সেই ড্রাইভার ও হেলপারের ফাঁসি চান সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী

নিউজ ডেস্কঃ ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে গত ৯ জুন রবিবার নিজ কর্মস্থল ঢাকায় ফিরছিলেন সালাহ উদ্দিন। যাবার পথে আলম এশিয়া বাসের হেলপারের ধাক্কায় বাসের চাকায় পৃষ্ট হয়ে মারা যান সালাউদ্দিন (৪৫)।

জানা যায়, ঢাকা থেকে স্ত্রী পারুল আক্তারকে নিয়ে ঈদু ফিতরের ছুটিতে শ্বশুড় বাড়িতে গিয়ে ছিলেন। পারুল আক্তারের বাড়ি ফুলপুর উপজেলার খরিয়া নদী পারের শিলপুর গ্রামে। পারুলের বাবার নাম মৃত আব্দুল জব্বার। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে পরিবারের সাথে আনন্দ উপভোগ করতেই এ আসা। অন্যদিকে নিহত সালাহ উদ্দিন ঢাকার আলু বাজারের মৃত শাহান উদ্দিনের পুত্র। তিন ভাই এর মাঝে সালাউদ্দিন ছিলেন সবার বড়। প্রায় ১৮ বছর আগে বিয়ে করেন পারুল আক্তারকে। সালাহ উদ্দিন নিজেও একজন বাস চালক ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকায় একটি কারখানার গাড়ি চালক হিসাবে চাকরি করতেন। কয়েক মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসায় সুস্থ হলেও তার হাতের এক পাশ অবস ছিল। ঈদে আনন্দ উপভোগ করলেও কে জানতো তাঁর এ আনন্দ সারা জীবনের পরিবারের জন্য কান্না হয়ে যাবে। মানুষ এত নির্মম হতে পারে তা নিজের চোখে দেখলেন নিহতের স্ত্রী পারুল আক্তার।

আলম এশিয়ার চালকের নির্দেশেই হেলপার আনোয়ার মাত্র ৫০ টাকার জন্য ঢাকার বাগের বাজার সংলগ্ন রাস্তার পাশে সালাউদ্দিন আহম্মেদকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে তাঁর ওপর দিয়ে বাস চালায় ড্রাইভার। এতে বাসের চাকায় পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। ঘটনা এখানেই শেষ নয় সালাউদ্দিনের স্ত্রী পারুলকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। অনেক কাকুতি মিনতির পর দেড় মাইল দূরে পারুলকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিলে অল্পের জন্য রক্ষা পায় পারুল।

নিহতের ছোট ভাই মামলার বাদি জামাল উদ্দিন সে দিনের লৌমহর্ষক হত্যার বিবরণে বলেন, ভাই আমাকে মোবাইলে হেলপার ও ড্রাইবারের সাথে ঝগড়ার কথা বললে আমি বাগের বাজার এলাকায় দাঁড়াই। ভাইকে যখন হত্যা করা হয় আমি বাসের সামনে গেলে আমাকেও চাপা দিতে চেষ্টা করে। আমি তখন দ্রত সটকে পড়ি এবং কোন রকমভাবে বেঁচে যাই।

আজ বুধবার সরেজমিনে নিহত সালাউদ্দিনের বাড়ি ফুলপুরের শিলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি টিনসেট বাড়িতে বিলাপ করছেন স্ত্রী পারুল আক্তার। স্বামীর জন্য বারবার মুর্চা যাচ্ছেন তিনি। কোন সান্তনাই থামছে না তাঁর কান্না। স্বামী হত্যাকারীদের বিচার চান তিনি। এ সময় তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বামী হত্যাকারী বাস চালক ও হেলপারের ফাঁসি চাই। অন্য কিছু চাই না, আমি শুধু এদের কঠিন শাস্থি চাই।

এলাকার অনেকেই জানান, নিহত সালাউদ্দিন একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন। বাড়িতে আসলে সে সকল মানুষের খোঁজ খবর নিতেন। তাছাড়া স্বামী স্ত্রীর মাঝে এদের ভালোবাসা ও ছিল গভীর। সালাউদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকে স্ত্রী পারুল আক্তারের মুখে কোন খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। বারবার স্বামীর জন্য কাঁদছেন।

জানা যায়, চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। ভারতে পালিয়ে যেতে চাইলে ধোবাউড়া থেকে হালুয়াঘাট উপজেলার লতিফপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে চালক রোকন উদ্দিনকে ও শেরপুর থেকে হেলপারকে আটক করে পুলিশ।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর