মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে সাতক্ষীরার আদি যমুনা নদী

যার কুল কুল ধ্বনিতে মুখরিত ছিলো সাতক্ষীরার দক্ষিণ জনপদ। তবে অতি দু:খের বিষয় সেই আদি যমুনা নদীর এখন আর কোন স্রোত নেই, কোন কুল কুল ধ্বনিও নেই। বরং আছে হাহাকার আর অতীতের ধূসর স্মৃতি।

ঐতিহ্যের এই আদি যমুনা নদীতে একসময়ে চলতো বড় বড় জাহাজ, পালতোলা নৌকা, নদীকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করতেন সাধারণ মানুষ। কিছুকাল আগেও এই নদীতে ছিল দু’কুল ছাপানো ঢেউ। আজ সেসব কথা যেন শুধুই স্মৃতি। পলি জমে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় ভূমিদস্যু কর্তৃক নদীর দু’পাশ ভরাট করায় এর প্রশাস্ততা কমে যাচ্ছে। যমুনা নদীতে নেট-পাটা ব্যবহার করে মাছ ধরার কারণে নদীর পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে।

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী জানান, বর্ষাকালে পানির মৃদ প্রবাহ থাকলেও শুকনো মৌসুমে বহুস্থানে পানি থাকে না। কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর, পিরোজপুর, দুদলি, রায়পুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর মাঝে স্থানীয় কিছু কিছু ব্যক্তি নেট-পাটা ব্যবহার করছে। যার কারণে নদীর পানি প্রবাহের ব্যাপক বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। নদীর পাশে প্রভাবশালীরা বিভিন্ন কারখানা নির্মাণ করেছে । এসব কারখানার বজ্র নদীতে ফেলছে ফলে নদী ভরাট হওয়াসহ পানি দূষিত হচ্ছে। দুঃখের বিষয় বর্তমানে কালিগঞ্জের সীমান্ত পেরিয়ে শ্যামনগর উপজেলার প্রবেশের পর যমুনার নদী আর দৃশ্যমান নয়। নদী খেকো রাক্ষসরা সবটাই গিলে খেয়েছে। নদীর উপর ইট ভাটা, রাস্তা, বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিমার্ণ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে সুন্দরবন হয়ে শ্যামনগর-কালিগঞ্জ স্পর্শ করে ইছামতি-কালিন্দীর সংযোগ পর্যন্ত আদি বিস্তৃত যমুনা নদী। ৩২ কিলোমিটার দৈঘ্যের এ নদীর সাথে ৫০টিরও বেশি বিল ও খালের সংযোগ ছিলো। এই নদীর একসময়ে ভরা যৌবন ছিলো। এক কালের প্রমত্তা যমুনা নদী নাব্যতা হারিয়ে জবর দখলের কারণে এই নদী নাব্যতা হারিয়েছে। নদীর দু’পাশে প্রভাবশালীরা দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে যা নিন্দনীয়।

যমুনা বাঁচাও আন্দোলনের সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাফরুল্লাহ ইব্রাহিম বলেন, আদি যমুনা নদী এখন প্রায় মরে গেছে। এইভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে নদীর আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, এই নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষকরা তাদের ফসলের জমিতে সেচ দিতো। জেলেরা নদীতে জাল পেতে মাছ ধরে সেই মাছ বাজারে বিক্রি জিবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে কতিপয় স্বার্থানেশী ভূমিদস্যু নদী দখলের উৎসবে মেতে উঠেছে। জনগুরুত্ব পূর্ণ এই নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এর ফলে এই অঞ্চলের মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখিন হলেও সংশ্লিষ্ট্ কর্তৃপক্ষ রয়েছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

এমনতাবস্থায় অতিদ্রুত যমুনা নদীর পানি প্রবাহ সৃষ্টির জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

শেখ শাওন/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর