নষ্ট হচ্ছে ডাক বিভাগের ৯২ কোটি টাকার ভবন

দৃষ্টিনন্দন ডাকভবন নির্মিত হয়েছে নগরীর শেরেবাংলা নগরে। এই দৃষ্টিনন্দন ডাকভবনটিই নতুন ডাকবিভাগের সদর দফতর।

সহজেই সকলের দৃষ্টি কাড়ে ডাকবক্সের আদলে নির্মিত লাল ভবনটি । এরই মধ্যে ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৯২ কোটি টাকা খরচ করে। তবে বছর পেরিয়ে গেলেও উদ্বোধনের কোনো খবর নেই। রক্ষণবেক্ষণ ঠিকমতো না হওয়ায় এরই মধ্যে ভবনের ভিতরের চেহারা হতে চলেছে নষ্ট।

এই দৃষ্টিনন্দন ডাকভবনটি ১৪ তলা বিশিষ্ট। ১৪ তলা বিশিষ্ট ভবনে রয়েছে দু’টি বেজমেন্টসহ মিলনায়তন, সভাকক্ষ, সার্ভার, ডাক জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। ডাক ভবনের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রায় পৌনে ১ একর জমির ওপর। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভবনটি হস্তান্তর করে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এই নান্দনিক ডাক ভবনের প্রধান ফটককে ঝুলছে তালা। অযত্নে ভবনের নান্দনিক দেয়ালে জমেছে ময়লা।কলাপসিবল গেট দিয়ে দেখা যায় পানির ফোয়ারা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অনেক খোঁজাখুজির পর ১৪তলার বিশাল এ ভবনে পাওয়া যায় দু’জনকে। এদের মধ্যে একজন রিপন হোসেন অন্যজন সজল চন্দ্র দাশ । ৯২ কোটি টাকার এইভবনটি দেখভাল করার জন্য দৈনিক ৩শ টাকা হাজিরা পায় তারা। সজল এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের বাসায় কাজ করতেন।

সজল চন্দ্র দাশ বলেন, আমরা ডাক ভবন পাহারা দিচ্ছি। প্রায় চার বছর এখানে কাজ করি। প্রথমে খুব তোড়জোড় করে নির্মাণ কাজ হয়েছে। রাত-দিন কাজ চলেছে। অথচ প্রায় দুই বছর হয়ে গেলো উদ্বোধন হচ্ছে না। আমরা মালির কাজ করি, উদ্বোধন কবে হবে বলতে পারবো না।

অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ডাক ভবন সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন । রাজধানীর গুলিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও)। তাই জিপিও ভবনটি ভেঙে সেখানে সবুজ পার্ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

ভবনটি প্রথমে ৮ তলা নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীসময়ে তা দাঁড়ায় ১৪ তলায়। বাজেটও বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯২ কোটি টাকায়। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ অর্থ।

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্পের তদারকি করে।

আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর কাছে ডাকঘর কেন উদ্বোধন হচ্ছে না এমন প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, আইএমইডির কাজ হচ্ছে প্রকল্পের অগ্রগতি দেখা ও নির্মাণ ত্রুটি দেখা। প্রকল্পের কাজ ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে কিনা সেটা দেখভাল করা। কিন্তু ডাক ভবন উদ্বোধনের বিষয়ে আইএমইডি ভূমিকা রাখতে পারে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ভবনের স্থাপত্য নকশা করেছেন স্থপতি কৌশিক বিশ্বাস। ভবনে যাতে ডাকঘরের একটা আবহ থাকে সেই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ডাকভবনের নিচতলায় বিশাল বিশাল ডাকটিকিট দেয়ালে খোদাই করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, সাত বীরশ্রেষ্ঠ-জাতীয় বীরদের অনেকেই আছেন সেখানে।

ডাক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিনের কাছে কবে নাগাদ ডাক ভবন উদ্বোধন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন ডাকভবন উদ্বোধনে প্রস্তুত। ডাকভবন নির্মাণ হলেও সামনের রাস্তার সমস্যা ছিল। কোভিড-১৯ এর কারণে আনুষঙ্গিক কাজ দেরি হয়েছে। ডাকভবনে একটি মিউজিয়াম আছে। সারাদেশ থেকে মিউজিয়ামের জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব কারণেই মূলত নির্মাণ কাজ শেষ হলেও উদ্বোধনে দেরি হচ্ছে।

বার্তাবাজার/এম.এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর