মেজ খোকন থেকে এমপি জগলুল হায়দার

শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: এস,এম জগলুল হায়দার। যিনি এখন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-০৪ আসনের সংসদ সদস্য। উপজেলার নকিপুর গ্রামের এক ছোট প্রতিবাদী চরিত্র পর্যায়ক্রমে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে সম্পুর্ন আলাদা এবং স্বতন্ত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন হুদার নেতৃত্বে গেরিলা ট্রেনিং চলছিলো। সেসময় মাত্র ৯ বছর বয়সে ট্রেনিং স্থলে গিয়ে হাজির হন জগলুল হায়দার। ক্যাপ্টেন হুদা তাকে জিজ্ঞাসা করেন “এই ছেলে তুমি এখানে কেন এসেছো।” ছেলেটি প্রতিত্তোরে জানায় সে মুক্তিযুদ্ধে যেতে চায়। ক্যাপ্টেন হুদা তার কাছে প্রশ্ন করেন, “তুমি খান সেনা দেখেছো? ছেলেটি জানায় হ্যা দেখেছি। বলোতো কেমন। অনেক বড় বড় দেহের মানুষ। তুমি কি তাদের সাথে যুদ্ধ করতে পারবে? হ্যাঁ পারবো।” তখন ক্যাপ্টেন হুদা শিশুটিকে বুক চাপড়ে কোলে নিয়ে ট্রেনিংরত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জানতে চান, ” এই টুকু ছেলে মুক্তিযুদ্ধে যেতে চায়, আর তোমরা পারবে না। সবাই সমস্বরে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন।”

এ দেশীয় সংস্কৃতিতে আমরা সাধারণত এটাই দেখতে অভ্যস্থ যে সংসদ সদস্য কিংবা প্রতিমন্ত্রী বা মন্ত্রী হওয়ার পর প্রোটোকল পেয়ে তারা বদলে যান। শরীরের লেগে থাকা ধুলা-বালির কথা বেমালুম ভুলে তারা নিজেকে আমজনতার কাতারে ভাবতে সংকোচবোধ করেন (যদিও ব্যতিক্রম আছে, তবে কদাচিৎ)। কিন্তু গতানুগতিক সেই ভাবধারার বাইরের জগতের মানুষ বলেই তিনিই আজকের লেখার প্রতিপাদ্য। প্রভাবশালী সরকার দলীয় এমপি হয়েও তিনি যেভাবে নিজেকে গণমানুষের মুখপাত্রে পরিণত করেছেন তা অন্য যে কারও জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এমপি হয়ে যেন নিজেকে উজাড় করার লড়াইয়ে নিয়োজিত জগলুল হায়দার। সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইতোমধ্যেই নিজেকে আলাদা উচ্চতায় নিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। রাস্তা-ঘাট সংস্কার, শান্তিপুর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়াসহ সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নেয়ার কাজ বহু করেছেন তিনি। গত চার বছরে এই সাংসদের ভুমিকায় প্রায় সকলেই বিমোহিত।

দলমত, শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সকলেই তার কাছে পৌঁছানোর সমান সুযোগ পান। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সকলেরই প্রতি তার ‘সাম্য নীতি’র প্রতিফলন ঘটছে।
৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে তিনি শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে এখন অনেকটা নিজেকে আমজনতার প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে গোটা নির্বাচনী এলাকার সর্বসাধারণই তার সেবা পাচ্ছেন বলে অভিমত সাধারণ মানুষের।

১৯৬৩ সালের ২৯ জানুয়ারি জন্ম নেয়া এস, এম জগলুল হায়দারের শিক্ষা জীবনের শুরু শ্যামনগর সদরের হায়বাদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার দাদা কাশিমাড়ি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট এবং নানা আমৃত্যু ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, তৎকালীন বৃহত্তর খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে তার রক্তে রাজনীতি এবং মানব সেবার গুণ মিশে ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাড়ির নিকটস্থ নকিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। নকিপুর হরিচরণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও পিতার (অবসর প্রাপ্ত সিভিল সার্জন) কর্মস্থলসূত্রে কালিগঞ্জের মোজাহার মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত। পরবর্তীতে নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি পাশ করে কেশবপুর কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন। কিন্তু পরবর্তীতে আবারও কালীগঞ্জে ফিরে এসে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে সেখান থেকেই এইচএসসি ও স্নাতক পাঠ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

শিশু বয়স থেকে প্রত্যেকেরই চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা শিক্ষক হওয়ার মত লক্ষ্য থাকলেও জগলুল হায়দার ছিলেন তার ব্যতিক্রম। তিনি ছোটকাল থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একজন আদর্শ রাজনীতিক হিসেবে গড়ে ওঠার। প্রতিবাদী ভূমিকা দিয়ে অসহায় আর দুর্বল ও শোষিত মানুষের সেবা করার। সে কারণে সেই অল্প বয়স থেকেই এলাকায় তার প্রধান পরিচিতি একজন প্রতিবাদী চরিত্র।

এসএসসি পাশের পর উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথমভাগেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আদর্শ মেনে বেড়ে ওঠা জগলুল হায়দারের প্রিয় ব্যক্তিত্ত্ব তার পিতা সাবেক সিভিল সার্জন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ডাঃ আব্দুল জলিল। খেলাধুলার প্রতি তেমন কোন মোহ না থাকলেও শিশুকাল থেকেই নাট্যচর্চা করতেন তিনি। তবে তার রাজনৈতিক জীবনের অমুল্য সম্পদ যে তার দ্ব-রাজ গলার বক্তব্য- এ কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন জগলুল হায়দার।

নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় প্রতি বৃহস্পতিবারের বিতর্কে তার অংশগ্রহণ ছিল নিয়মিত। এছাড়া সম-সাময়িক জাতীয় রাজনীতিকদের বক্তব্য অনুসরণ করতেন উল্লেখ করে বাগ্মী এ জনপ্রতিনিধির কথায় স্পষ্ট হয় আমজনতার দৃষ্টি আকর্ষণের প্রথম ধাপ ‘বক্তব্য’ এবং দ্বিতীয় ‘পর্যায়’ স্বীয় কার্যক্রম। বিষয়টি অনুধাবন করেই রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বক্তব্যের বিষয়ে বেশ যত্নবান হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন তিনি।
তার বক্তব্যের বিষয়ে সমালোচকদেরও প্রশংসা প্রসংগে তিনি জানান, অধিকাংশ রাজনীতিক গদ-বাধা বক্তব্য দেয়। যা মানুষের হৃদয়গ্রাহী হয় না। যে কারণে তিনি ভিন্নভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। আর পরবর্তীতে নিজ কার্যক্রম দিয়েই তিনি এলাকাবাসীর মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন।
নিজ জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ সময় হিসেবে ২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট’র শাসনামলকে উল্লেখ করেন তিনি। এসময় ডজন ডজন মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে তিনি পলায়নপর জীবনযাপন করেন। পরবর্তীতে সেনা শাসিত তথাকথিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের দুই বছরও তার জন্য সমান দুর্বিসহ ছিল বলেও জানান। যখন রাতে দিনে কখনও তিনি বাড়িতে থাকতে পারতেন না। ভক্ত-শুভাকাংখীরা দল বেঁধে তার অবর্তমানে বাড়ি পাহারা দিত।

১৯৯৮ সালে পুলিশ কর্তৃক নকিপুর বাজারের এক ব্যবসায়ীর উপর হামলার ঘটনাকে উল্লেখ করেন। এসময় জনৈক রবীন স্বর্ণকারকে অন্যায়ভাবে আটকে তার উপর নির্যাতন চালায় পুলিশ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ঐ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এসময় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ব্যবসায়ীদের তিনি নেতৃত্ব দেন। এক পর্যায়ে তার নেতৃত্বে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের আরও ৩৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ একাধিক মামলা করে। তবে ন্যায়ের পথে শুরু হওয়া আন্দোলন সফলতার মুখ দেখায় তিনি স্থানীয় সর্বস্তরের মানুষের মনিকোঠায় জায়গা করে নেন।

প্রায় অভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তিনি ১৯৯৯ সালে। বর্তমান বিজিবি তদানীন্তন বিডিআর সদস্যরা নকিপুর বাজারে অভিযান চালায়। এসময় তিনি ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে উক্ত অভিযানের বিরোধীতা করেন এবং এক পর্যায়ে বিডিআর সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ঐ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন।

এদিকে তার মুক্তির দাবিতে গোটা শ্যামনগরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। তার মুক্তি না মেলার প্রতিবাদে ঐসময় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি পানের দোকান পর্যন্ত বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন। এক পর্যায়ে প্রশাসন জনতার ভাষা বুঝতে পেরে তার মুক্তির ব্যবস্থা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। আর জগলুল হায়দার গোটা শ্যামনগর এর অসহায়, নির্যাতিত ও বঞ্চিত সাধারণ মানুষের নেতা হয়ে ওঠেন।
এক যুগেরও বেশী সময় ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এই সাংসদ শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করেছেন।

টানা দুই বার-এ প্রায় ১৪ বছর শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালনকারী বর্তমান সাংসদ জগলুল হায়দার তার নির্বাচনী এলাকা (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ আংশিক)’র উন্নয়নকেই আপাতত স্বপ্ন মানছেন। সমঅধিকারের ভিত্তিতে উভয় অংশের ভাঙা-চোরা রাস্তা-ঘাট সংস্কার, নুতন নুতন রাস্তা-ঘাট নির্মান করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো, প্রত্যন্ত জনপদেও বিদ্যুৎ সেবা পৌছে দিয়েছেন এবং শিক্ষা প্রসারের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বলেও জানান। প্রোটোকল পেয়ে চলনে-বলনে আচার-আচারণে বদলে যাওয়ার সংস্কৃতি বহু দিনের। তবে এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম জগলুল হায়দার। পরিবারের মেজ ছেলে হিসেবে শিশু বয়স থেকেই মেজ ভাই/মেজ খোকন নামেই তিনি এলাকায় পরিচিত। সংসদ সদস্য হওয়ার পরও তিনি ওই সম্মোধন-ই বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করেন, এলাকার সাধারণ মানুষের কারও স্যার সম্মোধন তাকে অস্বস্তিতে ফেলে।
তিনিই একমাত্র এমপি যিনি সর্বপ্রথম মন থেকে জনগণের সাথে স্বেচ্ছাশ্রমে অংশগ্রহণ করে মাথায় মাটির ঝুড়ি নিয়ে বাঁধ নির্মাণে কাজ করেছিলেন। বাকি এমপিরা তার দেখানো পথে হেঁটেছেন। শ্রমিকদের সাথে একত্রে মাটিতে বসে অাম দিয়ে পান্তা ভাত খেয়েছেন। পথের পাগলিকে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছেন এবং নিজ হাতে উন্নতমানের খাবার মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছেন।

প্রচণ্ড তাপদাহে ভ্যানচালকদের নিজ হাতে রুমাল দিয়ে ঘাম মুছে দিয়ে ডাবের পানি খাইয়ে দিয়েছেন। ঈদে নিজের জন্য কেনা দামী পাঞ্জাবী গরীব ভ্যানচালককে পরিয়ে দিয়েছেন। শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে নিয়মিত মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর জীবনী প্রচার করেছেন। পবিত্র রমজান মাসে পথচারী রোজাদের ব্যাক্তিদের মাঝে ইফতার বিতরণ করেছেন। বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর সফলতা জনগণের মাঝে প্রচার করতে নিজ নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলা, পুরুষদের নিয়ে উঠান বৈঠক করছেন। গরমে তৃষ্ণার্ত পথচারীদের ডাবের পানি, ঠাণ্ডা পানি এবং শরবত খাইয়েছেন। গীতিকবি হওয়ায় বাংলাদেশ বেতার গণমাধ্যমে নিয়মিত বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কবিতা ও গান লেখেন। রমজান মাসে বহু ভিক্ষুকের বাড়িতে ইফতার করেছেন। ঈদের দিনে বাড়ি থেকে মাংস রান্না করে নিয়ে অগণিত ভিক্ষুকের বাড়িতে হাজির হয়ে নিজ হাতে তাদের মুখে তুলে মাংস খাইয়েছেন। শারদীয় দূর্গাপূজায় সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানাতে শাড়ি, লুঙ্গি ও মিষ্টি নিয়ে শত শত হতদরিদ্র হিন্দুদের বাড়ি গিয়েছেন। পথের পাগলকে নতুন পাঞ্জাবী কিনে পরিয়ে দিয়েছেন। চাল, ডাল, মুরগী কিনে অগণিত হতদরিদ্র পরিবার ও ভিক্ষুকের বাড়িতে বাজার নিয়ে নিজে গিয়ে দিয়ে এসেছেন।

এতিমখানার শত শত এতিম শিশুদের মাঝে মৌসুমী ফল বিতরণ করেছেন। আউশ ও আমন চাষ বৃদ্ধিতে কৃষকদের উৎসাহিত করতে নিজে জমিতে লাঙ্গল চষেছেন। ফুটপাতে শুয়ে থাকা গৃহহীন মানুষদের মাঝে উন্নতমানের খাবার বিতরণ করেছেন। এতিমখানার শত শত এতিম শিশুদের বহুবার উন্নত মানের খাবার খাইয়েছেন। পহেলা বৈশাখের দিন হতদরিদ্র মানুষের বাড়িতে চাল, ডাল, মাছ, মুরগী বাজার করে দিয়েছেন। বিভিন্ন হাট বাজারে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনী এলাকার হাজার হাজার মানুষের কোন সমস্যা আছে কিনা জানতে চেয়ে কুশল বিনিময় করেছেন। প্রতিকূল আবহাওয়ায় গভীর রাতেও পায়ে হেঁটে দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে উপকূলবর্তী শত শত পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন। প্রখর রোদে আউশ আমন চাষী বৃদ্ধিতে কৃষকদের উৎসাহিত করতে এমপি হয়েও নিজে জমিতে লাঙ্গল চষেছেন, নিজ হাতে ধান কেটেছেন এবং ধান মাড়াই করেছেন। মশা নিধনে আবর্জনা পরিষ্কার করতে পরিত্যক্ত ডোবায় নেমে কচুরিপনা পরিষ্কার করেছেন।

খুলনা বেতার’র গীতিকার হিসেবে সনদপ্রাপ্ত হওয়া এই সংসদ সদস্য জানান, সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি স্থানীয় সমস্যাবলী চিহ্নিত করে আইনসভায় তা উপস্থাপনের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। আর মা, মাটি ও মানুষের কথা গানের পংক্তিতে সংযুক্ত করার মাধ্যমে এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য চির জাগুরুক রাখার কৌশলের অংশ এবং কৈশরের সংস্কৃতি চর্চার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে না পারায় সময় পেলে কিছু কিছু গান লেখার চেষ্টা করছেন। ইতিপূর্বেকার সাংসদরা অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থান করতো। অনেকে আবার কালে ভাদ্রে বছরে এক-আধবার এলাকায় ফিরতো। কিন্তু জগলুল হায়দার সংসদ অধিবেশনের সময়ে শুধু রাজধানীতে অবস্থান করে।

মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে তার রাজীনিতিতে আগমন ও উত্থান তিনি সেই সব মানুষের পাশে থেকেই তাদের সুবিধা-অসুবিধা, সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে থাকতে চান। যে কারণে অধিবেশনের বাইরের সময় সময়টা এলাকাবাসীর সাথে ভাগাভাগি করার চেষ্টা করে থাকেন। এতে করে স্থানীয় সমস্যা সম্পর্কে তিনি প্রতিনিয়ত অবগত হওয়ার পাশাপাশি তা সমাধানের সুযোগ পাচ্ছেন। স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক সহযোগীতা পেলে নানা সমস্যায় আক্রান্ত উপকুলীয় এই অঞ্চলকে একটি আদর্শ জনপদে রুপান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর