মেহেরপুরে শীতকালীন সবজি চাষ করে লাখপতি মোজাম্মেল হক

মেহেরপুরের গাংনীতে শীতকালীন সবজি চাষ করে কৃষক মোজাম্মেল হক এবার লাখপতি বনে গেছেন। সেকারনে অর্থকরী ফসল হিসাবে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ওলকপি চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বেড়েছে।

ধান, পাট, গম, তামাক চাষ ছেড়ে কৃষকরা বর্তমানে সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। গাংনী উপজেলায় এক সময় সবজি গ্রাম নামে শুধু সাহারবাটী গ্রামকেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হত। উপজেলার অন্যান্য গ্রামে সবজি চাষ দেখা না গেলেও বর্তমানে প্রায় সব গ্রামেই কমবেশী দেখা যাচ্ছে। দেশে তো বটেই বিদেশেও সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছ।পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের ন্যায় শীতকালীন সবজি চাষে লাভবান হচ্ছে গাংনীর কৃষকরা।

একসময় কৃষকদের মধ্যে ধারণা ছিল, সবজি চাষ শুধু উপজেলার সাহারবাটি,ভাটপাড়া, শ্যামপুর, কালীগাংনী গ্রামে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ হয়। গাংনী উপজেলার সব জায়গার মাটি সব্জির জন্য আবাদযোগ্য না বলে কেউ আগ্রহ দেখাতো না। কিন্তু সে ধারণা ভেঙ্গে বর্তমানে গাংনীতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সবজি চাষের ব্যাপকতা বেড়েছে।

ছবি: বার্তা বাজার।

শীতকালীন সবজি হিসাবে ফুল কপি,বাঁধাকপি ও ওলকপি চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছে গাংনী উপজেলার বড়বামন্দী গ্রামের মৃত রিয়াজউদ্দীনের ছেলে একজন সফল চাষী মোজাম্মেল হক। বড় বামন্দী গ্রামের মাঠে আলাপ হলো এরকম সফল চাষী মোজাম্মেলের সাথে।

তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েকবছর ধরে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি অল্প জমিতে নানা ধরণের সবজি চাষ করে আসছি। এবছর আমি মাত্র ৩ মাসের আবাদে শীতকালীন সবজি চাষে আমি লাভবান হয়েছি। আমি আর পিছন ফিরে তাকাইনি। আবাদ করে সফলতার মুখ দেখতে চাই, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।

আমি গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শমতে ২ বিঘা ১৫ কাঠা জমিতে ২ দফায় ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ওলকপি চাষ করেছি। আমি এযাবৎ ১ম দফায় (জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সার, বীজসহ) ৫০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি।

এবছর অতিবৃষ্টির কারনে ১ম পর্যায়ে কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। পরবর্তীতে ২ পর্যায়ে আবার একই ভাবে অথর্যাৎ ৫০ হাজার টাকা খরচ সমপরিমান জমিতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি।এবছর বাজার মূল্য ভাল হওয়ায় আমি লাভবান হয়েছি।

বর্তমানে আমার দেখাদেখি অত্র এলাকায় অনেকেই সবজি চাষ করেছে। বর্তমানে কৃষি অফিসারের মাধ্যমে প্রশিক্ষন গ্রহন করে চাষ করছি। সবজি চাষে জৈব সার ও রাসায়নিক সার বেশী ব্যবহার করতে হয়। গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম শাহাবউদ্দীন আহমেদ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকতার্ রাসেল রানার সার্বক্ষনিক পরামর্শ, দিক নির্দেশনা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও নিবীড় পরিচর্যার মাধ্যমে পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন করা হয়। এসব ছত্রাক নষ্ট বা প্রতিকারের জন্য ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে হয়।

সবজি চাষ নিয়ে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম শাহাবউদ্দীন আহমেদ এর সাথে আলাপকালে জানান, আমি বৃহস্পতিবার দুপুরে রাইপুর ইউপির বিভিন্ন এলাকায় সবজি ক্ষেত পরিদর্শন করি এবং সবজি চাষীদের পরামর্শ দেই। সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় বিশেষ করে বেকার যুবকরা আগ্রহ দেখাচ্ছে। এদেশে সবজির চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে সবজি রফতানী করে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। অনেকের ভাগ্য পাল্টে গেছে।

আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে সবজি চাষ পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় পর্যায়ক্রমে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। তিনি গাংনীতে সারাবছর সবজি চাষ সম্ভব বলে চাষীদের পরামর্শ দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

বার্তাবাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর