ডিএসসিএসসি গ্র্যাজুয়েটগণ ২০৪১ সালের সৈনিকে কাজ করবেন: প্রধানমন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি)-এর গ্র্যাজুয়েটগণ সেই ২০৪১-এর উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ডিএসসিএসসি’র কোর্স সমাপনী (২০২০-২১) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা গ্রাজুয়েশন লাভ করেছেন তারাই আমার সেই ২০৪১ এর উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবেন। কাজেই, দেশকে যেন আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং দেশের ভাবমূর্তি যাতে উজ্জ্বল হয় সেদিকেই সকলকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, এই দেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন করেছি এবং এই দেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’

স্বাধীনতার পর জাতির পিতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনকালে দেশকে যুদ্ধবিধ্বস্থ অবস্থা থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যাওয়ার উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আরো অনেক দূর যাওয়া। আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টায় আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার সক্ষমতা অর্জন করেছি।’

যে কারণে তাঁর সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এবং সমগ্র গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের উন্নয়নে শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ নামে এক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে, মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিএসসি’র কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্টকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদপত্র প্রদানের অনুমতি প্রদান করেন শেখ হাসিনা।
এই কোর্সে ১৬টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ৪৩ জন বিদেশী কর্মকর্তা এবং ১০ নারী কর্মকর্তাসহ ২২৫ জন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে এদিন পিএসসি অর্জন করেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ১ হাজার ২০৮ জন অফিসার এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সদ্য গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আজ আপনাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। এ দিনটির জন্য দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস আপনাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করতে হয়েছে। আপনারা সমর বিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।’ তিনি বলেন, এটা মনে রাখতে হবে যে, পৃথিবীটা এখন গ্লোবাল ভিলেজ। কোন দেশ একক ভাবে চলতে পারে না। সবাইকে নিয়েই চলতে হয়। এজন্য আমাদের জ্ঞানের পরিধিটাও অনেক বিস্তৃত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের কারণে সাম্প্রতিকালের বিশেষ স্থবিরতার প্রসঙ্গ টেনে এই সময়ে কোর্স সম্পন্ন করায় শিক্ষার্থী এবং ডিএসসিসি’র কমান্ড্যান্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, নানা প্রতিকুলতা ও ঝুঁকিসহ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বছর ২০২১ এ পদার্পণ করেছি। করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যখন স্থিমিত, তখন দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমরা দেশের অর্থনীতিসহ সকল উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই ধারাবাহিকতায়, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ নিজস্ব উদ্ভাবিত উপায়ে অত্যন্ত অল্প সময়ে ও কম খরচে নিরাপদ ই-লার্নিং সল্যুশন স্থাপন করে নিজ সার্ভার এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপদ অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ফলে, একদিনের জন্যেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়নি। সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের প্রাচীনতম ট্রাই সার্ভিস প্রতিষ্ঠান।

জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লার তৎকালীন সামরিক একাডেমিতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি একাডেমি সৃষ্টি করবো, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমি দেখতে আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাস্তবে এটা আমরা করতে পেরেছি। আজকে আমাদের এই একাডেমি সারাবিশে^র কাছে বিস্ময় এবং সকলে এটা অনুভব করেন এবং এর প্রশংসা করেন।

বঙ্গবন্ধুর করে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতির অনুশীলনে আন্তর্জাতিক বিশেষ বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান, রোহিঙ্গা সমস্যা, দেশে নারীর ক্ষমতায়নসহ অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখায় তাঁর সরকারের ভূমিকাও ভাষণে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মুলমন্ত্র ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরীতা নয়’-এ নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সু-স¤পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে সর্বদা সচেষ্ট। আজ বাংলাদেশের সঙ্গে সকল দেশের একটা সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। মিয়ানমার থেকে প্রায় ১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদেরকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি।

ছবি-সংগৃহীত

তিনি বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের আশ্রয় দান এবং নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা এর সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। কেননা, এজন্য আমরা কোন দেশের সাথে কোন দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এজন্য বন্ধুত্বসুলভ একটা মনভাব নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে, যারা অন্যায় করেছেন নিশ্চই আমরা সেটা বলবো এবং তাদের নাগরিকদের তারা ফেরত নেবে সেটাই আমরা চাই।’

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নির্যাতিত জনগণকে মানবিককারণে আশ্রয় দেয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ বিশেষ প্রশংসা ও সাধুবাদ পাচ্ছে, বলেন তিনি।
নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জনগণের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনসহ সকল ক্ষেত্রে তাঁর সরকার ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় রেখে চলছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের এ যুগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছি।

যে কারণে চলমান কোভিড-১৯ এর কারণে গৃহে আটকা পড়ে থাকলেও তিনি এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরেছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তাদের মাঝে ১ জন বিদেশী নারী অফিসারসহ মোট ১০ জন নারী অফিসার রয়েছে। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী অফিসারের অংশগ্রহণ, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, গ্রাজুয়েট অফিসারদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন গঠনমূলক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমানভাবে অংশ নিয়ে এই কোর্সটিকে আরও সাফল্যমণ্ডিত করেছেন। সকলকে এজন্য আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, নতুন জনবল অনুমোদনের পাশাপাশি স্টাফ কলেজের বেশ কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়াও, এরকম আরও নির্মাণ ও উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে এই কলেজের প্রশিক্ষণ কলেবরকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করবে, বলেন তিনি।

তাঁর সরকারের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের পাশাপাশি আগামী বছরের ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার বাংলাদেশের একটি মানুষও আর গৃহহারা, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষেরই একটা ঠিকানা হবে এবং প্রতি ঘরেই বিদ্যুতের আলো জলবে। শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সে সময় প্রতিটি মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবার পাশাপাশি তারা উন্নত জীবনের ও অধিকারী হবেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গ্রামই এক একটি শহরে রূপান্তরিত হবে। সেভাবেই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, এটা কোন কঠিন কাজ নয়। এটা করা সম্ভব। হয়তো চিরদিন থাকবো না কিন্তু পরিকল্পনাটা দিয়ে যাচ্ছি। সূত্র: বাসস।

বার্তাবাজার/ই.এইচ.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর