বিপুল পরিমাণ ইয়াবা পাচারের অভিযোগে কারাগারে থানার ওসি

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে সদর মডেল থানার সাবেক ওসি মো. কামরুল ইসলামকে। তবে কারাগারে নেওয়ার ৭ দিন পার হয়ে গেলেও বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

এর আগে ওই মামলায় তাকে চার্জশিটভুক্ত করা হলেতিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। আদালতের নির্দেশ মেনে নিম্ন আদালতে হাজির হলে তাকে জামিন নামঞ্জুর করে পাঠানো হয় কারাগারে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে চায়নি।

তবে রাতে গণমাধ্যমকে পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম জানান, যেহেতু কামরুল নারায়ণগঞ্জ জেলায় নেই সেহেতু তার সম্পর্কে বিস্তারিত না জানলেও আইনত কারাগারে যাওয়ার পর তার চাকরি থাকার কথা নয়।

তবে বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালত ২২ অক্টোবর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে সাবেক ওসি কামরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার রুপালি আবাসিক এলাকা থেকে সদর মডেল থানার এএসআই সরোয়ার্দি ও মাদকবহনকারী সাবিনা আক্তার রুনুকে ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা ও নগদ ৫ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

এ ঘটনায় বন্দর থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামি পুলিশের এএসআই আলম সরোয়ার্দি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, রুনুকে ইয়াবাসহ আটকের পর ওসি কামরুল ইসলামকে আমি ফোন করি। উনি আমাকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলেন। এরপর ঘাটের কাছেই বাসা হওয়ায় আমি আসামিসহ আমার বাসায় চলে যাই। পরে ওসি আলামত (৪৯ হাজার পিস ইয়াবা) ও ৫ লাখ টাকা রেখে রুনুসহ দুজনকে এসআই মোর্শেদের কাছে দিতে বলে। মোর্শেদ আসামি রুনুকে নিয়ে বাসার নিচে যাওয়ার পর আমাকে ফোন দিয়ে অপর আসামিকে ছেড়ে দিতে বলে।

আলম সরোয়ার্দি জবানবন্দিতে আরো বলেন, আসামি ছেড়ে দেওয়ার আগে আমি আলামত ও টাকা রেখে দেই। ঐ আলামত থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা এনে ওসির নির্দেশমতো রাস্তা থেকে জনি নামে একজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি। রাতে ডিবি অভিযান চালিয়ে আলামত ও টাকা জব্দ করে।

কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান জবানবন্দিতে বলেন, সরোয়ার্দির বাসায় গিয়ে দেখি রুনু ও আ. রহমানকে দেখতে পাই। সে দুজনকে ইয়াবাসহ ধরেছে। মাদকগুলো থানায় না এনে বাসায় আনার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সরোয়ার্দি বলেন, ওসি কামরুল স্যার আমাকে আসামিসহ মাদকগুলো বাসায় রাখতে বলেছে। পুলিশের দুজন সদস্যের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওসি কামরুলের নাম আসার পরেও তাকে বাদ দিয়ে গত আগস্ট মাসে ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দিন আল আজাদ।

মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের জামিন আবেদন পর্যালোচনাকালে বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আসে। এরপরই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব এবং এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

হাইকোর্টে দেওয়া ব্যাখ্যায় তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়া পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় ওসিকে আসামি করা হয়নি। আইওর ঐ ব্যাখ্যা আইনগতভাবে কতটা সঠিক সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও এস এম শাহজাহানের মতামত গ্রহণ করে হাইকোর্ট।

তারা আদালতে অভিমত দিয়ে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার প্রধান কাজ মামলার তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা। তার কোনো ক্ষমতাই নেই মামলার তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দেওয়ার। ফলে তদন্ত কর্মকর্তা ওসিকে আসামি না করার ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা আইনগতভাবে সঠিক নয়।

এই মামলায় ওসি কামরুলের নাম আসায় আদালতের নির্দেশে গত বছরের বছরের ৪ মার্চ সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে তাকে মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলে ২ এপ্রিল আবারও সদর থানায় তাকে পুনর্বহাল করা হয়। তিনি পরে ডিবি ও অন্যত্র বদলী হন। পরে সিআইডি ওসি কামরুলকে সম্পৃরক চার্জশিটভুক্ত করেন।
সূত্র-ইত্তেফাক।
বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর