কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা আনল মেটালের এফএম ওর্য়াল্ড কম্বাইন হারভস্টোর

সরকারি ভুর্তকির আওতায় হারভেস্টার মিলছে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। যা দিয়ে এক ঘন্টায় দেড় একর জমির ধান ও গম কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই এবং বস্তাবন্দী করা সম্ভব হচ্ছে। ১২ মাস দেয়া হছে বিনামূল্যের সার্ভিস ওয়ারেন্টি। খুচরা যন্ত্রাংশসমূহ কৃষকের ঘরে ঘরে পৌছে যাওয়ায় ১ বছরেই পাওয়া যাচ্ছে যন্ত্রের মূল্য ও বাড়তি আয়।

শ্রমিক সংকটে কৃষি জমির ফসল ঘরে তোলা দিনেদিনে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আর এইজন্য দেশের বিভিন্ন উদ্যোক্তা বেছে নিচ্ছে মেটালের এফএম ওয়ার্ল্ড কম্বাইন হারভেস্টার। যার ফলে তারা হয়ে উঠছেনে আধুনকি কৃষি উদ্যোক্তা। এই কৃষি যন্ত্রে ১৫ দিনে ৫০ জন শ্রমিকের কাজ মাত্র ৩ দিনেই শেষ হচ্ছে। খরচও কমে এসেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় দেড় একর জমির ধান অথবা গম কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করা যাচ্ছ।

এইসব সুবিধার কারণে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ২৬৩টি এফ এম ওর্য়াল্ড কম্বাইনহারভেস্টার কৃষকের হাতে পৌঁছে গেছে।

দেশের কৃষকদের কাছে এভাবইে প্রতিনিয়ত আধুনিক কৃষিযন্ত্র পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে মেটাল। প্রাচীনকালে কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনি আর ফসলের অপরিপূর্ণতা থেকে রেহাই দিতে গত দুই বছর আগে দেশের কৃষি প্রযুক্তিতে মেটাল যুক্ত করেছে এমন আরও নানা যন্ত্র। এসব যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষকের পরিশ্রম যেমন কমেছে তেমনই কমে গেছে ফসলের উৎপাদন ব্যয়।

এ বিষয়ে মেটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন, ‘আমরা চাই দেশের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হোক। কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোগ ঘটলে পুরো দেশ এগিয়ে যাবে। সরকার কৃষিযন্ত্রে যে ভর্তুকি দিচ্ছে, তা সারা বছর চালু রাখার প্রয়োজন।’

মেটালের এফএম ওয়ার্ল্ড কম্বাইন হারভেস্টারের মালিক নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মাহমুদপুরের কৃষক তোজাম্মেল হোসেন জানান, ‘এই যন্ত্র গ্রামের কৃষি খাতে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই হারভেস্টার ব্যবহারের কারণে খরচ কমে গেছে, সময়ও লাগছে কম। ফলে ধান উৎপাদন সহজ হয়ে গেছে। হাতে ধান কেটে, মাড়াই কলে প্রক্রিয়াজাত করে, বাজারে নেয়া – পুরো প্রক্রিয়াতে ধানের অপচয় হতো। কিন্তু এখন জমিতেই ধান কেটে, ঝাড়াই- মাড়াই শেষ করে বস্তাবন্দী করে ফেলতে পারি এই যন্ত্রের সাহায্যে। যা ফসলের অপচয় কমিয়ে এনেছে।’

প্রান্তিক কৃষকের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে কৃষির উত্তরণ। চাষের সময়ে শ্রমিকের অপ্রতুলতা, বাড়তি খরচ ও নানা জটিল প্রক্রিয়ার কারণে ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতে খরচ বাড়ে যায়। আধুনিক কৃষি যন্ত্রের ব্যবহারই যা দুর করতে পারে।

সরকার কৃষি যন্ত্র কিনতে ভর্তুকি প্রদান করছে। ফলে সরকারি ভর্তুকির আওতায় একজন কৃষক 23 লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করেই এই কম্বাইন হারভেস্টার ক্রয় করতে পারছেন। আবার এই যন্ত্র দিয়ে ১ বছরের মধ্যে খরচ তুলে নিয়ে মুনাফা অর্জন করা যাচ্ছে। কারণ, কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে প্রতি দেড় একর জমির ধান কাটতে খরচ হয় মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে আগের চেয়ে খরচ কমেছে প্রায় ৪০ %।

ফাইল ছবি

মেটাল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএমএম ফরহাদ বলেন, ‘আমাদের কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে ফসল সংগ্রহের পুরো কাজটি ১-২ জন শ্রমিক দিয়ে সম্ভব হচ্ছে। ভেজা কাদামাটি, পানিতে ডোবা কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সব সময়েই মাঠে ব্যবহার করা যাচ্ছে মেটালের এফ এম ওয়ার্ল্ড কম্বাইন হারভেস্টার।’

মেটালের এফএম ওয়ার্ল্ড কম্বাইন হারভেস্টার কিনলে ক্রেতা পাচ্ছেন ১২ মাসের বিনা মূল্যের সার্ভিস ওয়ারেন্টি। এ ছাড়া যন্ত্রটি পরিচালনার জন্য বিনা মূল্যে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। যে কোন সমস্যা হলে খুচরা যন্ত্রাংশ নিয়ে মেটাল পৌঁছে যাচ্ছে কৃষকের পাশে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি I যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল আলম জানায়, ‘গত ৩ বছর ধরে মাঠ পর্যায়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে এই ওয়ার্ল্ড কম্বাইন হারভেস্টারের ওপরে। এর ফলাফল বেশ সন্তোষজনক। এই ধরনের কৃষিযন্ত্রগুলো প্রান্তিক কৃষকের ফসল উৎপাদনে খরচ ৬০% পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।’

সারা দেশে যে পরিমান জমিতে ধান-গম চাষ করা হয় তা সংগ্রহে প্রায় অর্ধলক্ষ (৬৬ হাজার) এমন কম্বাইন হারভেস্টার প্রয়োজন। যা বর্তমান সরবরাহের তুলনায় বেশ কম। প্রতিবছর ১ হাজারটি কম্বাইন হারভেস্টার কৃষকের হাতে পৌছে দিতে পারলেও, প্রায় ৬০ বছর সময় লাগবে দেশের প্রতিটি কৃষককে এই কৃষি প্রযুক্তির সুফল পেতে। তাই সরকারি পর্যায় থেকে কৃষি ভর্তুকি বাড়ানো ও কৃষিতে এমন আধুনিক যন্ত্রের প্রয়োগে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। যা ফসলের উৎপাদন বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি কৃষি প্রযুক্তি পন্য নিয়ে কাজ করে দেশের সচেতন যুবকরা নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছে।

এমন আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের কারণে ফসলের উৎপাদন খরচ কমে আসছে। পাশাপাশি কম পরিশ্রমে বেশি ফসল উৎপাদন হওয়ায় অনেকেই নতুন করে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে, এমনকি শিক্ষিত তরুণেরাও। কৃষি যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষকের জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনও বাড়ছে।

দেশের সকল কৃষক এখনও এমন আধুনিক কৃষি যন্ত্রের সাথে পরিচিত নয়। কিন্তু কৃষিতে এমন আধুনিকতার ছোঁয়া পৌঁছে দিতে কৃষকের পাশে আছে মেটাল।

বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর