‘রাজনীতি করি জনগনের জন্য, নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়’: সীমা

‘রাজনীতি করি জনগনের জন্য, নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়’বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের উদীয়মান নেত্রী শাম্মী আক্তার সীমা।

নিজ এলাকায় দিন দিন জনগণের নিকট খুবই গ্রহনযোগ্য একজন হিসেবে নিজেকে বিকশিত করে চলছেন। তিনি রাজধানীর রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের মহিলা আওয়ামী লীগের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক।

যদিও তার রাজনৈতিক পথচলাটা ছিল খুবই অমসৃণ। কিন্তু সকল প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজ দায়িত্ব-কর্তব্যে উত্তরোত্তর সফলতা অর্জন করেই চলছেন।

নিজের নেতৃত্বকে সিক্ত করেছেন জণসাধারণের ভালবাসায় যার প্রমাণ পাওয়া যায় গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এতে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে বিপুল ভোট পেয়েছিলেন তিনি এবং নাম মাত্র ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন দল থেকে মনোনীত ও নির্বাচিত প্রার্থীর বিপক্ষে। তারপরও দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে অদ্যাবধি সামনের সারিতেই পাওয়া যায় জনপ্রিয় এই নেত্রীকে।

রাজনীতিতে প্রবেশের পর নিন্দুকের কতিপয় মিথ্যাচারে জর্জরিত হতে হয়েছিল শাম্মী আক্তার সীমাকে। সাম্প্রতিক কালে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা তথাকথিত কিছু অনলাইন গণমাধ্যমের দ্বারা তাকে হেয় করতে তৎপরশীল তারই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ একাধিক কুচক্রি মহল। ফেইক ফেইসবুক আইডি ও ফেইক ইউটিউব কন্টেন্ট বানিয়ে অনলাইনে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে তার চরিত্র হননের অপচেষ্টা করতে থাকে মহলটি। রাজনৈতিকভাবে তাকে ঘায়েল করার জন্য অন্যায়ভাবে বেছে নেয় নেতিবাচক অনলাইন প্রোপাগান্ডার মত হাতিয়ার। এমনকি সীমার নারী চরিত্রকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছিল বারবার।

মাদক ও ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ততা দেখিয়ে মিথ্যা অপবাদ রটানো হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। সেই জের ধরে তাকে বিভিন্ন সময় পারিবারিক ও সামাজিক বিড়ম্বনাতেও পড়তে হয়েছে। আসলে আমাদের দেশের রাজনীতি বোধহয় এমনই, যেখানে বিরোধী দল তো আছেই একই সাথে আছে নিজ দলের ভিতরে চলমান একরকম কঠিনতম অগ্নিপরীক্ষা। এসব ষড়যন্ত্রের বিষয় উল্লেখ করে ইতোমধ্যেই ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সীমা। তিনি দাবি করেন তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মিথ্যা, মনগড়া, কাল্পনিক গল্প লিখে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে একটি বিরোধীমহল। তার মতে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা ও দলীয় পদে প্রার্থী হওয়ার কারণে এসব ষড়যন্ত্র। এর সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

ফেলে আসা সেইসব বিব্রতকর মুহুর্তগুলো সম্পর্কে উদীয়মান এই নেত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন “ফেলে তো আসতে পারি নাই ভাই। বরং এখনো সেই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আমাকে ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে আর আমি বিশ্বাস করি যে সত্যের জয় হবেই, কষ্ট করে শুধু ধৈর্য্য ধারণ করে চলছি এই আর কি। তবে একজন নারী হিসেবে এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়া যে কতটা বিব্রতকর সেটা শুধুমাত্র একজন নারীই বোঝে, আর বোঝেন একজন মা। কারণ দিনশেষে আমিও একজন মা যাকে নিজ পরিবার আগলে রাখতে হয়। সবকিছুর উর্দ্ধে বিশ্বাস করি উপরওয়ালা একজন আছেন, যিনি ন্যায়বিচার করেন। ধৈর্য্য ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের দলনেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমার জন্য উৎকৃষ্ট অনুপ্রেরণা। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে। রাজনীতি করি দেশের তৃণমূল মানুষের জন্য, সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ও গরীবের অধিকার আদায়ের জন্য। মোটকথা রাজনীতি করি জনগনের জন্য, কোন ধান্দা-চান্দার রাজনীতি আমি সীমা করি না।”

ব্যক্তিজীবনে একজন শিক্ষক পিতার সন্তান শাম্মী আক্তার সীমা। তার বিরুদ্ধে রটানো অপবাদসমূহ ঘেটে দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, মূলত তার রাজনৈতিক জীবনই তার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। একবার তো তাকে মিথ্যা ডাকাতি মামলায় হাজতবাসও করতে হয়েছে। সেসময় পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন কোন সহযোগীতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি জানান, ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই রাত পৌনে ১১টায় রামপুরার উলনে তার ২৭২ নম্বর বাসায় অভিযান চালায় ডিবির ডেমরা জোনাল টিমের কিছু সদস্য। তারা বিভিন্ন রুম তল্লাশি করে। তখন তিনি চরম হয়রানির শিকার হন বলে উল্লেখ করেন। সীমা জানান, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করানোর জন্য ব্যাংক থেকে কিছু টাকা উত্তোলন করে সেই টাকা তার স্বামী তাকে দিয়েছিলেন। এজন্য ঘটনার দিন দুপুরে বিআরটিএ’তেও গিয়েছিলেন সীমা। সেখানে ৭৪ হাজার টাকা জমা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স না থাকায় তা জমা দেয়া যায়নি। সেই টাকাটাই তার ব্যাগে ছিলো। এ সংক্রান্ত প্রমাণ থাকার পরও সেদিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় তাও আবার কোন মহিলা পুলিশ ছাড়াই -এমনটাই দাবি করেন সীমা।

বাসায় ব্যাগে পাওয়া টাকা উদ্ধার দেখিয়ে মামলায় আসামি করা হয় তাকে। নারায়নগঞ্জের একটি ছিনতাই মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে সীমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যদিও পরে সেই বছরেরই ৩১ আগষ্ট আদালত থেকে জামিন পান নারী নেত্রী শাম্মী আক্তার সীমা। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও কিছু কাল্পনিক মিথ্যা রটনা রটায় কতিপয় অনলাইন গণমাধ্যম। আর এ ভাবেই পুরোনো কাসুন্দি বারবার ঘাটালে আর বোঝার বাকি থাকেনা যে, জোড়ালো ষড়যন্ত্র চলছে সীমার বিরুদ্ধে। যাই হোক এবার কিন্তু আইসিটি আইনে রামপুরা থানায় মামলা করেন সীমা। ফলে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অভিযান পরিচালিত হয় এবং গ্রেপ্তার হয় একজন। বিষয়টি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রকাশ করেছেন ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এডিসি নাজমুল ইসলাম। তিনি লিখেছেন, শাম্মী আক্তার সীমা, তিনি রামপুরা এলাকায় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে ঘায়েল করার জন্য বেছে নেয় অন্যায়ভাবে নেতিবাচক প্রোপাগান্ডা। ফেইক ফেইসবুক আইডি ও ফেইক ইউটিউব কন্টেন্ট বানিয়ে তার নামে মিথ্যাচার করতে থাকে এই পক্ষ। অবশেষে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জাভেদ শোয়েব নামে এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডাকারীর এক সহযোগীকে। তার বক্তব্যমতে মূল হোতাকে সনাক্ত করা গেছে। সে আপাতত গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ শীঘ্রই তাকে গ্রেপ্তার করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সীমার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে অতিসম্প্রতি রাজধানীর রামপুরা চষে বেড়ায় এই প্রতিবেদক। এতে দেখা যায় সীমা তার এলাকার জনগণের কাছে ব্যপক জনপ্রিয়। এই রমজান মাসেও তিনি নিজ এলাকার তৃণমূল জণগনের সাথে অগ্রিম ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে তাদের মাঝে বিভিন্ন ঈদ সামগ্রী তথা শাড়ি-কাপড়, সেমাই-দুধ-চিনি প্রভৃতি বিতরণ করেছেন। এলাকায় নিজ কর্মকান্ড সম্পর্কে সীমার ভাষ্য, দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা-১১ আসনের অন্তর্ভুক্ত ডিএনসিসি’র ২২ নং ওয়ার্ডটি অবহেলীত তাই তিনি এর সার্বিক উন্নয়েনর প্রতি মনোযোগী। যদিও তিনি কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় ৩৬, ২২, ২৩ ও ৯৮ নং ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করেছিলেন।

সীমা সম্পর্কে জানতে চাইলে রামপুরার এলাকাবাসীগণ জানান, সীমা আপার মতন নেত্রী আমাদের জন্য একরকম আশির্বাদ। সবসময় তিনি নিজ সাধ্যমত আমাদের পাশে থাকেন। এসময় তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রকারীদের প্রতিও হুশিয়ারী দেন রামপুরার এই জনসাধারণ।

ডিএনসিসি’র ২২ ও ৯৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ লিয়াকত আলীর কাছে শাম্মী আক্তার সীমা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সীমা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। হয়তো এরই মধ্যে তাকে রাজনীতির তিক্ত স্বাদও গ্রহন করতে হয়েছে এবং তাকে কতিপয় তথাকথিত গণমাধ্যম কর্তৃক বলির পাঠা হিসেবেও টার্গেট করা হয়েছিল। তবে এটা সত্য যে কেউ যখন উন্নতির দিকে ধাবিত হয় তখন তার পিছনে কিছু লোক লেগে থাকবেই। সকল বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই হবে আর সীমার মধ্যে সেই গুণ আছে বলে আমি মনে করি। আমি তাকে অসম্ভব বুদ্ধিমতি হিসেবেই জানি। যে যাই বলুক না কেন এলাকায় বিদ্যমান তার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তাই তার সৎচরিত্রের প্রমাণ।

রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাদল জানিয়েছেন, আমার জানা মতে সীমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা অপবাদসমূহের কোন সত্যতা নেই। সে মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার টার্গেটে পরিণত হয়েছে। তবে সকল বাধা অতিক্রম করে ভবিষ্যতে সে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও ভাল করবে বলে সকলেই প্রত্যাশা করে।

রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মনির বলেন, সীমা আপা অসম্ভব দায়িত্বশীল একজন নেত্রী। আসলে দলের ভিতরের খাই খাই রাজনীতির কারণে তিনি এক ষড়ন্ত্রের শিকার মাত্র। আমরা কোনদিন দেখিনি বা শুনিনি যে, তার দ্বারা কোন অপকর্ম সম্পন্ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমাদের রামপুরা কিংবা সাবেক সবুজবাগ থানায় কোন মামলা নেই, এমনকি কখনও কোন জিডি-ও দায়ের করা হয় নাই।

রামপুরার ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শওকত বলেন, মূলত ২০১৪ সালের দলীয় সম্মেলন থেকেই আমি সীমাকে জানি। তার বিরুদ্ধে যে সকল অপবাদ দেওয়া হয়েছে সেগুলো এই নারী নেত্রী কর্তৃক সংঘটিত হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। এটা সমস্ত নারী জাতির প্রতি বিষোদগার করার সমতুল্য এক অপরাধ বলে আমি মনে করি।

ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের নিকট সীমা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানায় সীমার দেওয়া অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের আইনি কার্যক্রম চলমান। ইতোমধ্যেই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সূত্র-দৈনিক তৃতীয় মাত্রা

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর