তৃণমূল চায় নতুন মুখ, পদ ছাড়তে নারাজ বিতর্কিতরা

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ক্রমশ: উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন। গঠনতন্ত্র ও দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুসরন করে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আর এ লক্ষ্যে পদ প্রত্যাশীরা যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন কেন্দ্রের হেভিওয়েট নেতাদের সাথে।

স্থানীয় এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আশীর্বাদপুষ্ট এবং তৃণমূলের গ্রহনযোগ্য ত্যাগী নেতাই এ পদে আসতে পারেন বলে স্থানীয়দের ধারণা। এ দিকে পদ ছাড়তে নারাজ বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাদি আল-মাজী জিন্নাহ ও সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক শরিফ উল আলম শরিফ।

তবুও তৃণমূল আওয়ামী লীগের ডাকে শারাদিয়ে সভাপতি পদে সাবেক এমপি মরহুম গাজী ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন ও সাধারণ সম্পাদক পদে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা সম্প্রীতি মঞ্চের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয় প্রার্থীতার ঘোষনা দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উজ্জীবিত করে তুলেছে।

উপজেলা আওয়ালীগ দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইতিমধ্যে সম্মেলন সফল করতে আলাদা ম কমিটি, আপ্যায়ন কমিটি, প্রচার কমিটি, অভ্যর্থনা কমিটি ও অর্থ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সম্মেলনকে ঘিরে মাইকিং ও ফ্রেস্টুন বেনারে ছেঁয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সব মিলে সরব হয়ে উঠেছে তৃনমূল। আগামী ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে সকাল ১০টায় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা ও সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম টিপু।

এ দিকে দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছিলো। জাতীয় দিবস, বিশেষ দিবস, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোও পালন করা হয়েছে দায়সাড়া ভাবে। এছাড়া দীর্ঘদিন মূল দলের সম্মেলন না হওয়ায় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে।

তবে, এসব কারণে দলে বড় ধরনের কোন বিশৃংখলা দেখা না দিলেও এবারের সম্মেলনে নেতৃত্বের পরিবর্তন সময়ের দাবি বলছেন তৃণমূলের দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। তবে সম্মেলনের ঘোষণার পর থেকে উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও কাউন্সিলদের চুড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বিজয় সুনিশ্চিত করতেই কৌশলে ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে কাউন্সিলর তালিকায় এদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন বলে ত্যাগী নেতাকর্মীর অভিযোগ।

এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে ৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তারা নির্বাচিত হতে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে রাত-দিন কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন উপর মহলে।

তবে, সভাপতি পদের জন্য নেতাকর্মীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছেন ইমন। তার প্রতি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। একই পদের অপরপ্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাদী আল মাজী জিন্নাহ। তিনি জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ি হওয়ায় বিগত ৮বছরে দলীয় কার্যক্রমে ও নেতাকর্মীদের জন্য প্রত্যাশিত সময় দিতে পারেননি। এ কারণে তৃণমূলের কাছে তিনি ঘেঁষতে পারছেন না বলে জানান অনেকেই। তবে এমন বক্তব্য অস্বীকার করে তিনি বলেন তৃণমূলের নেতারা আমার সাথে আছে আগামীতেও থাকবে। আমি তাদের ভোটেই জয় লাভ করবো ইনশাল্লাহ।

অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদেও নতুন নেতৃত্ব আসা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এ পদেও যোগ্য এবং ত্যাগী প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ভালো সাড়া পাচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা, আবুল কালাম আজাদ হৃদয়। তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক ও সমাজ সেবক হিসেবে নেতাকর্মীদের কাছে সুপরিচিত।

আপদে বিপদে সব সময় কাছে তাকে পেয়েছেন তারা। দীর্ঘসময় তৃণমূলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হৃদয় কখনো দলের বিরুদ্ধে কোন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হননি। সাবেক এ ছাত্রনেতা ২০০৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার অবৈধ নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললে রাজধানীর রাসেল স্কয়ার থেকে যৌথ বাহিনী হাতে আটক হয়েছিলেন। হৃদয় বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে মাঠে ছিলাম। এ প্রাণের সংগঠনকে আরো এগিয়ে নিতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছি। আমার অতীত কর্মকান্ড মূল্যায়ন করে কাউন্সিররা আমাকেই নির্বাচিত করবে বলে আমি আশাবাদি।

অপরদিকে, একই পদের আরেক প্রার্থী শরিফ উল আলম শরিফ। তিনি বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক। তিনিও পদ ছাড়তে নাড়াজ। আবারও সম্পাদক হচ্ছেন বলে অগ্রিম বার্তা ছড়াচ্ছেন কর্মীদের মাঝে। তবে তার বিরুদ্ধে জমি দখল, নারী কেলেঙ্কারি, ইউনিয়ন আ.লীগের পকেট কমিটিসহ চেয়ারম্যান টিকিট পাইয়ে দেয়ার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে বলে নাম প্রকাশ না শর্তে দলের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান। তিনিও সমর্থন আদায়ের জন্য ছুটে চলেছেন। শেষ পর্যন্ত লড়াই এ দুজনের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এ ব্যাপারে শরিফ উল আলম শরিফ বলেন, কাউন্সিল সামনে আসলে প্রার্থীদের নামে নানা ধরণের অভিযোগ উঠেই থাকে। এগুলো সত্য নয়।। এ সম্মেলনে সভাপতি পদে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আবু বকর সিদ্দিকও প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে মাঠে থাকলেও শেষ মূহুতে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম হাসান সুমন।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব এ্যাড. লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা থেকে ২শ’ ৬৬ জন কাউন্সিলর ও ডেলিগেট নির্বাচন করা হয়েছে। তারা দলের নতুন নেতা নির্বাচন করবেন।

মুক্তিযোদ্ধা গাজী এসএম আজিমুদ্দিন ও আব্দুর রহিম মাষ্টারসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা নতুন মোড়কে পুরাতন মাল চাই না। আমরা চাই সম্মেলনের মাধ্যমে তরুণ নতুন নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসবে। যারা মাঠের নেতা ছিলেন,লড়াই সংগ্রাম করে দুর্দিনে দলকে সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচিত হোক এটাই চাই।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, গঠনতন্ত্র ও দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুসরণ করেই তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হবে।

বার্তাবাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর