ফার্মেসিতে ভূল ওষুধ বিক্রি, দায় এড়াতে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর অভিযোগ

ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরশহরের ফরহাদ মেডিসিন কর্ণার নামে একটি ফার্মেসি থেকে দেয়া ভুল ওষুধ খেয়ে ব্লাড সুগার নেমে যায় তিন এর নীচে, কমে যায় প্রেসার। এতে গুরুতর অসূস্থ্য হয়ে পড়েন ত্রিশাল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন তিনি। গত ২১ অক্টোবর এই ঘটনা ঘটে।

ওই ফার্মেসির মালিক আব্দুল কাদির মীরের এক ছেলে পুলিশের এসআই ও মেয়ের জামাইয়ের আত্মীয় বড় পুলিশ কর্মকর্তা, আর তাই এবিষয়ে থানায় ডেকে ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় ওসির উপর ক্ষিপ্ত হন কাদির মীর। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই ওই ব্যবসায়ী উল্টো ওসির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেন পুলিশ সদর দপ্তরে।

 জানা যায়, গত ২১অক্টোবর ফরহাদ মেডিসিন কর্ণার থেকে ত্রিশাল থানার ওসি তার কন্সটেবলের মাধ্যমে জারডিমেট ৫/৫০০ পাওয়ারের ২৫টি ট্যাবলেট কিনে আনান। এর মধ্যে ৫টি ট্যাবলেট কাটা ছিলো। ২৫টির মধ্যে দুই পাতার ২০টি ট্যাবলেটের পাওয়ার সঠিক থাকলেও কাটা পাতার ৫টি ট্যাবলেট অন্য গ্রপের গ্লিপিটা এম ৫০/৫০০। ওষুধ কিনে এনে না দেখে, কাটা পাতার একটি ট্যাবলেট খেয়ে ওসি মাহমুদুর রহমানের ব্লাড সুগার তিনের নীচে নেমে যায়। প্রেসার কমে যায়।

গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার স্ত্রীর আবার ঔষধ খাওয়ানোর জন্য ট্যাবলেট হাতে নিলে ভুল ঔষধটি নজরে আসে। পরে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ওসি মাহমুদুর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে, তিনি বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলতে বলেন। রাতে বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য ওসি ওই ব্যবসায়ীকে থানার বাসভবনের সামনে ডেকে এনে চাহিদার ওষুধের পরিবর্তে ভুল ওষুধ দেয়ার কারন জানতে চাইলে তারা বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষমা চান।

পরে ব্যবসায়ীর ছেলে নরসিংদি জেলার মাদবদী থানায় চাকুরীরত মীর কায়েস ব্যবসায়ীকে তার বাবা পরিচয় দিলে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এসময় ব্যবসায়ী নিজেই তার হাতে লিখে এর জন্য কোনো সমস্যা হলে আইনগত ব্যবস্খা নেয়া হবে বলে থানা থেকে চলে যান।

তাদের নির্যাতনের কোনো ঘটনা না ঘটলেও তাদের ভূলটা ঢাকতে এবং ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে বলে জানান ওসি মাহমুদুর রহমান।

ঘটনার ৭দিন পর ব্যবসায়ীর ছেলে সাবইন্সপেক্টর মীর কায়েস ও তার বোন জামাই সাব ইন্সপেক্টর আরিফের পরামর্শে ওসির বিরুদ্ধে তাকে থানায় এনে গালমন্দ ও মানসিক নির্যাতনের করা হয়েছে মর্মে একটি অভিযোগ আইজিপি সেলে দায়ের করেন।

অভিযোগকারী আব্দুল কাদির মীর সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিলে বিচার পাওয়া যাবে না এবং পুলিশ সদর দপ্তরে তার মেয়ের জামাইয়ে আত্মীয় বড় কর্মকর্তা আছেন সে জন্য আইজির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ওসির সাথে আমাদের শত্রুতা নেই। ইচ্ছা করে ভূল ওষুধ দেয়া হয়নি। থানায় নিয়ে গালিগালাজ করা হয়েছে। কোনো শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি । আমরা যখন কথা বলি ওসি সাহেব তার বাসায় ছিলেন আর আমরা বাহির থেকে কথা বলি। এসময় আমরা ক্ষমা চাইলেও তিনি আমাদের গালিগালাজ করেন। পরে আমার ছেলে এসআই কায়েস অনুরোধ করলে তিনি আমাদের ছেড়ে দেন।

এ ব্যাপারে ত্রিশাল থানা ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি নিয়মিত ওই ঔষধ খাই। ঔষধের খালি প্যাকেট দিয়ে কন্সটেবলের মাধ্যমে ফরহাদ মেডিসিন থেকে ঔষধ আনাই। শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তারাতারি ঔষধ খাওয়ার পর আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাই। রাতে আবার ঔষধ খাওয়ার জন্য ট্যাবলেট বের করলে, আমার স্ত্রী বলে তুমি ভুল ঔষধ খেয়ে আরো অসুস্থ হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। পরেরদিন তাদের দুই তিনবার খবর দেওয়ার পরেও তারা আসেনি। যখন তারা থানায় আসে, তখন শুধু শাসিয়েছিলাম যেন, আর কোনদিন কাউকে ভুল ঔষধ না দেয়। পরে তার ছেলে এসআই মীর কায়েস ও মেয়ের জামাই এসআই আরিফ অনুরোধে কোন আইন ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর