যশোরে কাঠ ব্যবসায়ী খুন, আটক ২

যশোর সদর উপজেলার সরদার বাগডাঙ্গা গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফাকে হত্যার আগে ফেনসিডিল ও গাঁজা সেবন করানো হয়। নেশার ঘোরে মোস্তফা কিছুটা এ্যাবনরম্যাল হয়ে পড়লে তারপর তাকে হত্যা করে ঘাতকেরা। অর্থনেতিক লেনদেন ও ব্যবসায়ীক বিরোধের জের ধরে সৃষ্ট ক্ষোভ থেকেই হত্যা করা হয় কাঠ ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফাকে।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে যশোর পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে একথা বলেন।

তিনি বলেন, গোলাম মোস্তফা খুন হওয়ার পর তার স্ত্রী সালমা বেগম কাউকে আসামী না করেই যশোর কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এরপর পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটনে জোর তদন্ত শুরু করে। এ সময় সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মামুন এবং শাখারীগাতি গ্রামের মাজেদ মোল্যার ছেলে শহিদুল ইসলামকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা গোলাম মোস্তফা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তারা জানায়, সরদার বাগডাঙ্গা গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা সুদে টাকা খাটাতেন। পাশাপাশি দাদনে কাঠ কিনতেন। আটক আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুনও একজন কাঠ ব্যবসায়ী। মামুনকে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা সুদে দিয়েছিলেন গোলাম মোস্তফা। মামুনের দাবি ওই টাকার পরিবর্তে তিনি এ পর্যন্ত মোস্তফাকে ১০ লক্ষাধিক টাকা দিয়েছেন । কিন্তু তারপরো নাকি আসল ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা পরিশোধ হয়নি বলে দাবি করতেন গোলাম মোস্তফা।

এর পাশাপাশি তাদের মধ্যে ব্যবসায়ীক বিরোধ চরম আকারে বেড়ে যায়। সবকিছু মিলে মামুন চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন গোলাম মোস্তফার উপর। এজন্য তিনি গোলাম মোস্তফাকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। সে মোতাবেক গত শনিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে মামুন তার মোবাইলে ফোন দিয়ে গোলাম মোস্তফাকে বলেন, অনেক কাঠ এসেছে, আপনি বাড়ি থেকে দ্রুত আসেন।

মোস্তফা বাড়ি থেকে নিজের মোটরসাইকেলে করে প্রথমে চুড়ামনকাটি বাজারে যান। সেখান থেকে মামুন ও শহিদুল নামে অপর একজনকে নিয়ে একই মোটরসাইকেলে তারা ৩ জন সলুয়া বাজারে যান । সেখানে তারা ৩ জন একই সাথে ফেনসিডিল খায়। তবে মামুন ও শহিদুল কৌশলে মোস্তফাকে বেশি করে ফেনসিডিল খাওয়ায়। এরপর তারা রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাঁজা কিনে নিয়ে ঘোনা গ্রামের নদীর পাড়ে চিত্ত রঞ্জনের মেহগনি বাগানে যায়। সেখানে বসে তারা ৩ জন গাঁজা খায়।

এখানেও তারা কৌশলে মোস্তফাকে বেশি করে গাঁজা সেবন করায়। মোস্তফা কিছুটা এ্যাবনরম্যাল হয়ে গেলে মামুনের কাছে থাকা চাকু দিয়ে মোস্তফার বুকে আঘাত করা হয়। এ সময় মোস্তফা ঠেকানোর চেষ্টা করলে কিছু সময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। তবে এক পর্যায়ে মোস্তফা নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন মামুন ও শহিদুল তার গলা কেটে হত্যা করে।

এরপর লাশ নীচে ফেলে দিয়ে কচুরিপনা দিয়ে ঢেকে দেয়। খুনিরা মোস্তফার মানিব্যাগে থাকা ৩০৪ টাকা নিয়ে মানিব্যাগ ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু পানির মধ্যে ফেলে দেয়। পরদিন ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তার লাশ ভৈরব নদীতে ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে সংবাদ দেয়। থবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এরপর নিহতের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সুপার আরো জানান, ঘটনার পর পুলিশ ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। বিভিন্ন সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে বুধবার আব্দুল্লাহ ও সহিদুলকে আটক করতে সক্ষম হয়। এরপর আব্দুল্লাহর বাড়ি থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া নিহতের মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে।

মূলত সুদের টাকা লেনদেন নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। এই হত্যাকান্ডে এখন পর্যন্ত দুইজনের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পেরেছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই নুর ইসলাম জানান, আটক দুই আসামি বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দীন হোসাইন ওই জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রেসব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দীন সিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক—সার্কেল গোলাম রব্বানী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেডকোয়ার্টার অপু সারোয়ার, ডিএসবির ডিআইওয়ান মশিউর রহমান, ডিবির ওসি সোমেন দাস, এসআই কামরুজ্জামান, এসআই মফিজুল ইসলাম, এসআই শামিম হোসেন, এসআই নূর ইসলাম প্রমুখ।

বার্তাবাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর