ইউএনও’র সাথে অসদাচারণ, গালিগালাজ করে বহিষ্কার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

লালমনিরহাটে উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন এর সাথে অসদাচারণ, দুর্ব্যবহার,অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ বিভিন্ন অভিযাগে আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ কে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিষদের আর্থিক ক্ষমতাও প্রদান করা হয়েছে।

আজ সোমবার(৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নুমেরী জামান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখিত,ফারুক ইমরুল কায়েস উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর থেকে পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরে আর্থিক বিষয়ে অনৈতিক দাবী প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে আসছেন।এছাড়া পল্লী উনয়ন কর্মকর্তা নুরেলা আকতার এর সাথে অশোভন আচরন প্রদর্শন করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের এসমস্ত কর্মকান্ড উপজেলা পরিষদের কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে যাতে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন অচলাবস্থার সৃষ্টি ও জনস্বার্থ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে।এ সমস্ত কারণে তার এ পদে বহাল থেকে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা রাষ্ট্র বা পরিষদর স্বার্থের পরিপন্থী। এ কারণে উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (উপজেলা পরিষদ সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা সংশোধিত এর ১৩(খ)(১)ধারা অনুসারে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক ইমরুল কায়েসকে আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

ছবি- বার্তা বাজার

উল্লখ্য যে, গত ১৩ নভেম্বর প্রশাসনের সতেরা জন কর্মকর্তা হুমকী,অসদাচরণসহ নানান অভিযাগ এনে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের নিকট প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য একটি অভিযোগ দেন।গত ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা চলাকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের অংশ দাবী করেন। চেয়ারম্যানের এই কথার প্রেক্ষিতে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বিধি মোতাবেক তালিকা প্রনয়নের কথা বললে ক্ষিপ্ত হয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন উপজলা চেয়ারম্যান।এর কিছুক্ষণ পর ইউএনও অফিস সংলগ্ন করিডোরে লাগানো সিসি টিভি ক্যামেরাটি উপজেলা চেয়ারম্যান তার একজন ব্যক্তিগত লোক দিয়ে খুলে ফেলতে থাকেন।বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টিতে এলে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে সিসি টিভি ক্যামেরা খোলার দৃশ্যটি মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে গেলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উত্তেজিত অবস্থায় অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন। এ সময় চেয়ারম্যান ইউএনও কে বলতে থাকেন ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দিব’। এসময় চেয়ারম্যান আরো বলেন, উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি। এ অবস্থায় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা চেয়ারম্যানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে উত্তজিত হয়ে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে ‘ঘার ধরে উপজেলা পরিষদ থেকে বের করে দিব’ বলে হুমকী দেন।এসময় অন্যান্য অফিসাররা এর প্রতিবাদ জানালে তাদেরকেও গালিগালাজ করেন চেয়ারম্যান।খবর পেয়ে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাগণ লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

এবিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান,স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্যানেল চেয়ারম্যান-১ কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বার্তা বাজার/শাহরিয়া হৃদয়

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর