ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধ ইটভাটায় নষ্ট সরকারি আম বাগান

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দুটি ইট ভাটা পরিচালনা করে যাচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ইট ভাটার মালিক দানেশ আলী।

এদিকে পরিবেশগত ছাড়পত্র বিহীন কৃষি জমিতে অবৈধ ভাবে সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা স্থাপনের ফলে বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকায় আমবাগান চাষীরা ও ২হাজারের বেশি কৃষক। শুধু তাই নয় ইট ভাটার কারণে ধ্বংসের পথে খোদ সরকারি দুটি বড় আমবাগান। প্রতি বছর ওই বাগান দুটি থেকে প্রায় ৫লাখ টাকার সরকারি রাজস্ব আদায় হলেও ইট ভাটার করনে আমের ফলন না হওয়ায় পুরো রাজস্ব আয় বন্ধ হয়েছে সরকারের।

জানা যায়, জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের আলোকছিপি, বিশ্রামপুর, রায়পুর ও ছোট পলাশবাড়ীতে মিরাজ-১ ও মিরাজ-২ ইট ভাটা স্থাপন করেন কোন ধরণের অনুমোদন ছাড়াই। অথচ সরকারি নির্দেশনা রয়েছে ইট ভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে।

ছবি: বার্তা বাজার।

চলতি বছরে স্থানীয় কৃষক ও আমবাগান মালিকদের বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত করতে আসেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে গত ১০ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেজ-বাবুল আলমের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ওই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

একই মাসের ১৬ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেজ- বাবুল আলমের স্বাক্ষরিত আরেকটি পত্রে বলা হয়, বিভাগীয় কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ইট ভাটার পার্শ্বে বিশ্রামপুর উত্তর পাড়া দাখিল মাদ্রাসা থাকার অবস্থান উল্লেখ করে নিয়ম অনুযায়ী ইট ভাটা স্থাপন করা হয়নি মর্মে দ্রুত ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়।

তবে পরিবেশন অধিদপ্তরের দেওয়া এসব পত্রের তোয়াক্কা করেনি ঠাকুরগাঁও প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন। নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করোনাকালেও ইট ভাটায় পুড়িয়েছেন ইট। চলতি বছরও পুরোদমে চলছে ইট পোড়ানোর প্রস্ততির কাজ। আর ভাটার চারপাশে স্তপ করা হয়েছে কয়েকশত মণ কাঠের খড়ি।

এদিকে ওই ইট ভাটায় ধোঁয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে আবাদি ফসল। প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমবাগানের মালিকগুলো। নিরুপায় হয়ে প্রায় ৪ একর জমির আমবাগান কেটে ফেলেছেন এক আমবাগান মালিক।

কৃষক ও আমবাগান চাষীরা জানান, স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোন প্রতিকার না পেয়ে আম গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাগানগুলো কেটে ফেলা হলে বাগানের কাজে নিয়োজিত এ উপজেলার প্রায় ৩শতাধিক পরিবার কর্মবঞ্চিত হবে বলেও জানান তারা।

আলোকছিপি গ্রামের সমির উদ্দীন জানান, ছুয়ালাক আম খিলাবার তানে এরা আমের বাগান লাইগ্নু, দানেশের ভাটারা সব শেষ করে দিজে, এলা আমও ধরে না, ছুয়ালা খাবাও পারেনা, এই তানে রাগ করে গাছলা কাটে ফিলাচু।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব সরকার বলেন, আমার কাছে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে গেছে। ইট ভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই জানার পর তা ফেরত চেয়েছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার সুবোদ চন্দ্র রায় বলেন, ইট ভাটার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, ধোয়ার কারণে আমের পাতা খাদ্য গ্রহণ ক্ষমতা হারায়, আম ছোট আকারেরসহ নানা ক্ষতির সম্মুখিন হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন জানান, যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কোন ইট ভাটা চলে পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

তবে রংপুর বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেজবাউল আলম জানান, আমরা বন্ধের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছি। সেটি ইট ভাটা কর্তৃপক্ষ বন্ধ না করলে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের ৫টি উপজেলায় শতাধিক ইট ভাটা থাকলেও বৈধ কাগজপত্র রয়েছে মাত্র ৩-৫টির।

এ ব্যাপারে মিরাজ-১ ও মিরাজ-২ ইট ভাটার মালিক দানেশ আলীর সাথে কথা চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

বার্তাবাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর