চসিক নির্বাচন উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন

করোনা পরিস্থিতির কারণে স্থগিত হওয়া দীর্ঘ দশ মাস পর আগামীকাল ২৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম হল, আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয়, বন্দর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৭৩৫টি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি বিতরণ শুরু সহ সুষ্ঠু সুন্দরভাবে চসিক নির্বাচন সম্পন্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৭ জানুয়ারির নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিতে ৭৩৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। ইভিএমের মাধ্যমেই ভোটগ্রহণ হবে।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি স্থায়ী ও দুটি অস্থায়ী। বুথ সংখ্যা রয়েছে ৪ হাজার ৮৮৬টি ভোট কক্ষ।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিয়োগপ্রাপ্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচন শুরুর দুই দিন আগে থেকে মাঠে থাকবেন বলে জানান নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব (আইন) আফরোজা শিউলী। সম্প্রতি আফরোজা শিউলীর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা ২০১২ এ বিধি ৮৬-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে (২৫ জানুয়ারি) থেকে ভোট গ্রহণের দুই দিন পর (২৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

নিয়োগপ্রাপ্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা হলেন,১,২ নম্বর ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজা, ৩, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহান, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কায়সার, ৭, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরা, ৯, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খন্দকার, ১১, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শারাফ উদ্দিন আহমদ, ১৩, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফেনী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ খান, ১৫, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রায়হান চৌধুরী, ১৭, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে লক্ষ্মীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেব, ১৯, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বান্দরবানের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম এমরান, ২১, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে খাগড়াছড়ি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সামিউল আলম, ২৩, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে খাগড়াছড়ি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসান, ২৫, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোয়েব উদ্দীন খান, ২৭, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে নোয়াখালী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাঈদীন নাঁহী, ২৯, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে কুমিল্লা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইরফানুল হক চৌধুরী, ৩১, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে কুমিল্লা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামছুর রহমান, ৩৩, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে রাঙামাটি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট প্রবাল চক্রবর্তী, ৩৫, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাঙামাটি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ পাল, ৩৭, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে চাঁদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামাল হোসাইন, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কার্তিক চন্দ্র ঘোষ।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে ২৫ প্লাটুন বিজিবি।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেল থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় টহল শুরু করেছেন বিজিবি সদস্যরা।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার জানান, সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিজিবি সদস্যরা ২৫ জানুয়ারি বিকেল থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন।

নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনায় বিজিবি সদস্যরা মাঠে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

এছাড়াও সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ৮ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।

সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর জানান, চসিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৮ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।

তিনি বলেন, কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল দেবে পুলিশ। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা হলে বা কেউ আইন ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চসিক নির্বাচনে এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, ধানের শীষ নিয়ে বিএনপি থেকে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম প্রতীক), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার প্রতীক) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী।

এবার চসিকের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন ২২৬ জন। যেখানে মেয়র পদে ৭ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে (পুরুষ) ১৬৮ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গত মার্চ মাসে স্থগিত হওয়া নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে তিনটি ওয়ার্ড ও একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মারা যাওয়ায় ওই চারটি ওয়ার্ডে নতুন করে তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোঃ হারুনুর রশিদ।

বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর