আ.লীগের সম্মেলন, রায়গঞ্জে নতুন নেতৃত্ব চায় তৃণমূল

দীর্ঘ ৮ বছর পর ২৯ অক্টোবর রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এদিকে,সম্মেলনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের তরুণ নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন।

তবে নবীণ ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠিত হবে এমন আশা দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের। সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে উপজেলার নিমগাছী ডিগ্রি কলেজ মাঠে। এদিকে টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠন করে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় রাজপথ দখলসহ রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে দলটি।

অবশ্য টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে দলে। তবে তাদের বাদদিয়ে বিভিন্ন কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনে সেই নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে উপজেলা জুড়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা ও সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম টিপু।

কে হচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক? এ প্রশ্নকে ঘিরেই সবার আগ্রহ ২৯ অক্টোবরের দিকে। রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেইবার সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল হাদি আল-মাজী জিন্নাহ আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শরিফ উল আলম শরিফ।

দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছিলো। জাতীয় দিবস, বিশেষ দিবস, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোও পালন করা হয়েছে দায়সাড়া ভাবে। এছাড়া দীর্ঘদিন মূল দলের সম্মেলন না হওয়ায় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে, এসব কারণে দলে বড় ধরনের কোন বিশৃংখলা দেখা না দিলেও এবারের সম্মেলনে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।

এদিকে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের সম্মেলনের ঘোষণার পর থেকে উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও কাউন্সিলদের চুড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে কৌশলে ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে কাউন্সিলর তালিকায় এদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন বলে জানা যায়। অথচ তালিকায় নেই দলের নিবেদিত ও ত্যাগী নেতারা।

এব্যাপারে উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক গাজী এসএম আজিমুদ্দিন ক্ষোভের সাথে জানান, ১৯৭২সালে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর সাথে হাত মিলাতে পারলেও ৪৮বছর পর নিজ উপজেলার সম্মেলনে কাউন্সিলর হতে পারলাম না। অথচ, বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে কাউন্সিলর বানানো হয়েছে। এমনকি একই বাড়ি থেকে ৫-৬জনকে কাউন্সিলর বানানো হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩ বারের সিনিয়ির সহসভাপতি মো. আব্দুর রহিম মাষ্টার বলেন, বিএনপি-জামায়াতের লোকজনসহ অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাউন্সিলর বানানো হলেও আমাকে বি ত করা হয়েছে।

তার মতো অনেককেই কাউন্সিলর বানানো হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। এতে দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সমালোচনার মুখে পরেছেন তারা। ৮ বছর পর সম্মেলন হচ্ছে তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। নতুন করে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের মধ্যে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নতুন করে দলের নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩জন করে মোট ৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তারা নির্বাচিত হতে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে রাত-দিন কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন উপর মহলে। তবে, সভাপতি পদের জন্য নেতাকর্মীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছেন সাবেক এমপি মরহুম গাজী ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন।

পিতার ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তার প্রতি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। কর্মীবান্ধব এবং দলের প্রতি অনুগত হওয়ায় তার গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। সম্ভবত তিনিই রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে আসীন হতে পারেন বলে অধিকাংশ নেতাকর্মীর ধারণা।

একই পদের অপরপ্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাদী আল মাজী জিন্নাহ। তিনি জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ি হওয়ায় বিগত ৮বছরে দলীয় কার্যক্রমে ও নেতাকর্মীদের জন্য প্রত্যাশিত সময় দিতে পারেননি। এ কারণে তৃণমূলের কাছে তিনি ঘেঁষতে পারছেন না বলে জানান অনেকেই।

তবে, আব্দুল হাদী আল মাজী জিন্নাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এক বাড়িতে ৫-১০জন যোগ্য লোক থাকলে তারা কাউন্সিলর হতেই পারেন। এটি দোষের কিছু না।

এদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদেও নতুন নেতৃত্ব আসা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এ পদেও যোগ্য এবং ত্যাগী প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ভালো সাড়া পাচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা সম্প্রীতি মঞ্চের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং উপজেলা আ’লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয়। তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক ও সমাজ সেবক হিসেবে নেতাকর্মীদের কাছে সুপরিচিত। আপদে বিপদে সব সময় কাছে তাকে পেয়েছেন তারা। দীর্ঘসময় তৃণমূলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হৃদয় কখনো দলের বিরুদ্ধে কোন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হননি।

আবুল কালাম আজাদ হৃদয় বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে মাঠে ছিলাম। এ প্রাণের সংগঠনকে আরো এগিয়ে নিতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছি। আমার অতীত কর্মকান্ড মূল্যায়ন করে কাউন্সিররা আমাকেই নির্বাচিত করবে বলে আমি আশাবাদি। অপরদিকে, একই পদের আরেক প্রার্থী শরিফ উল আলম শরিফ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক। তিনিও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কাউন্সিলরদের কাছে সমর্থন আদায়ের জন্য ছুটে চলেছেন। শেষ পর্যন্ত লড়াই এ দুজনের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে শরিফের বিরুদ্ধে জমি দখল, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বলে জানান দলের নেতাকর্মীরা।

শরিফ উল আলম শরিফ বলেন, কাউন্সিল সামনে আসলে প্রার্থীদের নামে নানা ধরণের অভিযোগ উঠেই থাকে। আর কাউন্সিলদের তালিকা তৈরী করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। এখানে আমার বা আমাদের কোন হাত নেই। উত্থাপিত অভিযোগগুলো মিথ্য, ভিত্তিহীন। এ সম্মেলনে সভাপতি পদে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আবু বকর সিদ্দিকও প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে মাঠে রয়েছেন, জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম হাসান সুমন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এ্যাড. লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা থেকে ২শ’ ৬৬ জন কাউন্সিলর ও ডেলিগেট নির্বাচন করা হয়েছে। তারা দলের নতুন নেতা নির্বাচন করবেন।

নাম প্রকাশ না শর্তে এক মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আ.লীগের কয়েকজন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা নতুন মোড়কে পুরাতন মাল চাই না। আমরা চাই তরুণ নতুন নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসবে। যারা মাঠের নেতা ছিলেন, লড়াই সংগ্রাম করে দুর্দিনে দলকে সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচিত হোক এটাই চাই।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ইউনিয়ন কমিটি থেকেই কাউন্সিলরের তালিকা করার নিয়ম। কোনভাবেই এর ব্যত্তয় ঘটানো যাবেনা। তবে, তালিকার ব্যাপারে ১৪টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে তদন্ত টিম কাজ করছে। ওই কমিটি কঠোরভাবে বিষয়টি দেখবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর