেতঝাড় দেখতে পাওয়া যায় না। বেত বনে ছিলো ডাহুক পাখির বাস। সকালে দুপুরে রাতে ডাহুক আপন মনে ডেকে যেত মন মাতানো সুরে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বেত ফল কী তা খুঁজতে গাছের বিশ^কোষ চষে বেড়াতে হবে তাদের।

স্থানীয় আবদুর রহমান (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ বার্তা বাজারকে বলেন, এসব পাহাড়ে এক সময় অনেক গাছপালা ছিলো। ছিলো বেত গাছও। বর্তমানে কেইপিজেডে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ হওয়ার পর হারিয়ে গেছে পাহাড় ও নানা প্রজাতির গাছপালা। এসব পাহাড়ে রয়েছে নান স্মৃতি।

তিনি বার্তা বাজারকে আরো বলেন, বেতগাছের বেতফল আমাদের ছোটবেলার এক প্রিয় ফল ছিলো। আমরা ছোট বেলায় একে বলতাম, বেতইন ফল, ফল পরিপক্ব হলেই বেত ঝাড়ে হানা দিতাম সাবধানে কাঁটার ভয়ে তার পড়েও কাটা পায়ে ও জামাকাপড়ে বেতের কাঁটা যেত বিঁধে। ফলের বাইরের খোলস ফেলে যখন রসাল অংশটা হাতে আসতো, তখন সে আনন্দ গ্রাম বাংলার কিশোর ও কিশোরীরা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতো। বেতুনফল এনে লবণ ও মরিচ দিয়ে ভর্তা করিয়ে মজা করে খেতাম। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের অনেকেই জানে না বেতফল কি?

সুমন শাহ/বার্তাবাজার/হৃ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর