‘অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা এভারেস্ট জয় করার মতোই কঠিন’

‘দীর্ঘদিন অবৈধ দখলের ফলে বাড়ী, পারিবারিক কবরস্থান, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, খেলার মাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে ওই অবৈধ জমির সাথে তাদের আবেগের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা কখনাে কখনাে এভারেস্টে জয় করার মতােই কঠিন’- বলে মন্তব্য করেছেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহি।

খাস জমি উদ্ধার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মুজিব জন্মশত বর্ষে ‘ক’ শ্রেণির ভূমি ও গৃহহীন ২২০ জন ব্যক্তিদের মাঝে গৃহনির্মাণ কাজের বরাদ্দের এক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে এসব কথা বলেন তিনি।

ইউএনও জানান, গৃহনির্মান কাজে ২২০টি ঘরের বরাদ্দ প্রাপ্তির পরপরই অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প বিবেচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় হয়। এ কাজ সুনিপুণভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে প্রকল্প পরিচালক মহােদয় ও জেলা প্রশাসক, ফরিদপুর মহােদয় জরুরী ভিত্তিতে আলােচনা সভা আহবান করেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নিয়ে উপজেলার খাস জমি চিহ্নিত করণ পুর্বক দখল পুনরুদ্ধারের কাজে মনােনিবেশ করি। নিঙ্কট খাস জমি দখলমুক্ত করার কাজে আলফাডাঙ্গা উপজেলায় অত্যন্ত বেগ পেতে হয়েছে।

যার কয়েকটি বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন:

গত ০৭/১২/২০২০ খ্রিস্টাব্দে উপজেলার কুচিয়াগ্রাম মৌজায় চরকাতলাসুর নামক গ্রামে ১৫৩.৫৬ একর নদী শ্রেনির খাস জমি (এর মধ্যে ৩১.১৩ একর সিএস, এসএ ও বিআরএস তিনটি রকর্ডেই খাস) পুনরুদ্ধার করার কাজে গেলে কিছু উশৃংখল লােকজন আমাদের কাজে বাঁধা দেয় এবং এই সকল জমি তাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি বলে দাবী করে। ওই দিন উপস্থিত অবৈধ্য দখলদারদের দাঙ্গাদেহী মনােভাবের কারনে আমরা ফিরে আসতে বাধ্য হই। এরপর ০৮/১২/২০২০ খ্রিস্টাব্দে সকালের দিকে একটি জাতীয় পত্রিকার বিশেষে প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আমার মােবাইলে ফোন দিয়ে চরকাতলাসুর গ্রামে আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ ও খাস জমি উদ্ধার করতে নিষেধ করেন। কথার এক পর্যায়ে আমাকে হত্যার হুমকি, দিনাজপুরের ঘােড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মত অবস্থা, ডিপি চালুসহ বিভিন্ন হুককি প্রদান করেন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহােদয় সরেজমিনে ০৯/১২/২০২০ তারিখে সরকারি খাস জমিতে তদন্ত করতে আসেন। এ বিষয়ে ইতােমধ্যে উক্ত হুমকি প্রদানকারীর বিরুদ্ধে জিডি করা হয়েছে। ঘটনাটির গুরুত্বের কারনে প্রায় সকল পত্রিকা ও টিভিতে নিউজ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক, ফরিদপুর মহােদয়ের বলিষ্ঠ দিক নির্দেশনায় প্রায় ৩১ একর নিষ্কন্টক খাস জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। যে জমিতে এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের কাজ চলমান।

তিনি আরেকটি অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, পার্শ্ববর্তী টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা নামক মৌজায় খাস জমি উদ্ধার করতে গেলে নদীভাঙ্গন কবলিত জমির পুনর্জাগরিত চর হিসেবে দাবী করে। তাদের সাথে আলােচনা ও জমি পরিদর্শনে গেলে এলাকার লােকজন বিশেষ করে মহিলারা উদ্ধত আচরণ করতে থাকে এবং সকলেই আশ্রয়নের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে আমার কার্যালয়ে উক্ত মৌজার দখলদার ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলােচনায় বসি কিন্তু ফলপ্রসু কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি।

ইউএনও আরো একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, উপজেলার জয়দেবপুর মৌজায় ৮০ শতাংশ খাস জমি উদ্ধার করতে গেলে অবৈধ দখলদারদের তীব্র বাঁধার সম্মুখীন হই। অবৈধ দখলদার পরিবারটি বিভিন্ন লােকজনের সহায়তায় বাঁধা প্রদান করার চেষ্টা করতে থাকে। তারা ওই স্থানে গেলে অনশন করে এবং হামলা-মামলার হুমকি প্রদান করতে থাকে। পরবর্তীতে ঐ দখলদার পরিবারটির সাথে আলােচনা করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে সমস্যাটি সমাধান করা হয়। যেখানে এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলামান রয়েছে।

ইউএনও তৌহিদ এলাহি বলেন, ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’ এই অঙ্গীকারকে সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধ পরিকর। আমরা অনশন, হুমকি, জনরােষের মতাে চ্যালেঞ্জগুলােকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবস্থাপনায় নিয়ে দীর্ঘ আলােচনা ও আইনগত সমঝােতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বর্তমানে আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ২২০টি গৃহনির্মাণের কাজ ভূমি ও গৃহহীনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকী জমিগুলাে গৃহহীন ও ভূমিহীন ব্যক্তিদের মাঝে বুঝিয়ে দিয়ে মুজিববর্ষে শেখ হাসিনার উপহার ঘরগুলাে হস্তান্তর করতে পারবাে।

বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর