শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে কিভাবে হবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত?
দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধ থাকার পর ফেব্রুয়ারি থেকে সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিক্ষা গবেষকরা।
আগামী ৪ঠা ফেব্রুয়ারির আগেই জানিয়ে দেয়া হবে কবে নাগাদ স্কুল খুলতে পারে। এর মধ্যেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করতে বলা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন প্রক্রিয়ায় খোলা হবে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কী ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে বিষয়েও বৃহস্পতিবার শিক্ষার দায়িত্বে থাকা দুই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়।
দুই একদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠাবে।
এই দীর্ঘ সময় অনলাইন ও সংসদ টিভিতে ক্লাস চললেও ডিভাইস ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ৬৮% শিক্ষার্থীর কাছে সেই সেবা পৌঁছায়নি। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সাম্প্রতিক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার কারণে এখন ৭৫% শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৭৬% অভিভাবক চাইছেন স্কুলগুলো স্কুলে দেয়া হোক।
প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তানও জানুয়ারিতে স্কুল খুলে দেয়ায় ঢাকার বাসিন্দা মিসেস জাহানারা বেগমও চাইছেন তার সন্তান যেন দ্রুত স্কুলে ফিরতে পারে।
“বাসায় থাকতে থাকতে বাচ্চারা খুব ফ্রাস্ট্রেটেড। আগে তো আমি মোবাইল, ল্যাপটপ হাতে দিতাম না। এখন ক্লাস, কোচিং করতে সেগুলো তো লাগেই। আর বাকি সময়ও এই ডিভাইস নিয়েই পড়ে থাকে।”
“আর অনলাইনের ক্লাস, পরীক্ষায় সঠিক মূল্যায়নটাই হয় না। আমি চাই যতোটা সম্ভব নিরাপদ রেখে স্কুল খুলে দেয়া হোক, অনেক দিন তো হল,” বলেন এই অভিভাবক।
জাহানারা বেগমের মতো সারা বাংলাদেশের অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে এবার সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার দায়িত্বে থাকা দুই মন্ত্রণালয়।
৪ঠা ফেব্রুয়ারির আগেই স্কুল খোলার প্রস্তুতি শেষ করতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে চতুর্থ, পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
মূলত এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি কিভাবে নিশ্চিত করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন সংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের।
তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অন্তত ৬০টি নির্দেশনা প্রস্তুত করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে একেকটি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসবে। শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার পথ আলদা হবে।
একজন ক্লাসে কতোজন শিক্ষার্থী বসবে সেটা নির্ভর করবে ক্লাসের আয়তনের ওপর।
উপস্থিত সব শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়তে হবে। মাস্ক সরবরাহ করা হবে স্কুল থেকেই।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং সাবান পানিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
এছাড়া স্কুলের শ্রেণীকক্ষ, টয়লেট, স্কুল প্রাঙ্গণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, এগুলোর সঠিক সম্পর্কেও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হবে।
বেসরকারি স্কুল তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে যাবতীয় খরচ বহন করবে। অন্যদিকে সরকারি স্কুলগুলোর খরচ দেবে সরকার।
বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ নমুনা পরীক্ষা সাপেক্ষে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চার থেকে পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে যেটা গত জুন জুলাই মাসেও ২৫%-৩৫% ছিল।
এর আগে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ঢাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
এ ব্যাপারে গত ১১ই জানুয়ারি সরকারকে পাঠানো আইনি নোটিশে বলা হয়, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তাই ছুটি না বাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হোক।-বিবিসি বাংলা।
বার্তাবাজার/এসজে