‘তারুণ্যের বিজয় প্রত্যাশা’

বিজয় মানে আনন্দ, বিজয় মানে প্রেরণা। বিজয় এক স্বর্গীয় অনুভূতির নাম।ডিসেম্বর মাস এলেই বিজয়ের মহাউল্লাসের কথা মনে পড়ে যায়। বছর ঘুরে আবার এসেছে বিজয়ের মাস। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। বিজয় অর্জনের পর বাংলাদেশিরা বিশ্বের বুকে এক অপরাজেয় জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

১৬ ডিসেম্বর বারবার আসে আমাদের ত্যাগ, তিতিক্ষা, শক্তি ও মুক্তির নতুন দীক্ষায় জাগিয়ে দিতে। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিল দেশের তরুণ সমাজ। তাই বিজয়ের এ মাসে তরুণ সমাজের প্রত্যাশা অনেক। বিজয়ের মাসে তরুণরা কী প্রত্যাশা করেন? কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণদের প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন– বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো: ইমদাদুল ইসলাম।

স্বাধীনতার অর্ধশত বছরেও আমরা পরিপূর্ণ স্বাধীন হতে পারি নি! একথা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। বহুবছর পরে এসেও আমি আমার স্বাধীনতা কে খুঁজছি। এখনো মায়েরা নিরাপদ চলাফেরা করতে পারে না। এ দুঃখে দিনাতিপাত করেছি কুড়িটি বছর। বিজয়ের মাসে লাখো শহীদের দেশ এবং অসংখ্য মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ী ভূমি নিয়ে আমার প্রত্যাশা হলো, আমাদের অর্জিত সেই বিজয়কে নিয়ে ভাবা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষায় পরিণত করা। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের আত্মিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করা। হিংসা, বিদ্বেষ এবং অপ-রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সকল কিছুর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ তা ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই হোক এই বিজয় মাসের অঙ্গীকার।

ছিদ্দিক ফারুক, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিজয় শব্দের মধ্যে পাওয়ার আনন্দ আছে । শত্রুকে পরাজিত করে, একটা স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার সফলতা নিহিত এই বিজয় শব্দে। যে রাষ্ট্রে থাকবে মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধার সম বন্ঠন, স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করার অধিকার। কিন্তু আসলে কি আমরা এই সুযোগ সুবিধা গুলা পুরোপুরি পাচ্ছি?

স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও আমরা এগুলা নিশ্চিত করতে পারি নি। সমাজের উচ্চ শ্রেণী থেকে শুরু করে একেবারে নিম্ন শ্রেণি পর্যন্ত সকল মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে ধারণা লাভ করে, একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে পারি।

তারেক জামিল, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। একটি জাতি, একটি দেশ একটি নতুন মানচিত্র এবং হাজারো নতুন স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বেরবুকে মাথা উঁচু করে পথচলা শুরু। বাঙ্গালীজাতীর হাজারো আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ। তবে স্বাধীনতার এতবছরের যে স্বপ্ননিয়ে এদেশের মানুষ যুদ্ধ করছিলো, অনেক ক্ষেত্রে সেটা অজন করা সম্ভব হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে যে সংবিধান আমরা পেলাম যার মূলভিত্তি ছিল- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা কিন্তু রাষ্ট্র আজও সেটা সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। স্বাধীনতা ৪৯ বছরে বাংলাদেশ সামাজিক এবং অথনৈনিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেলেও সেটা যথেষ্ট বলে আমার মনে হয় না।

তরুন প্রজন্ম আশা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাবে এই দেশ, এই দেশে থাকবেনা দুর্নীতি, ধর্ষণ, সামাজিক অবিচার, রাজনৈতিক অস্থিশীলতা, ধমান্ধতা, খুন, গুম, চুরি, বেকারত্ব, ছিনতাই, ডাকাতিমত অপরাধ। বিজয়ের এই মাসে আমরা প্রতিজ্ঞা করি, যে স্বপ্ন নিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই স্বপ্ন পুরন করাই হোক বিজয়ের মাসে আমাদের অঙ্গিকার।
রেজাউর রহমান রাজু, শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

বিজয় ফুটে উঠুক তারুণ্যের স্বপ্নে। বায়ান্নর ভাষা আর একাত্তরের দেশ এই দুটি মিলে হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা আর স্বাধীনতা মানে বিজয়। বিজয়ের মাস বাঙ্গালির জীবনে সব চেয়ে বড় একটি অর্জনের মাস।এই মাস আমাদের বিজয়ের মাস হলেও এর পিছনের গল্পটা মোটেও মসৃণ ছিলো না। যার জন্য সাত কোটি বাঙ্গালিকে বেচে নিতে হয়েছিল সংগ্রামের পথ, লাল সবুজের পতাকার জন্য দিতে হয়েছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্ত,যে মানচিত্রের জন্য হারাতে হয়েছে দুই লাখ মা-বোনকে।

যে স্বপ্ন পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী শেষ করে দিতে চেয়েছিলো ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে সে স্বপ্ন কখনো শেষ হতে পারে না। বায়ান্ন থেকে একাত্তর, সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে তারুণ্যের অবদান কম ছিলো না৷ তা আজও কম হবে না৷ আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে। কাজ করতে হবে বেকারত্ব গুছাতে। টেকনোলজিকে কেন্দ্র করে গ্লোবাল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেকেও দেখতে হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন।

রাজু আহমেদ, শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। সংগ্রাম আর ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে ৪৯ বছর আগে বাংলাদেশে বিজয়ের লাল সূর্য উদিত হয়েছিল। তবে সুদীর্ঘ এ যাত্রায় পাওয়া না পাওয়ার ভাবনায় হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা কিংবা অন্যের উপর প্রত্যাশা করে হাতগুটিয়ে ঘরে বসে থাকা কোনো সমাধান হতে পারে না। মোদ্দা কথা, একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে তরুণদের আশাবাদী হতে হবে। ছোট্ট এই দেশের সীমিত সম্পদ আর বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সে দাঁড় উন্মোচন করতে হতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে, করতে হবে বাস্তবায়ন। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে মনে প্রানে ধারণা করতে হবে। মোটাদাগে এসকল কিছুর মেল বন্ধন ঘটাতে পারলেই কেবল একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মান সম্ভব।

মোস্তাফিজ রাকিব, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

‘বিজয় মানে জয়জয়কার, সাফল্য, আগ্রগতি আর জিত, এই ধারা অব্যাহত রেখে সকলের সাথে প্রীত।’
বাংলাদেশের বিজয়ের ৪৯ বছরে এসে বিজয়ের মাসে তরুনরা প্রত্যাশা করে এক সহনশীল ও উদার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দূর্নীতি মুক্ত দেশ ও জাতী, বঙ্গবন্ধুর ন্যায় এক বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, মাদক মুক্ত এক সুশিক্ষিত সমাজ। যেখানে বাংলাদেশকে দেখাবে মেঘের আকাশে প্রোজ্জ্বলিত একটা সাদা নক্ষত্রের মতো। যেখানে তরুনরা রাজনীতিতে যাবে অর্থনৈতিক লোভে নয় বরং মানুষের কল্যানে কাজ করার উৎসাহে। সকল পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত এক সোনালি বাংলাদেশ যেখানে আধুনিকতায় মানুষ ক্লান্ত হবে না, হবে না কেউ দেশদ্রোহী। যেই দেশে বৃষ্টির রাতে পলিথিন মুড়া দিয়ে রাস্তার পাশে ঘুমতে হবে না কাউকে। এমনই এক স্বাধীন সাবলম্বী বাংলাদেশ পাওয়াই একবিংশ শতাব্দীর তরুনদের প্রত্যাশা।

আলী হোসেন, শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর