আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রতিপক্ষের বাড়িতে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত হামলায় পিতা-পুত্রের আহতের ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে প্রতিপক্ষের ১১টি বাড়িঘরে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গ্রাম্য দলাদলিকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য অলিয়ার রহমান মিয়া ও জয়েনউদ্দিন ফকিরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে অলিয়ার রহমান মিয়ার ভাই চা বিক্রেতা ইকরাম মিয়া (৬২) ও তার ছেলে ইয়াছিন মিয়া (২৫) মহিষারঘোপ বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বারইপাড়া গ্রামের হামিদ সর্দারের বাড়ির দক্ষিণ পাশে রাস্তায় পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ওঁৎ পেতে থাকা ৮-১০ জনের একটি দুর্বৃত্তের দল তাদের গতিপথ রোধ করে।

এরপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। পরে আহতদের চিৎকারে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে ইকরাম মিয়ার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

এদিকে এ হামলায় জড়িত সন্দেহে প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করে অলিয়ার গ্রুপ জয়েনউদ্দিন গ্রুপের সমর্থক বাদশা সর্দার, রিপন সর্দার, নূর মোহাম্মদ, হোসেন শেখ, ইমান শেখ, আজমল শেখ, আজিজুল শেখ, হান্নান শেখ, জয়েনউদ্দিন ফকির, আকাশ ফকির ও রবিউল ফকিরের বাড়ীঘরে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

গ্রামজুড়ে ধ্বংসের চিহ্ন দেখে কোন সুপার সাইক্লোনের তান্ডব মনে হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, প্রতিপক্ষের ভয়াল থাবায় সবকিছু এভাবে তছনছ হয়ে গেছে। শত কষ্টের সাজানো গোছানো সংসারগুলো এক একটি ধ্বংসস্তুুপে পরিণত হয়েছে। প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার ইতোমধ্যে ভিটেমাটি ফেলে পালিয়েছে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভিটেমাটি আঁকড়ে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন নারী ঘটে যাওয়া বর্বরতার বিচার দাবি করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক জয়েন উদ্দিন ফকিরের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৪২) বলেন, ‘অলিয়ার গ্রুপের লোকজন আমাদেরকে সন্দেহবসত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে। তাদের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা জড়িত নই।’

অপর এক ক্ষতিগ্রস্ত নূর মোহাম্মাদের স্ত্রী বেবি বেগম জানান, ‘সরকার থাকার জন্য একটি ঘর দিয়েছিলো। কিন্তু তারা আমার সেই ঘর ও সংসারের সব মালামাল ভেঙে ফেলছে।’

ইউপি সদস্য ও হামলায় জখম ইকরাম মিয়ার ভাই অলিয়ার রহমান জানান, ‘ভাই ও ভাতিজার ওপর হামলা চালিয়ে মারাত্মক জখম করেছে আমার গ্রামের প্রতিপক্ষ গ্রুপ। তাদের বাড়িতে আমরা কেউ হামলা চালাইনি বা বাড়িঘর ভাঙচুর করিনি। আমাদের নামে মামলা করার জন্য তারা নিজেরা বাড়িঘর ভাঙচুর করে নাটক সাজিয়েছে।’

আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করীম জানান, ‘বাড়িঘর ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থল থেকে জিঙ্গাসাবাদের জন্য ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্তু থানায় কেউই লিখিত অভিযোগ দেয়নি বলে তিনি জানান।’

বার্তাবাজার/নিমফুল

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর