প্রেমিক যখন খুনি!

প্রেম একটি মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা ও আকর্ষণ। মানুষের মনে যে কোন বয়সে বিভিন্ন চাহিদা ও আকর্ষন জাগ্রত হয় যেমন- রুপ, গুণ, ব্যক্তিত্ব, কারও সঙ্গে ভালো লাগা ইত্যাদি। প্রেম জীবনে একবার নয় বার বার আসতে পারে। আবার এ কথাও বহুল প্রচলিত যে প্রথম প্রেম কখনও ভোলা যায় না। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, “তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।”

কারও জীবনে প্রেম টিকতেও পারে আবার নাও পারে। আর এই প্রেম যদি একবার ভেঙ্গে যায়, তাহলে প্রেমিক-প্রেমিকা উভয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এমনই একটা ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। তবে ঘটনাটি সম্পূর্ণ ছিলো বিপরীত। এই ঘটনায় প্রেমিক তার প্রেমিকাকে নিজ হাতে হত্যা করে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল মিয়া মাতুব্বর একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সাওদাকে হত্যা করেন। রাসেল মিয়ার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। একই উপজেলার আবদুল রাজ্জাকের মেয়ে সাওদা। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে একই শ্রেণীতে পড়াশোনা করতেন তারা। একই এলাকার পরিচিত থেকে তাদের মধ্যে প্রথমে ঘনিষ্ঠতা ও পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্ক হয়। তারা এইচএসসি পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। কিন্তু প্রথম বছরে রাসেল মিয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও সাওদা চান্স পায় পরবর্তী বছর।

জানা যায়, সাওদার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় রাসেল মিয়া ভর্তির টাকা পরিশোধ করে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার কিছুদিন পর থেকে সাওদা রাসেলকে এড়িয়ে চলা শুরু করে। এর মধ্যে সাওদার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় রাসেল। কিন্তু প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে উল্টো রাসেলের বাবা-মাকে অপমান করে সাওদার পরিবারের লোকজন। প্রেমের সম্পর্ক রাখতে রাজি না হওয়ায় ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সাওদাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে যায় রাসেল। পরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর সাওদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ওইদিন বিকেলে মারা যান সাওদা।

এ ঘটনায় ৫ সেপ্টেম্বর রাতে সাওদার মা সাহিদা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ রাসেলের ছাত্রত্ব বাতিল করে। সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুন রাসেল মিয়াকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয় বরিশাল জেলা ও দায়রা আদালত। একই সঙ্গে আসামিকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয় রায়ে। রায়ের পর আসামির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে।

পাশাপাশি সাজা থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন রাসেল। আদালতে রাসেলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। ঘটনার সময় আসামির বয়স ছিল ২০ বছর এবং আসামির পূর্বের কোনো ফৌজদারি অপরাধের তথ্য নেই। এ ছাড়া আসামি বিগত পাঁচ বছর ধরে কারাগারের কনডেম সেলে রয়েছেন। এসব বিবেচনায় হাইকোর্ট তার সাজা মৃত্যুদন্ড কমিয়ে জাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। তবে বিচারিক আদালতে রাসেলকে দেওয়া অর্থদন্ড বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা এবং তা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ড দিয়েছে হাইকোর্ট।”

এদিকে আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ববির শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফ হোসেন বলেন, হত্যার শিকার আর হত্যাকান্ডে জড়িত দুজনই আমাদের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাই এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। সাওদাকে বাঁচানোর জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। হাইকোর্টের এই রায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুহসিন উদ্দিন জানান, হাইকোর্টের রায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকলে খুশি হতাম।

বার্তাবাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর