গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশবাসী চিনেছিলো তারামন বিবিকে

সময়টা ১৯৭১ সাল, চারিদিকে চলছে পাক-বাহিনীর তাণ্ডব। প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে, যে যেদিকে পাড়ছে চলে যাচ্ছে। পাক-শত্রুদের মোকাবেলা করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে ভাগ করা হলো ১১টি সেক্টরে। সেই ১১ নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের কীংবদন্তি হয়ে উঠলেন এক নারী তিনি হলেন বীরপ্রতিক তারামন বিবি।

স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, বীরপ্রতীক তারামন বিবি মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ শরীরে পায়খানা মেখে পাগলের অভিনয় করে পাক-বাহিনীর ক্যাম্পের সামনে থেকে তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদের গতিবিধির উপর নজর রাখতেন। গোয়েন্দা গিরি পাশাপাশি তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্না করতেন আবার স্টেশনগান ও রাইফেল হাতেও যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। তার গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে রাজীবপুরের কোদালকাটিসহ অনেক স্থানে পাকবাহিনীদের পরাস্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা ।দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশ সরকার তাকে ভূষিত করে বীর প্রতীক খেতাবে। দেশ স্বাধীন হবার পর শুরুতে এই অকুতোভয় নারীকে কেউ চিনত না। দীর্ঘ ২৪ বছর অভাব অনটনের মধ্যে কাটত কীংবদন্তি এই নারীর জীবন। সবাই ভুলে গিয়ে পর করে গেলেও এই নারীকে পর করেননি তার স্বামী আব্দুল মজিদ।

স্বামী আব্দুল মজিদ সাধ্যমত স্ত্রীর পাশে থাকতেন। কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক সফি খান ও সাংবাদিক আব্দুল খালেক ফারুক এনাদের দুজনের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, দীর্ঘদিন যক্ষা রোগে আক্রান্ত ছিলেন বীরপ্রতীক তারামন বিবি।

এরপর তারামন বিবির খোঁজ করার জন্য ১৯৯৪ সালে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছে পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে চিঠি দেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও তৎকালীন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষক বিমল কান্তি দে। তার চিঠি পেয়ে প্রথম খোঁজ দেন কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বাসিন্দা অধ্যাপক আব্দুর সফুর ফারুকী। তিনিই প্রথম স্থানীয় পত্রিকা সাপ্তাহিক গণকথায় তুলে ধরেন তারামন বিবির বীরত্বের কথা।

এরপর জেলায় সবাই চেনেন তারামন বিবিকে। পরবর্তীতে জেলার স্থানীয় দুজন সাংবাদিক পরিমল মজুমদার ও মোন্নাফ আলী জাতীয় পত্রিকা ভোরের কাগজে তুলে ধরেন বীর প্রতীক তারামন বিবিকে। সারাদেশের মানুষ জানেন মুক্তিযুদ্ধের এই কীংবদন্তি নারীকে।

১৯৯৫ সালে তার খোঁজ মেলার পর প্রধানমন্ত্রী তার হাতে বীরপ্রতীক খেতাব তুলে দেন সম্মানিত করেন। তারামন বিবির বীরত্বের গল্প এখন তার জন্মভূমি কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রাম ছাড়িয়ে সারাদেশের মানুষদের কাছে ছড়িয়েছে। সারাদেশের মানুষদের মুখে মুখে তার বীরত্বের কথা থাকলেও তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া বীর সেনানী ফুসফুসে সংক্রমণে মারা যান গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিন।আজ তাঁর ২য় মৃত্যূবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

বার্তা বাজার/এম.এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর