স্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার, বদি’র বদ নজরে টেকনাফ প্রেস ক্লাব !

এবার বদির বদ নজর পড়েছে টেকনাফ প্রেস ক্লাব ভবনের উপর। বদি স্ত্রী শাহীন আক্তার এমপির ক্ষমতা ব্যবহার করে উল্টো দাপট দেখিয়ে প্রেস ক্লাব নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়ে সাংবাদিকদের কোনঠাসায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে বেআইনী নির্দেশ দেন তার চাচা পৌরসভার মেয়রকে। বদির এমন বিতর্কিত আচরনে ক্ষুব্দ পেশাদার সাংবাদিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

প্রেস ক্লাব এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব ছৈয়দ হোসাইন জানান, গেলো সোমবার (২৩ নভেম্বর) বদি দুই দফা থাবা দেন প্রেস ক্লাবে। সকাল ১০টার দিকে প্রথমে গিয়ে নির্মাণকাজে নিয়োজিত এনজিও ফোরামের প্রকৌশলী নাঈমকে অন্যায় ভাবে মারধর করেন। ফের ঘন্টাখানেক পর ক্লাবে গিয়ে নির্মাণকাজের ব্যানারটি ছিড়ে ফেলেন। একপর্যায়ে প্রেস ক্লাব ভবনটি সরকারী খাস জমির উপর দাবী করে এটি অবৈধ এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভেঙ্গে ফেলতে তার চাচা পৌর মেয়র ইসলামকে নির্দেশ দিয়ে চলে যান। এসময় তার স্ত্রী শাহীন আক্তার এমপি, পৌর কাউন্সিলর মৌ. মুজিব ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

নির্মাণ প্রকৌশলী নাঈম, বদি নিজে তাকে ৩-৪টা ঘুষি চড় মারেন এবং কার অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণ করছে জানতে চেয়ে শাসান বলে দাবী করেন।

এ ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে বদি সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করে কমিটির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের পরামর্শ দেন এবং তিনি সহযোগীতা করবেন বলে প্রলোভন দেখিয়ে মারধরের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কৌশল অবলম্বন করেন। অন্যদিকে এঘটনার পর স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক নেতারা স্বোচ্চার হলে একটি ফেসবুক মার্কা কথিত টিভির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উল্টো কুৎসা রটাতে থাকেন। অতচ কুৎসা রটানোকালে প্রদীপের সহযোগী দুটি হত্যামামলার আসামীকে বদির সাথে দেখা যায়। তার অপকৌশল বুঝতে পেরে সাংবাদিকরা সম্মিলিত ভাবে তা মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নেন।

নির্মাণাধীন প্রেস ক্লাব ভবন।

প্রেস ক্লাব এর সাবেক সভাপতি ও টেকনাফ পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, বদির এ অন্যায় কর্মকান্ডের প্রতিবাদে শীঘ্রই কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে। প্রেস ক্লাব সদস্য কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ মনির বলেন, এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত।

প্রকৌশলীকে মারধর ও প্রেস ক্লাবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বদি জানান, তিনি প্রকৌশলীকে মারধর করেননি। পৌরসভার একটি নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে প্রেস ক্লাব ভবন নির্মাণ হচ্ছে দেখে তিনি সেখানে নামেন। ভবন নির্মাণের কোন অনুমতি আছে কিনা জানতে চান।

এদিকে বদি তার স্ত্রী এমপি শাহিন আক্তারের ক্ষমতা অপব্যবহার করে সব কিছুতে নাক গলানো এবং নির্মান কাজের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাওয়াটাও কতটুকু যৌক্তিক সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন সচেতন মহল।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, বদি অতীতে বারবার বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছেন এবং উখিয়া-টেকনাফবাসীর সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন। স্বভাবগত ভাবে তিনি বিতর্কিত কর্মকান্ড করে সবসময় আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন বলে এই ধরনের বেআইনী ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। তবে বর্তমান সরকার সাংবাদিক বান্ধব সরকার উল্লেখ করে সাংবাদিকদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এদিকে প্রেস ক্লাব এর নথির সূত্র মতে, ১৯৯৩ সালে টেকনাফ প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে খাস খতিয়ান ভূক্ত পৌর এলাকায় দুই শতক জমির উপর পরিত্যক্ত একটি সরকারী ভবন প্রেস ক্লাবের জন্য অনুমোদন দেয় উপজেলা প্রশাসন। সেই থেকে ভবনটি প্রেস ক্লাব হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও এনজিও ফোরামের সহায়তায় গত ২৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট একটি সেমিপাকা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম এর উদ্বোধন করেন। নির্মাণ কাজের প্রায় শেষ নাগাদে গত সোমবার বদি এতে হামলা চালান।

 

বার্তা বাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর