ছাত্রলীগ থেকে ১৯ জনকে বহিষ্কার

সম্প্রতি ঘোষিত ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ১৯টি বিতর্কিত পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দিনগত রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

কিন্তু কোন ১৯টি পদকে শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে বা কারা সেই বির্তকিত ১৯ জন সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি এ বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করা হলো। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই-পূর্বক উক্ত পদসমূহ পূরণ করা হবে।

ছাত্রলীগের এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে অস্পষ্ট ও নতুন নাটক বলে আখ্যা দিয়েছেন পদবঞ্চিত ও পদপ্রত্যাশী নেতারা। যে কারণে নবগঠিত ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের নেতাদের বহিষ্কার ও বঞ্চিতদের পদ প্রদানের দাবিতে এখনও রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছেন তারা।

পদবঞ্চিতরা বলছেন, অভিযুক্ত ও বিতর্কিত শতাধিক নেতার নাম তাদের জানা আছে। এদের মধ্যে ৫০ জনের বিরুদ্ধে অকাট্য দলিলসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কাছে দেয়া হয়েছে বলে জানান তারা।

এরপরেও এমন বিজ্ঞপ্তি কী বার্তা দিচ্ছে তা তাদের কাছে একেবারেই অস্পষ্ট। বিষয়টিকে এক ধরনের ছলচাতুরি বলে ভাবছেন আন্দোলনকারীরা।

এর আগে গত রোববার মধ্যরাত থেকে অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন পদবঞ্চিত ও পদপ্রত্যাশীরা। দাবি মানা না হলে ঈদের দিনেও ঢাকায় অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, গত সোমবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের বাদ না দিয়েই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে ছাত্রলীগ।

অথচ ১৫ মে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সংগঠনটির নতুন কমিটির শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছিল। তখন অপরাধী ও বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দিতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

গত ১৩ মে সম্মেলনের এক বছর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই আন্দোলনে নামেন সর্বশেষ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা অর্ধশত নেতা। যারা এই কমিটি থেকে বাদ পড়েন ও প্রত্যাশিত পদবঞ্চিত হন।

পদবঞ্চিতরা ১৬ মে বিভিন্ন অপরাধ অপকর্মে জড়িত এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও রেওয়াজ পরিপন্থী উপায়ে পদপ্রাপ্ত বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম প্রকাশ করেন। দুই দফায় ক্যান্টিন ও টিএসসিতে কয়েক দফায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালান।

এসব নিয়ে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছলে ১৯মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সিনিয়র চার নেতার হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্থগিত করে পদবঞ্চিতরা।

পদবঞ্চিতদের এমন আন্দোলনের মুখে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জানান, সংবাদ সম্মেলনে যেই ১৬ জনের নাম বলা হয়েছে, তাদের ৮ জন নিজেদের পক্ষে দালিলিক তথ্য-প্রমাণ দিয়েছেন যে তারা নির্দোষ। এদের বাইরে কয়েকজনের ব্যাপারে আপত্তি এসেছে।

সব মিলিয়ে ১৯ জনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, তাদের ব্যাপারে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন আছে। প্রাথমিকভাবে ওই ১৯ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে। সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি মঙ্গলবার এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বুধ (আজ) অথবা বৃহস্পতিবার ঘোষণা হবে বলেও জানান তিনি।

ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত পক্ষের নেতৃত্বদানকারী সর্বশেষ কমিটির কর্মসূচী ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, অভিযুক্ত শতাধিক নেতার নাম আমরা বলেছি। এদের মধ্যে অকাট্য দলিল রয়েছে ৫০ জনের মতো। সেটা যে কেউ চাইলে আমরা দিতে পারব। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কাছে তা দেয়া হয়েছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

রাকিব আরও জানান, আমরা কোনো ধরনের ছলচাতুরি দেখতে চাইনা। অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃতদের বাদ দিতে হবে। সেই শূন্য পদে বঞ্চিতদের স্থান করে দিতে হবে। তা না করা পর্যণ্ত লাগাতার আন্দোলন চলবে।

bangladeshtoday.com

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর