ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা শেষ আন্তর্জাতিকে ফিরছেন সাকিব
প্রায় পনের মাস পর সাকিব আল হাসান ফিরছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা এই ক্রিকেটার এবারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্কোয়াডে আছেন। ২০শে জানুয়ারি মাঠেও নামবেন একরকম নিশ্চিত।
অবশ্য নিষেধাজ্ঞা শেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছেন আগেই। কিন্তু এর আগের দুবার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যেমন দুর্দান্ত কামব্যাক করেছিলেন, এবারে তেমনটি হয়নি।
গত বছরের বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ৯ ম্যাচে মাঠে নেমে মাত্র ১১০ রান তোলেন সাকিব। ম্যাচপ্রতি গড় ১২ দশমিক ২২।
ওদিকে বল হাতে নেন মোটমাট ৬টি উইকেট।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের একজন পরিসংখ্যানবিদ ও বিশ্লেষক রিফাত এমিল বলেন, “সাকিব চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। এধরণের ক্রিকেটাররা চ্যাম্পিয়নের মতোই ফিরতে চান। সবশেষ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে সাকিবের ব্যাট হাসেনি।”
তবে সদ্য শেষ হওয়া নিজেদের মধ্যকার প্রস্তুতি ম্যাচে অর্ধশতক পেয়েছেন যা স্বস্তির।
মি. এমিল যোগ করেন, “বয়স ৩৩ হলেও সাকিবের ফিটনেস ভালো।”
সাকিবের খেলার বিশ্লেষণে তিনি বলেন, “সাকিবের অন্য সুবিধা হলো অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে বেশ ভালো, হেড পজিশন, ফুট মুভমেন্ট, হ্যান্ড আই কো-অর্ডিনেশন সব ঠিক থাকলেই হচ্ছে। তার ওপর প্রতিপক্ষও খানিক দুর্বল। সাকিবের ফেরার আদর্শ মঞ্চ।”
তবে প্রতিপক্ষ দুর্বল হলেও, ‘চ্যালেঞ্জ থাকবেই’ বলছেন মি. এমিল।
“সাকিবের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ হবে, আগের জায়গায় ফেরত আসা। ২০১৯ বিশ্বকাপ যেখানে শেষ করেছিলেন। চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটাররা চ্যালেঞ্জ নিতেই তো পছন্দ করেন।”
সাকিব শেষবার ওয়ানডে খেলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে, যেখানে তিনি ৬০০ এর বেশি রান তোলেন এবং ১১টি উইকেট নেন। যা বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম বাংলাদেশের নানা পর্যায়ের ক্রিকেট দল পরিচালনা করেছেন।
সাকিব আল হাসান নানা টেকনিকাল ও ক্রিকেটিয় সমস্যায় যাদের দ্বারস্থ হন তাদের একজন তিনি।
তিনি জানান, সাকিব যে মাপের প্লেয়ার তাতে করে সময় ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন তিনি।
সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে একটি উঁচুমানের ট্রেনিংও সম্পন্ন করেন সাকিব আল হাসান। যেখানে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। তবে সাকিব নিজের উদ্যোগে তার মেন্টরদের সাথে কথা বলেন।
ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন
কাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে যে সিরিজ শুরু হচ্ছে সেখানে সীমিত ওভারের ম্যাচে সাকিব চার নম্বরে ব্যাটিং করতে নামবেন বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেন, সাবিককে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে তাকে চার নম্বরেই ব্যাটিং করতে নামবেন।
যদিও ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়জুড়েই চার অথবা পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমেছেন সাকিব কিন্তু তার সবশেষ টুর্নামেন্ট, যেটা ছিল ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ, সেখানে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দারুণ সফল হয়েছিলন তিনি।
ফলে অনেক বিশ্লেষকই প্রশ্ন তুললেন সাকিবের ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করা ঠিক হল কি না।
আগের দুবার যেভাবে ফেরেন সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে মোট তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা বলা হয় তাকে, খেলার মাঠের প্রশংসার সাথে তার পিছু নেয় বিতর্কও।
২০১৪ সালে সাকিব আল হাসান প্রথম নিষিদ্ধ হন। সেবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে তাকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, সাথে তিন লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
সেবার সাকিব আল হাসান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি হোম ওয়ানডে ম্যাচে টিভি ক্যামেরায় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার অভিযোগে নিষিদ্ধ হন।
এরপর সাকিব শ্রীলঙ্কার সাথে একটি ম্যাচ এবং এশিয়া কাপের ভারত ও আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচ খেলতে পারেননি।
তিনি ফেরেন পাকিস্তানের বিপক্ষে, মাঠে নেমেই ১৬ বলে ৪৪ রানের একটি ইনিংস খেলেন সাকিব আল হাসান।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেও ৩২৬ রান তোলে বাংলাদেশ। যেটা বাংলাদেশের তৎকালীন ওয়ানডের সর্বোচ্চ স্কোর।
সাকিব আল হাসান একই বছর আবারো নিষিদ্ধ হন জুলাই মাসে।
এবারে নিষেধাজ্ঞা ছিল আরো বড়, ছয় মাসের।
নানা অভিযোগে এই শাস্তি দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান পাপন তখন বলেন, অভিযোগের তালিকা বেশ লম্বা। বোর্ড মনে করে তার আচরণগত সমস্যা আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন কাউকে আগে দেখেননি বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
তখন সাকিব আল হাসান মূলত বোর্ডের অনাপত্তিপত্র না নিয়ে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে চলে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি খেলেননি।
এছাড়া তখনকার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সাথে দুর্ব্যবহারেরও একটা অভিযোগ তোলা হয় সাকিবের ওপর।
তখন সাকিব বলেন, তিনি কোচের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় দুঃখিত, ক্ষমাও চেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
সাকিব আল হাসানকে দেয়া ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে এনে তিন মাস করা হয়।
সাকিব ফেরেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই সাকিব ৫৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন।
দ্বিতীয় টেস্টে সাকির প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে করেন ১৩৭ রান। বল হাতে দুই ইনিংসেই পাঁচটি করে মোট ১০টি উইকেট নেন।
এই রেকর্ড আছে বিশ্বে কেবল চারজনের।
অস্ট্রেলিয়ার এ কে ডেভিডসন ১৯৬০ সালে, ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম ১৯৮০ সালে, পাকিস্তানের ইমরান খান ১৯৮৩ সালে এবং সাকিব আল হাসান ২০১৪ সালে এই রেকর্ড গড়েন। -বিবিসি বাংলা
বার্তাবাজার/এ.আর