মেশিন ছুঁলেই ৪২ স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট!

মেশিনে হাত রাখা মাত্র, কম্পিউটার মনিটরে উঠে আসছে মানবদেহের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে হার্ট, কিডনি, ফুসফুসসহ শরীরের ৪২ প্রকারের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অবস্থা। তাৎক্ষণিক দেয়া রিপোর্টে চিকিৎসাপত্র ও ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে সাত থেকে দশ হাজার টাকার ওষুধ।

হাতের চাপে মুহুর্তেই এমন পরীক্ষা ও সে অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান পদ্ধতির কোন অস্তিত্বের বিষয়ে জেলার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ’রা নিশ্চিত করতে না পারলেও কোন অনুমোদন ছাড়াই পাবনার পৌর এলাকার থানাপাড়ায় চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে আসছিল ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বুধবার রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও চেয়ারম্যান এম এ আকবর আটক করে পুলিশ।

ভুক্তভোগীরা জানান, গত প্রায় একবছর ধরে সদর থানা ভবন সংলগ্ন একটি আটতলা ভবনের চারতলার তিনটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে এমন প্রতারণার ফাঁদ খুলে বসেন শহরের নয়নামতি এলাকার আকবর হোসেন ও তার সহযোগীরা। পাবনার দাপুনিয়া বিবি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি সমমান পরীক্ষায় পাশ করে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ইউনানী ও অ্যালোপেথিক পদ্ধতির চিকিৎসাও দেন আকবর এবং আকর্ষণীয় বেতনের লোভ দেখিয়ে জামানত নিয়ে প্রায় অর্ধশত নারী পুরুষকে নিয়োগ দেয় ইউনি হেলথ সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে আসা প্রতি রোগীর জন্য আকর্ষণীয় কমিশনের আশ্বাস ও দেয় কর্তৃপক্ষ।

ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের স্বাস্থ্যকর্মী ফারজানা লাবণী জানান, কর্তৃপক্ষের কথায় বিশ্বাস করে আমি আমার বেশ কয়েকজন স্বজন ও প্রতিবেশীদের চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রাজি করিয়ে এই চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসি। হাতের স্ক্যান পরীক্ষার জন্য এক হাজার টাকা ও পরে প্যাকেজ চিকিৎসায় ওষুধ বাবদ আট থেকে দশ হাজার টাকা করে নেয়া হয় তাদের কাছে। ওষুধের কোর্স সম্পন্নের পরও কোন রোগীরই স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় তারা আমাকে নানা প্রশ্ন করেন। এতে আমারও সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

একই ধরণের অভিজ্ঞতার কথা জানান, প্রতিষ্ঠানটির স্বাস্থ্যকর্মী আবু তালেব, মনিরা, নাদিরা, আফরিন, শারমিন, সালমা, নাজমুল, আজিজুলসহ বেশ কয়েকজন কর্মী। স্বাস্থ্যকর্মী মনিরা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এ আমরা সবাই মিলে বকেয়া বেতন চাইলে তারা নানা টালবাহানা শুরু করে। বিষয়টি আমরা গণমাধ্যম কর্মীদের জানালে তারা এসে মালিক এম এ আকবরের সাথে কথা বলে ইউনি হেলথের প্রতারণার বিষয়টি ধরে ফেলেন। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা নাসিম আহমেদ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা বুধবার রাতে ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অফিসে অভিযান চালাই। সে সময় প্রতিষ্ঠানের মালিক এম এ আকবর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কিংবা পরীক্ষার কোন অনুমোদনপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। তিনি মাদ্রাসা থেকে এসএসসি সমমান পরীক্ষায় পাশ করে কিভাবে নামের আগে ডাক্তার লিখে চিকিৎসা দিচ্ছেন তারও সদুত্তর দিতে পারেননি।

প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া ও প্রতারক চক্রের কাজ বলে মনে হয়েছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডাঃ সালেহ মোহম্মাদ আলী জানান, স্পর্শের মাধ্যমে একসাথে ৪২টি পরীক্ষার এমন কোন মেশিন চিকিৎসা বিজ্ঞানে আছে বলে আমার জানা নেই, বিষয়টি বাস্তবসম্মতও নয়। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা ছাড়া রক্ত ও মস্তিষ্কের পরীক্ষা কিভাবে সম্ভব আমার জানা নেই।

জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মেহেদী ইকবাল জানান, ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস নামে কোন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ অবগত নয়। তাদের আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, বৃহঃস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনায় সদর থানার এস আই জহরুল ইসলাম বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও স্বাস্থ্যকর্মী জাকির হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় এম এ আকবরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর