কাশফুলের শুভ্রতায় নোবিপ্রবি ক্যাম্পাস

ছয় ঋতুর সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। ভিন্ন ছয় রকমের আভাস নিয়ে আসে, ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন ঘটিয়ে সম্পন্ন করে একটি পূর্ণ বর্ষ। ছয়টি ঋতুরই রয়েছে আপন সৌন্দর্য ও পরিচয়। পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই এই ঋতু সৌন্দর্যের দেখা মিলে। কাশফুল ও সাদা মেঘের শুভ্রতার সৌন্দর্য নিয়ে ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাসে দেশে অবস্থান করে বর্ষের তৃতীয় ঋতু শরৎকাল।

বর্ষার অবিশ্রান্ত বৃষ্টির টুপটাপ গান যখনই মানুষের মনকে বিষন্ন করে তুলে, ঠিক তখন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা নিয়ে শরৎকালের আগমন ঘটে। ইংরেজি বর্ষপুঞ্জিতে আগষ্ট এর মাঝামাঝি সময় থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে শরৎকালের পরিসর। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা মিলবে সাদা কাশফুলের।

শরতের সৌন্দর্যের বন্দনা করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতায় বলেছেন,
“শরৎ তোমার অরুন আলোর অঞ্জলি
ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।
শরৎ তোমার শিশির ধোয়া ধোওয়া কুন্ডলে
বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে
আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।
আজ শরতের আলোয় এই যে চেয়ে দেখি
মনে হয় এ যেন আমার প্রথম দেখা।”

শরৎ শুভ্রতার ঋতু। সাদা মেঘের ভেলা, নদী বা জলাধারে পাড়ে ফোটা কাশবন, শিউলি বা শেফালি ফুলের মনমাতানো সুভাস কিংবা জলাশয়ে ফোটা অসংখ্য জলজ ফুল শরতের কোমলতা ও স্নিগ্ধতাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলে। সাদা কাশফুল, নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা ও দিনভর রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলার সৌন্দর্য নিয়ে ‘উপকূলীয় অক্সফোর্ড’ খ্যাত ১০১ একরের ক্যাম্পাস নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শরতের আগমন ঘটেছে।

শরতের আগমনী বার্তা নিয়ে ক্যাম্পাসে কাশফুল ভরে উঠেছে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ময়নাদ্বীপ, নীলদিঘির পাড়, প্রশাসনিক ভবনের পশ্চিম ও দুই একাডেমিক ভবন এর দক্ষিণ পাশে এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের উত্তর-পশ্চিমে ঋতুর চিহ্ন সম্বলিত কাশফুলের দেখা মিলে। যেকোনো প্রকৃতি-প্রেমিককে মুগ্ধ করবে কাশফুলের সৌন্দর্য। শরতের মৃদু বাতাসে প্রকৃতিতে এই কাশফুলের শুভ্রতা ছড়ায়। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটির দিনগুলোতে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাস।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিগত পাঁচ মাস ধরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে শিক্ষার্থীরা খুব কাছ থেকে এই সময়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। তবে ভিন্ন পরিস্থিতির কারণে যাদের জন্য সেজেছে এই ক্যাম্পাস তাদের অদেখা তেই নষ্ট হতে থাকবে এই অপরুপ সৌন্দর্য। ফলে ক্যাম্পাসের ঋতু সৌন্দর্য অবলোকন করতে না পারার বেদনা ও ক্যাম্পাসে ফেরার আকুলতা শিক্ষার্থীদের তাড়া দিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল কবীর ফারহান বলেন, “প্রতিবছর শরৎ আসার সাথে সাথে আমাদের ক্যাম্পাস নতুন সৌন্দর্যে রূপ নেয়, যা মুগ্ধতা ছড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ এই পরিবারের সকলের মাঝে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও শরৎ এসেছে। প্রকৃতিও সেজেছে তার নিজের সাজে। তবে নেই বিগতদিনের মত ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখা সেই শিক্ষার্থীরা।কাশফুল গুলো জনশূন্য ক্যাম্পাসেই তার সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবেই ঋতু পরিবর্তনের সাথে নষ্ট হতে থাকবে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য। এর ঘ্রাণ নেওয়া হবে না প্রকৃতি প্রেমিকদের।”

একই বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী ইফতিয়া জাহিন রাইদাহ’র মতে, “এসেছে শরৎ হিমের পরশ
লেগেছে হাওয়ার পরে, সকালবেলায় ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা ধরে! কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টির সীমানায় শরতের যে রুপ ধরা দিয়েছিলো তা বাংলার চিরচেনা এক শরতের রুপ, যা বারবার ফিরে আসে। শরতের এ রুপ সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য। ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, একাডেমিক ২ এর সামনের অংশে, লাইব্ররী ভবনের সামনে কিংবা জিরো হল গুলোর সাদা কাশফুল গুলো ও শরতের জানান দেয় সবাইকে। মেঘবালিকার সংস্পর্শে কাশফুলের এ নান্দনিকতা নোবিপ্রবির প্রতিটি প্রাণে ঘোর সঞ্চার করে।”

লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বার্তা বাজার / ডি.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর