চাঁদপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি: অচল স্বাস্থ্যসেবা

‘ভ্যাসকিন হিরো সম্মান, স্বাস্থ্য সহকারীদের অবদান’ এই শ্লোগানে নিয়োগবিধি সংশোধন করে বেতনবৈষম্য নিরসনসহ চার দফা দাবিতে গত চারদিন ধরে কর্মবিরতি পালন করেন চাঁদপুরের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা। এতে করে জেলার টিকাদান কর্মসূচিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা প্রতাশীরা।

যদিও এ খাতের নেতৃবৃন্দরা বলছেন, নিয়োগবিধি সংশোধনসহ ক্রমানুসারে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন গ্রেড ১৬ তম থেকে যথাক্রমে ১১, ১২, ও ১৩তম গ্রেড সংশোধন করে জিও জারি না করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবেন কর্মচারীরা।

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু করে জেলার প্রতিটি উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে চার শতাধিক স্বাস্থ্য সহকর্মীরা চলমান এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

সেবা প্রত্যাশী মোসা. রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমি তিন দিনের বাচ্চাকে নিয়ে টিকা দিতে এসে দেখি হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম বন্ধ। বাহিরে প্রচণ্ড শীত। এই পরিস্থিতি মধ্যে বাচ্চাকে নিয়ে বারবার বের হওয়া সম্ভব না।’ হালিমা বেগমের মতো টিকা দিতে শিশু নিয়ে এসে আরও অনেকেই দুর্ভোগে পরেছেন।

জেলা হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেওয়ান মাসুদ রহমান বলেন, ১৯৯৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০১৮ ও ২০২০ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর লিখিত প্রতিশ্রুতি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১১, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১২ এবং স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৩ তম গ্রেড প্রদান করে নিয়োগবিধি সংশোধন করতে হবে।

চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় সকল স্বাস্থ্য কর্মীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। আমরা চাই না আমাদের কর্মবিরতির কারণে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হোক। তাই অচিরেই আমাদের এই যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

মতলব দক্ষিণে উপজেলা উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর খোরশেদ আলম, উপজেলা হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক নয়ন সরকার সহ বিরতিতে অংশ নেয়া বক্তারা জানান, ‘১৯৭১ সালো স্বাধীনের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গঠনের পর প্রত্যেক উপজেলায় স্বাস্থ্য-সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়। প্রত্যেক ৪ হাজার জনগনের জন্য ১ জন স্বাস্থ্য-সহকারী নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে ৬ হাজারের অধিক জনগনের মাঝে আমরা সেবা দিচ্ছি”।

১৯৭৯ সালে ইপিআই শুরু হওয়ার পর ১০ টি মারাত্নক সংক্রমিত রোগ (যক্ষা, পোলিও, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, নিউমোনিয়া, হিমোপাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, হাম ও রুবেলা টিকা সেবা রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান উপেক্ষা করে আমরা দিয়ে আসছি। যার দরুণ সম্প্রসারিত শ্রেষ্ট টিকা দানকারী দেশ হিসেবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করেছে।

‘২০১৯ সালে জাতিসংঘের ৭৪ তম অধিবেশনে ভ্যাকসিন সফলতায় প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন হিরো পুরষ্কার পেয়েছিলো’। এইসব অর্জনের মূল কারিগর আমরা। কিন্তু আমরা বরাবরের মতো অবহেলিত। যেখানে পশু চিকিৎসক ১১তম গ্রেডে আছেন,আর আমরা মানুষের সেবা দিয়েও ১৬ তম আছি’। যা খুব দুঃখজনক এবং চরম হতাশার। তাই ‘আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট চলবে।’

প্রসঙ্গত, দেশের ২৬ হাজার স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে ডাকা কর্মবিরতির ফলে সারাদেশে এক লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে প্রতিদিন ২০ হাজার মা ও শিশু টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন বলেও জানান আন্দোলনকারী স্বাস্থ্য সহকারীরা।

 

বার্তা বাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর