বান্ধবী অন্তঃস্বত্ত্বা, ঘরে অফিস করছেন সেই ইউএনও!

ঘরে বসে অফিস করেন সুনামগঞ্জে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজ। নারী সংশ্লিষ্ট একটি ঘটনায় তার নাম জড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়রা তার প্রতি ক্ষুব্ধ। আর তাই তিনি কার্যালয়ে যান না বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বিব্রত উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

কেবল বিয়ের আশ্বাসেই বান্ধবীর সঙ্গে রীতিমতো সংসার পেতে বসেন আসিফ ইমতিয়াজ। চলছিলও বেশ! কিন্তু বান্ধবীর গর্ভে সন্তান আসার পরই শুরু হয় বিপত্তি। শুরু হয় গর্ভপাতের চাপ, হুমকি ধমকিসহ আরও কতো কী! চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে বিদায়ী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এডিসি (এলএ) আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অন্তঃসত্ত্বা ওই বান্ধবীর। শেষমেষ উপায় না দেখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ময়মনসিংহের ওই নারী। ফলে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ তদন্তের সুপারিশে গত মাসে তাকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে বদলি করা হয়। ওই নারী জানান, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে এক বান্ধবীর মাধ্যমে চট্টগ্রামে দেখা হয় এডিসি আসিফ ইমতিয়াজের সঙ্গে। এরপর গড়ে উঠে সখ্যতা। পরে তিনি জানতে পারেন আসিফের স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে।

সেই সূত্র ধরে কয়েকদিন ফোনে কথা হয় তাদের। এরপর এপ্রিলের শেষের দিকে তার সঙ্গে ঢাকায় এসে সাক্ষাৎ করেন ওই নারী। প্রথম সাক্ষাতেই তাদের কথা হয় বিয়ে নিয়ে। ওই নারী জানান, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি মিরপুর ছয় নম্বরে একটি বাসা ভাড়া নেন। বাসা নেওয়ার খবর দেওয়ার পর তিনি ঢাকায় যান। ওই বাসায় আসিফ ইমতিয়াজের বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে কথা হয়। তাদের সামনেই মে মাসের মধ্যে বিয়ে করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তখনো চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে কর্মরত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এডিসি (এলএ) আসিফ ইমতিয়াজ।

ডিভোর্সে এতো সময় লাগছে কেন এমন প্রশ্নে আসিফ তার বান্ধবীকে জানান, আগের শ্বশুর আইনজীবী হওয়ায় ডিভোর্সের প্রক্রিয়ায় একটু বেশি সময় লাগছে। যেদিন ডিভোর্স পেপার হাতে পাবেন, তার পরের দিনই বিয়ে করবেন। এমন আশ্বাসের পাশাপাশি বোন ও ভগ্নিপতিকে সাক্ষী রাখায় ওই নারী একপর্যায়ে আসিফের সঙ্গে থাকতে রাজি হন।

বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় বাড়িওয়ালা তার আইডি নম্বরসহ সব বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন বলে ওই নারীকে জানান। আসিফের কর্মস্থল চট্টগ্রাম হওয়ায় তিনি একা ওই বাসায় থাকতেন না। সেজন্য আসিফ তাকে মিরপুরে একটি হোস্টেল ঠিক করে দেন। বৃহসপতিবার রাতে আসিফ চট্টগ্রাম থেকে আসলে, তখন তারা বাসায় থাকতেন।

ওই নারী জানান, কখনও শনিবার আবার কখনও রোববার সকালে আসিফ ইমতিয়াজ চট্টগ্রাম চলে যেতেন। দুই মাস থাকার পর মিরপুরের বাসাটা তারা ছেড়ে দেন। পরে পরিচিত একজনের মাধ্যমে বনশ্রীতে একটি সাবলেট নেন। সেই বাসা পাওয়া পর্যন্ত তারা দুজন বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকতেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে ছয় দিনের প্রশিক্ষণে আসিফ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যান। ওই ছয় দিন তারা বিজয়নগরের একটি অভিজাত হোটেলে ছিলেন।

এরপর বনশ্রীতে বাসা পাওয়ার পর প্রতি সপ্তাহেই কখনও দুই দিন আবার কখনও বেশি দিন একসঙ্গে থাকতেন তারা। বিউটি পার্লার করার জন্য আসিফ ওই নারীকে ট্রেড লাইসেন্সও করতে বলেন। কথামতো ময়মনসিংহে একটি ট্রেড লাইসেন্সও করেন ওই নারী। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেবেন এমন কথা বলে ওই নারীর ছবিসহ পাসপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স এবং তার মায়ের ছবিও নেন আসিফ।

ওই নারী বলেন, কিন্তু সেগুলো দিয়ে আসিফ ব্যাংক ঋণের কোনো ব্যবস্থা না করে চট্টগ্রামের কদমতলীর স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট করেন। শুরুতে তিনি এটা জানতেন না। একদিন বাসায় আসিফের মানিব্যাগে ওই নারী তার নামে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের একটি ডেবিট কার্ড দেখতে পান। তবে তিনি আসিফকে এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেননি। কারণ বললেই আসিফ তাকে গালিগালাজ ও মারধর করবেন এমন আশংকা ছিল তার। পরে ব্যাংকে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এক মাসে ওই অ্যাকাউন্টে ২০ লাখ টাকা লেনদেন করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এডিসি (এলএ) আসিফ ইমতিয়াজ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই নারী লিখেছেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমি গর্ভবতী হই। এটা তাকে জানানোর পরই আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে। গর্ভের শিশু নষ্ট করার জন্য প্রচণ্ড চাপ দেয়। এক সপ্তাহ পরই সে আমাকে ফেসবুকসহ সব যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দেয়। তার সঙ্গে আমি কোনো যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। নানাভাবে তাকে ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। পরে চট্টগ্রামে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেও পারিনি। পরে ডিসির মাধ্যমে সাক্ষাৎ করে ঘটনা বলার পর তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন এবং একজন এডিসিকে দায়িত্ব দেন।

ওই নারী বলেন, এডিসি তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। আমি সব ডকুমেন্ট দেয়ার পর এডিসি তাকে চট্টগ্রাম থেকে বদলির করার সুপারিশ করেন। তার সুপারিশমতে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে বদলি করা হয়। এরপর থেকে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আর জানুয়ারি মাসে তার সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাৎ হয়। এরপর সে দেখা করতে চাইলেও আমি করিনি।

অভিযোগে ওই নারী বলেন, আমার আশঙ্কা ছিল, তার সঙ্গে দেখা করলে তিনি জোর করে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করবে, না হয় আমাকে মারধর করবে। এখন পর্যন্ত নানাভাবে তিনি (ইউএনও) আমাকে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তার ভয়ে আমি ঢাকায় নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় থাকতে পারছি না। একেক দিন একেক জায়গায় দিন যাপন করছি।

ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রোববার এই বিষয়টি নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বসার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগকারী ওই নারী অসুস্থ থাকায় তা আর হয়নি। আমরাও আছি খুবেই লজ্জার মাঝে এই বিয়ষটি নিয়ে। উপজেলাবাসী তাকে আর চায় না। তার শাস্তি দাবি করছে। আর তাকে এখানে রাখলে উপজেলার সুনাম নষ্ট হবে। বদলি হলে আমরাও এই দুর্নাম থেকে বাচঁব।

বর্তমানে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক এমরান হোসেন ঘটনাটির তদন্ত করছেন। তিনি জানান, তদন্ত কাজ চলছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবেই বিব্রতকর অবস্থার মাঝে আছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

-বাংলাদেশ জার্নাল

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর