স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

সিরাজগঞ্জে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মো. তরিকুল ইসলাম খানের হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্ত্রী মোছাঃ হাসি খাতুন।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে নতুন ভাঙ্গাবাড়ির নিজ বাড়িতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এসময় নিহত তরিকুলের ছেলে একরামুল হাসান হৃদয় ও মেয়ে তাহিদা জাহান তিজা ছাড়াও স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তি বর্গ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিহত তরিকুলের স্ত্রী হাসি খাতুন লিখিত বক্তব্যে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়স্থল। আপনি সাধারণ মানুষের ভরসা। আপনি নারীর সাহস। আপনার দেখানো সাহসে বলীয়ান হয়ে আমি একজন সাধারণ গৃহিনী হয়ে স্বামী হত্যার বিচার চাইতে এসেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের মা। তাই আমি আমার মায়ের কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাইতে এসেছি। আমার বিশ্বাস মা তাঁর দুঃখী সন্তানকে কখনোই খালি হাতে ফেরান না।

মমতামমী প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের অংশ হিসেবে, সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হওয়া আমার স্বামী তরিকুল ইসলাম খানকে উক্ত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বুদ্দিন ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে নির্মম ভাবে হত্যা করে।

এখানে উল্লেখ্য, ৬নং ওয়ার্ডের নতুন ভাঙাবাড়ি ও ব্যাপারিপাড়া কেন্দ্র দুটির ফল ঘোষিত হবার পর এগিয়ে থাকা আমার স্বামী নিহত তরিকুল ইসলাম খান ফল প্রকাশের বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে তৃতীয় কেন্দ্র শহীদগঞ্জ ভোটকেন্দ্রে যান এবং ভোটকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জয় পরাজয় যা ই হোক দ্রুত ফল প্রকাশের অনুরোধ জানান। এর ফলস্বরূপ, কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত কর্মকর্তাগণ ফল প্রকাশ করেন। এতে আমার স্বামী তরিকুল ইসলাম খান বিজয়ী হন। বিজয়ী ঘোষিত হবার পর স্বভাবতই ওনার সমর্থকেরা আনন্দ উল্লাসে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েন ঠিক সে মুহূর্তেই পাশে অবস্থানরত বুদ্দিন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী অতর্কিত ভাবে তাঁর ওপর ছুরিকাঘাত করে। হতভম্ব আমার স্বামীর সমর্থকেরা কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই হত্যাকারীরা সোল্লাসে হত্যার স্থান ত্যাগ করে। এরপর ছুরিকাঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া আমার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর, কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের আপনার আইনের শাসনের প্রতি অগাধ আস্থা রয়েছে। তাই কোনকিছু না ভেবে এরপর আমরা আইনের দ্বারস্থ হই। সঠিক বিচার পাওয়ার আশায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রসাশন আমাদের আশ্বাস দেন, ২৪ ঘন্টার ভেতরে খুনী বুদ্দিনসহ সকল আসামীদের গ্রেফতার করবেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত খুনী বুদ্দিন তো দূরের কথা কোনো আসামীকেই গ্রেফতার করা যায়নি। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রকাশ্য আসামীদের ভেতরে অনেকেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো সক্রিয় আছেন। শুধু সক্রিয়ই নয় তারা এও প্রচার করে বেড়াচ্ছেন যে, সরকার পুলিশ প্রসাশন তাদের কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিই তো বলেছেন, সন্ত্রাসী কোন দলের নয়। তাহলে এই নরপিশাচেরা এই নির্লজ্জ সাহস কোথায় পায়? তাদের এই নির্লজ্জ দুঃসাহস আপনার প্রণিত সুশাসন ও আপনার বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। এ আপনার প্রতি তাদের চরম অবমাননা। অত্যন্ত দুঃখের সহিত বলতে হচ্ছে, তারা আমার স্বামীকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তারা এখন তাদের এই হীন অপকর্ম ঢাকতে নানাবিধ অপপ্রচার শুরু করেছেন। তাদের এই অপপ্রচারে সঙ্গ দিচ্ছেন কিছু অসাধু সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম এবং আরও কিছু মানুষ। তারা যে অর্থের বিনিময়ে এই অসৎ কাজ করছেন এ কথা পরিস্কার।

দৈনিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক দেশরূপান্তর প্রত্রিকাসহ আরও কয়েকটি প্রত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে সংবাদ প্রচার করে, আমার স্বামী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী।

আসলে এই তথ্যের কোন ভিত্তি নেই। আমার স্বামী গ্রাম পঞ্চায়েত মনোনীত একজন প্রার্থী। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের সংবিধিতেই লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, একমাত্র মেয়র ব্যাতিত পৌর নির্বাচনের সকল নির্বাচনই নির্দলীয়।

খুনীরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার স্বামীকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তথা বিএনপি কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করতে হীন প্রচেষ্টা চলছে। যাতে দলীয় ফায়দা লুটে কৃতকর্ম ঢাকা যায়।

তবে আপনার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবাইদুল কাদের সাহেব, এই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে যেটা বলেছেন সেটা আশাব্যঞ্জক এবং এই হত্যাকান্ডের সাথে যে কোন দলীয় সংশ্লিষ্টতা নেই তাঁর প্রমাণ ও ক্ষমতাসীন দল যে হত্যাকারীদের স্বীকার করবে না তা স্পষ্ট।

এদের অপপ্রচার এখানেই শেষ নয় গত কদিন ধরে দেখছি, কয়েকটি অনলাইন সংবাদপত্রে এইটা প্রচার হচ্ছে যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের জেরে কমিশন পদপ্রার্থী তরিকুল ইসলাম খান মৃত্যুবরণ করেছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার মত আমিও একজন ধর্মভীরু ধর্মপ্রাণ মানুষ। একজন ধর্মভীরু মানুষ হিসেবে মৃত স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার বরদাশত করা কি সম্ভব?

এই হত্যা পরিকল্পিত। নিশ্চিত পরাজয় আগে থেকে অনুমান করতে পেরে খুনী বুদ্দিন এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্রশস্ত্রসহ সুসজ্জিত হয়েই এসেছিলো হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে। তার বড় প্রমাণ হত্যার পরে তাদের সোল্লাসে অত্যন্ত বর্বরোচিত ভাবে হত্যার স্থান ত্যাগ করা।

তিনি আরেও বলেন, ওয়ার্ডবাসী আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সেই সাথে আমিসহ আমার পরিবারও চরম হুমকির মুখে রয়েছি। তাই আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান তিনি।

বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর