একজন ইউএনওর স্বপ্নপূরণ

গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের কথা ভেবে এক অভিনব অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনাব আশরাফুল আলম। দেশে সাধারণত যে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় সেগুলো অত্যান্ত ব্যয়বহুল যা গ্রামের সাধারণ মানুষের সাধ্যক্ষমতার বাইরে।

গ্রামীন কিছু রাস্তা আছে যার প্রস্থ খুব কম থাকায় বড় অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না এতে অনেক সমস্যার সম্মূখীন হতে হয় গ্রাম্য সাধারণ জনগণের। এসব কথা ভেবেই কীভাবে কম খরচে এবং সকল স্থানে অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা যায় তারই চিন্তা করেছিলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম।

তারই চিন্তার ফসল হিসেবে ওই এলাকার জনগণ পেয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। যেটি তৈরি হয়েছে সিএনজি ইঞ্জিনের সাথে বডি কাস্টমাইজড করে এবং নাম দেয়া হয়েছে গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স।

এই গ্রামীন অ্যাম্বুলেন্স দ্বারা উপজেলার যে কোনো জায়গা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে খরচ পড়বে ৪০০ টাকা। এবং সদর হাসপাতালে রোগী পরিবহণে লাগবে ৬০০ টাকা। নিজ ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে যেতে খরচ পড়বে ২০০ টাকা। এভাবে নির্ধারিত ভাড়ায় পাওয়া যাবে এই অ্যাম্বুলেন্স সেবা।

গাড়িটি সিএনজির মতো হলেও এর মধ্যে সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের সকল সেবাই বিদ্যমান রয়েছে। ৪৫০ সিসির প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্স তৈরিতে ব্যায় হয়েছে ৭ লাখ টাকা। অ্যাম্বুলেন্স তৈরিতে সকল খরচ বহন করেছে উপজেলা পরিচালনা ও উন্নয়ন প্রকল্প।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আশরাফুল আলমের চিন্তা ও স্বপ্ন কীভাবে পূরণ হলো সে ব্যাপারে তিনি তার ফেইসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করেন যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ইউএনওর ছড়িয়ে পড়া পোস্টটি তুলে ধরা হলো-

‘গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স: একটা স্বপ্নপূরণ

তখন সদ্যই যোগদান করেছি সাটুরিয়া উপজেলার ইউএনও হিসেবে। ঢাকার কাছের উপজেলা হিসেবে কল্পনায় যতটা উন্নত হিসেবে উপজেলাকে কল্পনা করেছিলাম বাস্তবে সেরকম দেখিনি। বিশেষ করে ইউনিয়নগুলো থেকে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা পিছিয়ে পড়া মনে হয়েছে, রাস্তাগুলোও সরু। তখনই চিন্তা হচ্ছিল এসব জায়গা থেকে মানুষ কীভাবে অসুস্থ রোগীকে বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের হাসপাতালে নেবে। এরকম একটা সমস্যা থেকেই মাথায় ভাবনা কাজ করছিল কীভাবে সেবা প্রাপ্তি আরো সহজ করা যায়।

চিন্তা ছিল সিএনজি ইঞ্জিনের সঙ্গে কাস্টমাইজড বডি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স বানানোর কিন্তু যারা সিএনজি গাড়ি আমদানি করে এমন কয়েকটা জায়গা নক করে মন খারাপই হয়েছিল। সবশেষে নক করলাম উত্তরা মোটর্সে। একদিন ঢাকায় উত্তরা মোটর্সের হেড অফিসেই চলে গেলাম চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে সাক্ষাতে। আলাপে জানলাম আমি যেটা চাই এরকম একটা সার্ভিস উনি সারাদেশের জন্য ভাবছেন। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে গেল। এরপর অনেক কিছু…।

অবশেষে উপজেলা উন্নয়ন ও পরিচালনা প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়। গ্রামীণ সরু রাস্তায় চলবে বলে নাম রাখলাম ‘গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স’।

সেবা পাবেন কীভাবেঃ উপজেলার যেকোনো ইউনিয়ন থেকে ফোন করলেই এ সার্ভিস নিতে পারবেন।

যোগাযোগঃ ০১৭০৬০৭৭১০০, ০১৭০৬০০৪৯৪৫

খরচঃ সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিতে ৪০০ টাকা এবং মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিতে ৬০০ টাকা নিজ ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক কিংবা পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে নিতে ২০০ টাকা।

কৃতজ্ঞতাঃ মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক মহোদয়ের প্রতি, জেলা প্রশাসক মানিকগঞ্জ জনাব এস এম ফেরদৌস স্যারের প্রতি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ ফটো মহোদয় এবং সকল ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাটুরিয়ার জনসাধারণের প্রতি। এছাড়া কৃতজ্ঞতা উত্তরা মোটর্সের প্রতিও।

ধন্যবাদান্তে,
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

(আপনারা সাটুরিয়ার সব মানুষের কাছে এই সেবা সম্পর্কিত বার্তাটি পৌঁছে দিন যেন বেশি সংখ্যক মানুষ এই সেবা সম্পর্কে জানতে এবং সহজে সেবা পেতে পারেন)’

তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বপ্নপূরণের অনুভূতি অন্যরকম। অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল কাজটি বাস্তবায়ন করতে। এ উদ্যোগের তখনই পূর্ণতা পাবে যখন মানুষ এই সার্ভিস ব্যবহার করবেন।

বার্তাবাজার/ই.এইচ.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর