যুক্তরাজ্য ফেরত আক্রান্তদের করোনার নতুন ধরন যাচাই করা হবে

যুক্তরাজ্য থেকে আসা যে যাত্রীদের শরীরে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন রয়েছেন কিনা, সেটি পরীক্ষা করে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা।

এজন্য ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের একটি গবেষক দল সিলেটে পৌঁছেছে।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”গতকাল এই যাত্রীদের পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আইইডিসিআরের সঙ্গে কথা বলেছি। এর মধ্যেই আইইডিসিআর সাত জনের একটি টিম পাঠিয়ে দিয়েছে।”

”তারা চার পাঁচদিন থাকবে। তাদের রোগের ধরন নিয়ে তারা পরীক্ষানিরীক্ষা করবেন।”

কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের যে নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়েছে, এই যাত্রীদের ভেতর সেটা রয়েছে কিনা, তাও পরীক্ষা করে দেখবেন আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা। এই পুরো সময়ে যুক্তরাজ্য ফেরত এই যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া ভাইরাসের ধরনটি অন্তত ৭০ শতাংশ বেশি হারে বিস্তার ঘটাতে পারে। বেশ কয়েকটি দেশে দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি।

ধারণা করা হয় যে, করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনটি আগেরটির তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে সেটি আগের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।

ডা. মণ্ডল জানান, এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা করার জন্য আবার নমুনা পাঠানো হয়েছে।

গত ২১শে জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে সরাসরি আসা একটি বিমানের ১৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।

সরকারি নিয়ম অনুসারে তাদের চারদিনের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছিল। গত রবিবার তাদের নমুনা নেয়া হয়। সোমবার সকালে ২৮ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়। এই ২৮ জনকে খাদিমপাড়ার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে যুক্তরাজ্য থেকে যে ফ্লাইটে ১৪৩ জন যাত্রী এসেছেন, তাদেরও বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। সিলেটের কয়েকটি আবাসিক হোটেল চারদিন থাকার পরে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।

আগে আসা যাত্রীদের মধ্যে আরও একজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ মোট ২৯ জনের পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) আশরাফ উল্যাহ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, চৌঠা জানুয়ারি থেকে ২১শে জানুয়ারি পর্যন্ত সাতটি ফ্লাইটে মোট ৫৪৪ জন যাত্রী এসেছেন। তাদের ভিন্ন ভিন্ন আবাসিক হোটেলে সার্বক্ষণিকভাবে পুলিশের তত্ত্বাবধানে রাখে চারদিনের কোয়ারেন্টিন শেষে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৯ জনের পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

তিনি জানান, ২১শে জানুয়ারির আগে যে যাত্রীরা এসেছেন, তাদের আগে আর কারো কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া যায় নি।

যুক্তরাজ্য থেকে আসা এই যাত্রীদের সবার কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছিল। সেই সার্টিফিকেট সঠিক ছিল কিনা বা কীভাবে তারা বাংলাদেশে পজিটিভ শনাক্ত হলেন, সে বিষয়ে কোন ধারণা নেই বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের। তবে তারা যুক্তরাজ্যের সেই সার্টিফিকেটের ওপর নির্ভর করছেন না।

আশরাফ উল্যাহ বলছেন, ”যুক্তরাজ্য থেকে যারাই আসছেন, তাদের সবার কোভিড-১৯ টেস্ট করে দেখা হচ্ছে। সেই টেস্টের ফলাফল না আসা পর্যন্ত তারা পুলিশের তত্ত্বাবধানে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকেন। নেগেটিভ হলে তারা নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ার পরে তারা চলে যান।”

যে যাত্রীরা করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, তারা এখন ভাইরাস মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকবেন।

গত ২৮শে ডিসেম্বরর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “লন্ডন থেকে যারা আসবে তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে”।

“লন্ডন ফ্লাইট থেকে যেই আসুক, তার যদি গতকালকেরও (রিপোর্ট) নেগেটিভ থাকে, তারপরেও তাকে কম্পলসারি ১৪ দিনের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন।”-বিবিসি িবাংলা

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর