সাতক্ষীরায় দুলাভাইয়ের জামিন, শ্যালক জেলে

শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: প্রকাশ্যে দিবালোকে এক কলেজ ছাত্রীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে ফিল্মি স্টাইলে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে দায়েরকৃত দ্রুত বিচার আইনের মামলায় আসামী ধুলিহর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের তহশিলদার মোখলেছুর রহমানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও তার শ্যালক জিয়াউল হককে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার সাতক্ষীরা বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক ইয়াসমিন নাহার এ আদেশ দেন।

আসামী মোখলেছুর রহমানের বাবার নাম আব্দুল কাদের ও তার শ্যালক জিয়াউল হকের বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম। তারা বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের পিটিআই ‘স’ মিলের পাশের বাসিন্দা।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর পিটিআই ‘স’ মিলের পূর্বে পাশে আব্দুর রহিম ও আব্দুস সাত্তারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে জমি কিনে মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল অহিদ ৩০ বছর আগে থেকে বসবাস করে আসছিলেন। ২০০৮ সালে এল্লারচর সরকারি মৎস্য খামারে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এরপর তার বসত বাড়ির উপর নজর পড়ে তহশিলদার মোখলেছুরের। ২০১৫ সালে তিনি ওই বাড়িসহ ১০ শতক জমি জনৈকা ফতেমা রহমানের কাছ থেকে কিনছেন বলে বিভিন্ন স্থানে প্রচার দিয়ে আসছিলেন। ওই বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তিনি আব্দুল অহিদের স্ত্রী নাজিরা বেগম ও তার দু’ মেয়েকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এরই জের ধরে গত বছরের ২৫ অক্টোবর সকাল আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে তহশীলদার মোখলেছুর রহমান ও তার শ্যালক সন্যাসী জিয়াউল হকের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন ভাড়াটিয়া সস্ত্রাসী কুড়াল, দা, গাইতি, বলচা, লোহার রড, শাবল নিয়ে বিধবা নাজিরার বাড়িতে হামলা করে। ভাংচুর ও লুটপাট বাধা দেওয়ায় তার বড় মেয়ে কলেজ পড়ূয়া সানজিদা অহিদ ডালিয়াকে বাড়ির পিছনে সুপারি গাছের সাথে বেঁধে রেখে মারপিট করা হয়। এসময় হামলাকারিরা তাদের বাড়িতে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র ভাংচুর, টাকা ও সোনার গহনা লুটপাট করে ত্রাস সৃষ্টি করে। ডালিয়ার ডাক চিৎকার স্থানীয়রা ছুটে এলে রাতের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে না গেলে তাদেরকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায় হামলাকারিরা। এ ঘটনায় নাজিরা বেগম বাদি হয়ে গত বছরের পহেলা নভেম্বর তহশিলদার মোখলেছুর রহমান ও তার শ্যালক জিয়াউল হকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল (৩০১/১৮) নং মামলা করেন। বিচারক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান পুরাতন সাতক্ষীরা পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মনির হোসেনকে মামলার তদন্তে দায়িত্ব দেন।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে তদন্ত কারি কর্মকতা বাদির অভিযোগের কোন সত্যতা নেই মর্মে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

মামলার বিবারনে আরো জানা যায়, উপপরিদর্শক মনির হোসেনের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি আদালতে না রাজির আবেদন দাখিল করেন বাদি। পরবর্তীতে ভাঙচুরের ছবি, ডালিয়াকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও চিত্র দেখে বিচারক হুমায়ুন কবীর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি নিজেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত সম্পন করে ভাঙচুর, লুটপাট ও ডালিয়াকে গাছ বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা সত্য বলে আদালতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন শুনানী শেষে গত ১৫ মে বিচারক আসামী মোখলেছুর রহমান ও জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দেন। সমন পেয়ে আসামীরা বুধবার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক ইয়াসমিন নাহার জিয়াউল হককে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সাথে মোখলেছুরকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা জমা দেওয়ার শর্তে জামিন দেন।

বাদি পক্ষের আইনজীবী সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. জামালউদ্দিন বলেন, কাঠগোড়ায় থাকাকালিন আসামী মোখলেছুর তার আইনজীবী অ্যাড. সায়েদ এর মাধ্যমে জরিমানার পাঁচ হাজার টাকা জমা দিয়ে মুক্তি পান। আসামী জিয়াউল হককে বিকাল সাড় ৫টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা কারাগার পাঠানো হয়েছে। মামলাটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল (টিআর-১৪/১৯) পাঠানো হয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর