সবার জন্য করোনা ভ্যাকসিনের টাকা কোথায়?

বাংলাদেশে ১৬ কোটির বেশি মানুষের জন্য করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন বা টিকা কেনার জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থের যোগান এখনও নিশ্চিত হয়নি বলে জানা গেছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে বাংলাদেশ অর্থসহায়তা চেয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে নিজস্ব অর্থে দেড় হাজার কোটির টাকা নিয়ে ভ্যাকসিন কেনার দৌড়ে থাকার কথা বলা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্বে সবচেয়ে কম দামের অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ যে সমঝোতা করেছে, তাতেই বিপুল অঙ্কের অর্থ গুনতে হবে।

অন্যদিকে সংরক্ষণ এবং সরবরাহের অবকাঠামোর অভাবে ও দাম বেশি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাকসিন বাংলাদেশ আনতে পারছে না।

কর্মকর্তারা যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজ বাংলাদেশের জন্য পাঁচ ডলার করে পড়তে পারে, সবচেয়ে কম দামে এই ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজের জন্য প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা গুনতে হবে।

এর ফলে সরকারের দেড় হাজার কোটি টাকা ভ্যাকসিন কেনার দৌড়ে যথেষ্ট নয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এমন প্রেক্ষাপটে বিপুল অঙ্কের অর্থ যোগাড়ে সরকার বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভর করছে বলা যায়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে, যা সোয়া চার হাজার কোটি টাকার মতো। অন্যান্য সংস্থার কাছেও অর্থ সহায়তা চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আব্দুল মান্নান বলেছেন, বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পগুলো পরিবর্তন করে ভ্যাকসিনের জন্য অর্থ-সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সংস্থাগুলো ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

“সরকার নিজস্ব উৎস থেকে ১৫০০ কোটি টাকার সংস্থান করেছে। এর অর্ধেক টাকা আমরা ইতিমধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেয়েছি। এটা আমরা বুকিং মানি হিসাবে ব্যবস্থা করেছি।”

মি মান্নান বলেছেন, “বিশ্বব্যাংকের দু’টো প্রকল্প আছে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক আমাদের স্যানিটাইজার,আইসিইউ, অক্সিজেনসহ কিছু দিতে চেয়েছিল। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকেরও প্রকল্প আছে। আমরা তাদের এই প্রকল্পগুলোর রিভাইস করে ভ্যাকসিন কেনার জন্য অর্থ দেয়ার অনুরোধ করেছি। এই প্রকল্পগুলো মিলে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা) আমাদের আছে।”

সরকারের পক্ষ থেকে এও বলা হচ্ছে যে, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলার জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ যা রাখা হয়েছে, তা থেকেও প্রয়োজনে ভ্যাকসিনের জন্য অর্থ নেয়া হবে।

কিন্তু অর্থের যোগান নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেছেন, ধনী দেশগুলো অক্সফোর্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি কোম্পানির ভ্যাকসিনের কোটি কোটি ডোজ আগেই কিনে রেখেছে।এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। দেশি বিদেশি যে উৎস থেকেই হোক না কেন- আরও আগে অর্থ নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন।

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেছেন, দেশে মহামারি সামলাতে যে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ছিল, এখন ভ্যাকসিন আনতে এবং এর অর্থ যোগাড়ে অব্যবস্থাপনা বা সমন্বয়হীনতা যেন না হয়- সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সজাগ থাকা উচিত।-বিবিসি বাংলা।

বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর