শুরু হলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

আজ থেকে শুরু বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই যুদ্ধের চূড়ান্ত ফল আসে এই মাসে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদের প্রাণ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা।

ডিসেম্বর মাসের আগে থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে পিছু হটতে থাকে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া সুসজ্জিত বাহিনী মুক্তিকামী মানুষের কাছে আত্মসমর্পণ করে এ মাসের ১৬ তারিখে। নতুন ইতিহাস রচনা করে বাঙালি। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।

বাঙালি জাতির ইতিহাসে অনন্য গৌরবময় ডিসেম্বরে বিজয় অর্জনের পেছনে রয়েছে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত। পশ্চিম পকিস্তানের সামরিক জান্তাদের শোষণ-বঞ্চনা এবং বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়ে আসছিল বাংলার মানুষ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দেন বাংলার স্বাধীনতার।

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- ১৮ মিনিটের তার এই কালজয়ী ঘোষণার মধ্য দিয়ে মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠিত হতে থাকে বাংলার মানুষ।

এ অঞ্চলের বঞ্চিত শোষিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেদিন বন্দুকের ক্ষমতাবলে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। আলোচনার টেবিলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ পরিত্যাগ করে তারা বন্দুকের নল আর কামানের গোলা বেছে নিল সমাধানের উপায় হিসেবে। যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হলো আমাদের ওপর। ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে হত্যায় মেতে উঠল অস্ত্রের জোরে বলীয়ান পশ্চিম পাকিস্তানের তৎকালীন হঠকারী সামরিক জান্তা। শুরু হলো মুক্তির লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। ৯ মাসের অসম যুদ্ধ শেষে এ ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা নামক পরম পাওয়া ধরা দেয় এ দেশের মানুষের কাছে।

তবে বাংলাদেশের এ সগৌরব অভ্যুদয় মানতে পারেনি অনেকেই। একাত্তরে যখন বাঙালি স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে লড়াই করছে, তখন কিছু মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তাদের সহায়তা করেছে। এই স্বল্পসংখ্যক মানুষ নিয়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয়েছিল রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই বাহিনীর সদস্যরা ত্রাসের সঞ্চার করেছে। হত্যা করেছে দেশের সূর্যসন্তানদের।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর দেশের ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনাবিধুর একটি দিন। জাতির বিজয় যখন সুনিশ্চিত তখনই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা হিসেবে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা হাতে নেয় পাকবাহিনী। এই হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম এক বর্বর ঘটনা যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। এ দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ও নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর। ওই দিন বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী রেসকোর্স ময়দানে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। জাতি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ত্যাগ ও আপোষহীন নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

 

বার্তা বাজার/এএস

 

 

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর