রংপুরে জুয়েলের গায়েবী জানাযা অনুষ্ঠিত

গত বৃহস্পতিবার বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ এনে জুয়েল নামে এক ব্যাক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করার পরে বিবস্ত্র করে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয়রা। আজ দুপুরে তার গায়েবী জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে।

এই ঘটনার পরেই জানা যায় কোরআন শরিফ অবমাননার বিষয়টি ছিলো গুজব। হত্যার পরে নিহত ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে পরিচয় পাওয়া যায় তার। জানা যায় নিহত সেই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরীয়ান শহিদুন্নবী জুয়েল।

জানা গেছে, নিহত শহিদুন্নবী জুয়েল এর বাড়ি রংপুরের শালবনের মিস্ত্রিপাড়ায়।ব্যক্তিগত জীবনে ধার্মিক ও ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন বলে জানিয়েছেন জুয়েলের পরিবার ও প্রতিবেশীরা। চাকরী না থাকাসহ নানা কারণে জুয়েল গত কয়েকমাস ধরে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন বলেও জানিয়েছে তার পরিবার।

ঘটনার দিন সুলতান জোবায়ের আব্বাস নামে একজন দলিল লেখককে সাথে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে পাটগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন নিহত জুয়েল। সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার বুড়িমারী স্থলবন্দর লাগোয়া বাজারে ওই মসজিদটির অবস্থান।

ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, জুয়েল ওইদিন নামাজ শেষে পুলিশ পরিচয়ে মসজিদে অস্ত্র লুকানো আছে সন্দেহে তল্লাশি করার এক পর্যায়ে ভুলক্রমে পা দেয় কোরআন শরিফ রাখার সেলফে কিন্তু কোরআন শরিফে পা দেয়নি বা অবমাননা করেননি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শিরা ও মসজিদের খাদেম।এরপরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় হোসেন আলী নামক একজনের সাথে বাকবিতন্ডায় হয় জুয়েল এর।

একপর্যায়ে হোসেন আলী জুয়েল কে চড় থাপ্পড় মেরে বাইরে এনে ইউপি সদস্যের কাছে দেয় বলে জানায় মসজিদের খাদেম ও হোসেন আলী।ইউপি সদস্য জুয়েল ও তার সঙ্গী সুলতান জোবায়ের কে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রাখে এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান,উপজেলা চেয়ারম্যান ও পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

এরপরে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভাংচুর করে জুয়েল কে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।এবং অপর একজনকে বুড়িমারী বাজারের ন্যাশনাল ব্যাংকে নিয়ে সুরক্ষা দিতে চাইলে বিক্ষুব্ধ জনতা ভাংচুর চালায় সেই ব্যাংকে এসময় আহত হন পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুমন কুমার মোহন্ত সহ প্রায় ১২ জন পুলিশ সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেওয়াজ নিশাদ।

টানা ৫/৬ ঘণ্টা ধরে এই বীভৎস তাণ্ডব চলার পর রাতে র‍্যাব, ৩ প্লাটুন বিজিবি ও রিজার্ভ পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে নিহত জুয়েলের পরিবারের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে আশপাশ এবং জুয়েল কে নির্মম ভাবে হত্যা করার জন্য এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করে রংপুরে মানববন্ধন করেছে নিহত জুয়েল এর স্বজনরা।

এই ঘটনায় জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি এম এ মোমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি দুই সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম কামরুন্নাহার। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করছেন। ১ নভেম্বর তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।

ইতোমধ্যে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য আশরাফুল, আরিফ হোসেন বায়েজিদ ও শরীফ নামে তিন জনকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ও বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব ভূঞা।তারা জানান,এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত আছে তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর