বাংলাদেশ সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প: সম্ভাব্য ঝুঁকি কী

বাংলাদেশ সরকার সারা দেশে ৬৬,১৮৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আধা-পাকা ঘর দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন।

প্রথম দফায় ৬৬ হাজারের বেশি মানুষকে ঘর দেয়া হলেও দ্বিতীয় দফায় আগামী মাসে আরো এক লক্ষ ঘর তৈরি করে দেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যাদের ঘর দেয়ার জন্য বাছাই করা হচ্ছে তাদের যদি ঐ এলাকাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে দীর্ঘমেয়াদে সরকারের এই কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় কাঁঠালতলা গ্রামে বাসিন্দা রিনা পারভিন। সরকার সারা দেশে যে হাজার হাজার ঘর তৈরি করেছে তার একটির মালিক তিনি।

আগে স্বামী, ছেলে এবং শাশুড়ি নিয়ে একটা কুঁড়ে ঘরে থাকতেন এখন পেয়েছেন দুটো কামরা, রান্নাঘর, টয়লেট বারান্দাসহ একটা ঘর।

“আমরা ঘরে থাকতাম, আমার শাশুড়ি বারান্দায় থাকতো। আমার স্বামী দিনমজুর। ছেলে ক্লাস এইট-এ (অষ্টম শ্রেণীতে) পড়ে। অভাবের সংসারে কোনদিন চিন্তা করিনি নিজের বাড়ি ঘর হবে। কিন্তু এখন দুটো ঘর হয়েছে। আর কাউকে বারান্দায় থাকতে হবে না এখন,” বলছিলেন রিনা পারভিন।

কীভাবে বাছাই করা হল:
এসব বাড়িঘর ছাড়াও ৩৬টি উপজেলায় ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে আরও ৩,৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

সরকারের ঘোষণা করা মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে সব মিলিয়ে ৬৯,৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর তৈরি করে দিচ্ছে সরকার।

সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মাহবুব হোসেন বলছিলেন, প্রতিটি জেলার স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে ভূমিহীন এবং গৃহহীন ব্যক্তিদের একটা তালিকা তৈরি করা হয়।

“আমরা স্থানীয় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, যার সাথে সকল সরকারি-বেসরকারি দপ্তর-সংস্থা, জনপ্রতিনিধি সবাই সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের মাধ্যমে তালিকা করা হয়। তার ভিত্তিতে বাংলাদেশের ৬৪টা জেলার ৪৯২টা উপজেলায় ভূমিহীন-গৃহহীন যে পরিবারের সংখ্যা সেটা আমরা পেয়েছি তা হলো ২,৯৩,৩৬১ জন,” বলছিলেন তিনি।

এই সংক্রান্ত একটা নীতিমালা করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক।

“আমরা একটা নীতিমালা করেছি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে। সেই নীতিমালায় বলা আছে বিধবা, প্রতিবন্ধী, অসহায়, বয়স্ক তাদের অগ্রাধিকার দিবে। আবার এই তালিকা থেকে যারা অতি-দরিদ্র তাদের জন্য আগে ঘরটা করে দেয়া হয়েছে।”

অর্থ বরাদ্দ:
১. দুই রুমের আধা-পাকা ঘরের প্রতিটির নির্মাণ ব্যায় ১,৭১,০০০ টাকা।
২. মালামাল পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত ৪,০০০ টাকা দেয়া হচ্ছে।
৩. সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায়।
৪. অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তিনটা স্থান থেকে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছ-গ্রাম প্রকল্প থেকে।

প্রতিটা উপজেলার- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে এবং কোন টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়া খাস জমিতে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প করা হচ্ছে।

সম্ভাব্য ঝুঁকি:
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটা অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু তাদের কর্মসংস্থান যদি একই স্থানে না হয় তাহলে এই উদ্যোগের সুফল অনেক ক্ষেত্রে নাও পাওয়া যেতে পারে।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলছিলেন, “আমাদের প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে মানুষ কিন্তু যেখানে কাজ সেখানে থাকতে চায়। যখন মানুষের গ্রামে কাজ না থাকে তারা তখন বাড়ী-ঘর ফেলে শহরে চলে যায়।

“শহরে যেয়ে তারা কাজের খোঁজ করে এবং বাড়িঘরে তালা মারা থাকে। সেক্ষেত্রে এটা কোন কাজে লাগবে না।”

তবে কর্মসংস্থানের ব্যাপারে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণের সুবিধা এবং প্রশিক্ষণের সুবিধা দেয়া হবে বলে জানাচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক মাহাবুব হোসেন।

এছাড়া আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছর যাতে তারা ঘর বিক্রি করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

প্রকল্পের পরিচালক বলছেন, সরকার খাস জমির বন্দোবস্ত করলে সেটা আর বিক্রি করা যায় না। অর্থাৎ যারা আজ ঘর পেয়েছেন তারা এই ঘর বিক্রি করতে পারবেন না।-বিবিসি বাংলা।

বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর