সরকারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা, আলুর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনহীন

সহনীয় হয়নি আলুর দাম,দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও মানছেন না কেউ সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ক্রেতার প্রয়োজনীয় এই ভোগ্যপণ্য। ভোক্তাকে এখনও  প্রতি কেজি আলু ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অথচ সরকার খুচরা পর্যায়ে ১ কেজি আলুর দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। অর্থাৎ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ১৫ থেকে ২৫ টাকা বেশি দামে আলু বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না আলুর সিন্ডিকেটকে। সরকার দুদফা আলুর দাম বেঁধে দিলেও তার কোনো তোয়াক্কাই করছে না ব্যবসায়ীরা। সরকারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারে আলুর ব্যাপক সরবরাহ থাকার পরও দাম কমছে না।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্য মতে, প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয় ৮ টাকা ৩২ পয়সা। মৌসুমের সময় ক্রয়মূল্য, হিমাগার ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে হিমাগার গেটে প্রতিকেজি আলুর দাম পড়ে ১৮ টাকা ৯৯ পয়সা। প্রথমে গত ৭ অক্টোবর হিমাগার পর্যায়ে প্রতিকেজিতে ৪ টাকা মুনাফা ধরে আলুর দাম নির্ধারণ করা হয় ২৩ টাকা। শতাংশের হিসাবে প্রায় ২১ শতাংশ মুনাফা। কিন্তু হিমাগার মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা এই মুনাফায় খুশি নয়। তারা আবার গত ২০ অক্টোবর কৃষি বিপণন অধিদফতরের সঙ্গে বৈঠক করে হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম পুনর্নির্ধারণ করে। এ দফায় হিমাগার পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর দর নির্ধারণ করা হয় ২৭ টাকায়। এই হিসাবে পাইকারি পর্যায়েও নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। একইভাবে খুচরা ব্যবসায়ীরাও অতিরিক্ত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আলু থেকেই কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

দ্বিতীয় দফায় সরকার হিমাগার পর্যায়ে ২৭, পাইকারিতে ৩০ এবং খুচরা বিক্রিতে ৩৫ টাকা কেজিতে আলুর দাম বেঁধে দেয়। এই প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের তরফ থেকেই আসে। কিন্তু কোনো পর্যায়ের ব্যবসায়ীই এই দামে আলু বিক্রি করছে না।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, খুচরা বাজারে আলুর দাম দু-তিন দিনের মধ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যের নিচে নেমে আসবে। সে কথা আমলে নেয়নি আলু ব্যবসায়ীরা। তবে তিনি এ-ও বলেছেন, আলুর বাজার অস্থির হয়েছে, এটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না, এটা কৃষি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে। ভোক্তাদের সহযোগিতার জন্যই আমরা টিসিবির মাধ্যমে ২৫ টাকা দরে বাজারে আলু ছেড়েছি।

এদিকে আলু ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলে টানা চার মাস বন্যার কারণে আলুর পাশাপাশি সবজির আবাদ কম হয়েছে। সেটার চাপ পড়েছে আলুর ওপর। দ্বিতীয়ত, হিমাগারে আলুর মজুদ গত বছরের চেয়ে কমে গেছে।

হিমাগার মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুদ ছিল ৫৫ লাখ টন। এ বছর মজুদ হয়েছে ৪৫ লাখ টন। অর্থাৎ এবার চাহিদার তুলনায় মজুদ ১০ লাখ টন কম। এর কারণ হিসেবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত বছর আলু বাম্পার ফলনের কারণে কৃষকরা ভালো দাম পায়নি, এ কারণে এবার তারা আলুর আবাদ কম করেছে। তৃতীয়ত, করোনাভাইরাসের সময় বিভিন্ন ত্রাণকাজে চাল-ডালের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ আলু বিতরণ হয়েছে, এছাড়া বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আলু কিনেছে।

 

বার্তাবাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর