সংবাদ প্রকাশের পর ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

সংবাদ প্রকাশের পর বগুড়ার বগুড়ার ধুনট উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্তের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তবে অভিযানের সংবাদ পেয়ে ভূমিদস্যুদের ক্যাডার বাহিনী পালিয়ে গেলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকটি ড্রেজার মেশিনের সরঞ্জামাদি ধ্বংস করেছে।

এরআগে গত ২৮, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ধুনটে অস্ত্র উঁচিয়ে যমুনার চরাঞ্চলে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন: নিরব ভূমিকায় প্রশাসন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদটি দৃষ্টি গোচর হওয়ায় বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত।

জানাগেছে, ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। প্রতিবছর নদী ভাঙনের কারণে ওই ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রামের শত শত একর ফসলী জমি ও শত শত পরিবারের বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে বহুবছর আগেই। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষজন যমুনা নদীর শহড়াবাড়ী বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, শিমুলবাড়ি, বানিয়াজান, বৈশাখী ও রাধানগর চর সহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করে আসছে। আবার যখন যমুনার চর জেগে ওঠে তখন এসব মানুষজন চরাঞ্চলে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।

কিন্তু গত ১০/১৫দিন ধরে ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বৈশাখী, রাধানগর ও শহড়াবাড়ি চরের প্রায় শত শত একর ফসলি জমিতে জোর করে একাধিক ল ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছিল স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তারা ৫টি ল ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি বড় বড় নৌকায় আনলোড করে তা বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে।

যমুনা নদীতে ভাসমান নৌকায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ওদের ভয়ে প্রতিবাদ করারও সাহস পায়নি এসব ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষজন। স্থানীয় এলাকাবাসী এসব বিষয়ে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। এসব বিষয় নিয়েই সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন গণমাধ্যম।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, এসব ভূমিদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন এক প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের বউ ও তার ভাই। তারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আদায় করে আসছিলেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের বিষয়ে বৈশাখী চরের আজিজার রহমান বলেন, এক প্রভাবশালী চেয়াম্যানের বউ ও তার ভাইয়ের নেতৃত্বে ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা মানুষের ফসলী জমি ও চর কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তবে অভিযানের সংবাদ পেয়েই ভূমিদস্যুরা পালিয়ে যায়। হয়তো তারা আবারও কয়েকদিন পর থেকে বালু উত্তোলন করেই যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, শহড়াবাড়ী গ্রামের মাহমুদুল, আল-আমিন, ফরিদ উদ্দিন, গোসাইবাড়ি গ্রামের টিন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন, দোয়াতপুর গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন ও বৈশাখী গ্রামের ভুলু মিয়া সহ আরো কয়েক ব্যক্তি ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছে।

তারা আরো জানান, এদের সবার কাছেই প্রায় দেশীয় অস্ত্র থাকে। তারা অস্ত্র উঁচিয়ে নদীতে মহড়া দিয়ে চর কেটে বালু উত্তোলন করে নৌকায় করে কাজিপুরে মেঘাই ও ঢেকুরিয়া বাজারের বালু মহালে বিক্রি করে। তবে এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করেন কয়েক রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালী এক চেয়ারম্যানের বউ ও তার ভাই। তবে এসব বিষয়ে কেউ জানলেও কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, সংবাদ পেয়ে যমুনার চরাঞ্চলে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কাউকে না পাওয়ায় বালু উত্তোলনের কয়েকটি ড্রেজার মেশিনের সরঞ্জামাদি ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর