ধামইরহাট পৌর নির্বাচন: হেভিওয়েট প্রার্থীদের জমজমাট লড়াই
তৃতীয় ধাপে নওগাঁর ধামইরহাট পৌরসভার নির্বাচন আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর প্রতিক্ষার পরে পৌরসভার ১২ হাজার ৬৪০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নবীন ও প্রবীণের মর্যাদার লড়াই ততই জমজমাট হচ্ছে।
২০০৪ সালে বিগত জোট সরকারের আমলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ধামইরহাট পৌরসভা গঠিত হয়। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে এ পৌরসভা গঠিত হয়। তৎকালিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.মাহবুবুর রহমান চৌধুরী চপল এ পৌরসভার প্রথম প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০০৬ সালের ৩০ মে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো.মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে ২৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আ.লীগ সমর্থিত তরুণ প্রার্থী মো.আমিনুর রহমান বিজয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। কাউন্সিলরগণ শপথ নিলেও আইনী জটিলতার কারণে মেয়র আমিনুর রহমানের শপথ গ্রহণ প্রায় ৭ মাস পর অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে পৌরসভার সীমান বাড়ানো হলে একটি পক্ষ সংক্ষুদ্ধ হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রীট দায়ের করেন। এ রীটের নিষ্পত্তি না হওয়ার নির্বাচন বন্ধ ছিল। সব পক্ষে অংশ গ্রহণে আগামী ৩০ জানুয়ারী তৃতীয় ধাপে এ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নির্বাচনে আবারও পুরানো দুই হেভিওয়েট প্রার্থী নির্বাচন করছেন। বর্তমান মেয়র আ.লীগ মনোনীত আলহাজ্ব মো.আমিনুর রহমান নৌকা এবং বিএনপি মনোনীত সাবেক পৌর প্রশাসক আলহাজ্ব মো.মাহবুবুর রহমান চৌধুরী চপল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা উমার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট মো.আইয়ুব হোসেন নারকেল গাছ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৬ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ১৭ জন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াই রয়েছে। বর্তমানে প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কনকনে শীতের তীব্রতাকে হার মানিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠেঘাটে, পাড়া মহল্লা, হোটেল- রেস্তোরাসহ সর্বত্র নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব মো.আমিনুর রহমান বলেন, প্রায় ১৪ বছর ধরে আমি পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। দলমত নির্বিশেষে মানুষের সেবা করছি। সরকার দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য মো.শহীদুজ্জামান সরকার এর সার্বিক সহযোগিতায় ‘গ’ শ্রেণীর পৌরসভাকে ‘খ’ শ্রেণীতে উন্নীত করণ করা হয়েছে। আগামীতে নির্বাচিত হলে পৌরসভার বাকি রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, রোড লাইট, আধুনিক পৌর ভবন নির্মাণ ও সুসজ্জিতকরণ করা হবে।
তিনি আরোও জানান, ইতোমধ্যে ১৫০টি সোলার বাল্প বসানোর প্রকল্প এবং ৪-৫ কোটি ব্যয়ে রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। একই দলের সরকার, স্থানীয় সংসদ সদস্য থাকায় আমার পক্ষে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। তাই আগামীতে এসব কারণে পৌরবাসী আগামী ৩০ জানুয়ারী তারিখে নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিবে।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক পৌর প্রশাসক আলহাজ্ব মো.মাহবুবুর রহমান চৌধুরী চপল বলেন, ধামইরহাটবাসীর উন্নয়নে আমাদের পরিবারের অনেক অবদান রয়েছে। সুষ্টু, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ ভোট হলে এবং পৌরবাসী চাপমুক্ত ও স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।
তিনি আরও বলেন, ভোটের দিন প্রত্যেক কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো এবং ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ আচরণের জোর দাবী জানায়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উমার ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এডভোকেট মো.আইয়ুব হোসেন (নারকেল গাছ) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি মহামান্য হাইকোর্টে এ পৌরসভার নির্বাচনের জন্য আইনি লড়াই করেছি। তার ফলশ্রুতিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
তিনি আশা করছেন পৌরবাসী তার এ শ্রমের প্রতিদান আবশ্যই দিবেন।
৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রবীণ সমাজসেবক মো.খালেকুজ্জামান বলেন, তিনি প্রায় ৩৫ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশার জড়িত। হাজার হাজার ছেলে মেয়েকে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের সেবা করার জন্য নির্বাচন করছি। আশা করছি শেষ বয়সে ভোটারগণ তার অবদান মনে রাখবে এবং তাকে নির্বাচিত করবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা মো.সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি ধামইরহাট পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রের ৩৮টি বুথে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্টুভাবে সম্পন্নের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ পৌরসভা মোট ভোটার রয়েছে ১২ হাজার ৬৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ২২৭ এবং নারী ভোটার ৬ হাজার ৪১৩ জন।
বার্তাবাজার/এ.আর