হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা বন্ধের অভিযোগ

দিনাজপুরের সদর উপজেলার কমলপুরে অবস্থিত মাকিহারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ভূয়া ডিও লেটারে দিনাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামানকে মাকিহারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি করে কমিটির অনুমোদন দিয়েছে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক। নীতিমালায় সহকারী শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না উল্লেখ থাকলেও নিয়ম না মেনে এডহক কমিটি অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (২১ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে (নিমতলা) সংবাদ সম্মেলনে মাকিহারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম ফজলুল হকসহ প্রতিষ্ঠানটির বেতন ভাতা বঞ্চিত ১১ জন শিক্ষক কর্মচারী এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাকিহারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক একেএম ফজলুল হক বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে সঠিকভাবে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করেও বিদ্যালয়ের ৪জন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে সাময়িক বরখাস্তকৃত শিক্ষক খায়রুল ইসলাম, সাইদুর রহমান ও তাদের সহযোগি আফজাল হোসেন এবং মোসলেম উদ্দিনের অসহযোগিতার কারণে গত দুই মাস ধরে বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। ফলে ১১ জন শিক্ষক কর্মচারী তাদের স্ত্রী সন্তানসহ মানবেতর জীবন যাপন করছে।

১৯৯০ সালে মাকিহারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভালোভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছিল। গত ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্তকৃত ওই ৪ জন শিক্ষক আমার নামে ষড়যন্ত্রমূলক নারী ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। র্দীঘ আট বছর মামলার কার্যক্রম চলার পর আদালত আমাকে বেকুসর খালাস প্রদান করে। ২০০৩ সালে আদালত থেকে আমি বেকসুর খালাস পেলেও দীর্ঘ ৩ বছর আমাকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়নি।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমার র্দীঘ সময়ের অনুপস্থিতিতে ওই চারজন শিক্ষক আরো চারজন শিক্ষক ও কর্মচারীকে নিয়োগ প্রদান করে। ওই শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে ওই সময় বেতন স্কেলের অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এছাড়াও ওই শিক্ষকদের মধ্যে সহকারী শিক্ষক খায়রুল ইসলাম ডিগ্রি পাশের ভূয়া সনদপত্র উপস্থাপন করে শিক্ষকতায় যোগদান করেন।

পরবর্তীতে ২০১৯ সালে শিক্ষামন্ত্রনালয় হতে নিরীক্ষা বিভাগের কর্মকার্তাবৃন্দ বিদ্যালয়ের যাবতীয় বিষয় নিরীক্ষাকালে চক্রান্তকারী ৪জন শিক্ষকের মধ্যে মো. খায়রুল ইসলামকে সনদ জালিয়াতি করে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান বেতন স্কেলের থেকে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করায় ওই সময় স্কুল কমিটির সভাপতিকে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলে। অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণকারী অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে একাধিকবার অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা দেননি। পরে বিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে বিধি মোতাবেক খায়রুল ইসলাম ও সাইদুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। ফলে বিধি অনুযায়ী বিদ্যালয় কমিটি না থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিল বেতন উত্তোলন করতে থাকি। তবে অভিযুক্ত ওই চারজন শিক্ষক এই সময়গুলোতেও অনেক অনুরোধের পরও তারা বিল বেতনে স্বাক্ষর করেননি।

মাকিহারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এরই মধ্যে বিদ্যালয়ে এডহক কমিটি গঠনের জন্য গত ১৫ জুন আমি দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন দাখিল করি এবং কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াকরণের অনুমতি লাভ করি। যথানিয়মে নাম পদবীসহ এডহক কমিটির জন্য চারজনের নাম চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিকট অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করি এবং ডকেট করে নেই। কিন্তু বোর্ড চেয়ারম্যান স্থানীয় সাংসদের ভুয়া ডিও লেটার দেখিয়ে প্রধান শিক্ষকের ডকেটকৃত সভাপতিকে মনোনয়ন না দিয়ে ডিও লেটারে উল্লেখিত দিনাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামানকে সভাপতি করে গত ১ জুলাই নীতিমালা বর্হিভূতভাবে এডহক কমিটি অনুমোদন দেন। অথচ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিধিতে উল্লেখ আছে একজন শিক্ষক অন্য একটি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে পারবেননা।

পরবর্তীতে এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মো. কাইয়ুম সরকার বাদি হয়ে এডহক কমিটির সভাপতির প্রত্যাহার চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। হাইকোর্ট গত ১৩ জুলাই মনিরুজ্জামানের সভাপতির পদটি স্থগিত করেন। কিন্তু অবৈধ সভাপতি মনিরুজ্জামান দাতা সদস্যের আনীত মামলায় স্থগিতাদেশ পাবার পরেও প্রধান শিক্ষককে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গত ১৫ জুলাই বিদ্যালয়ের মিটিং ডাকার নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশে তিনি ১৮ জুলাই মিটিং আহবানের কথা জানান। পরবর্তীতে সুপ্রীম কোর্টে অবৈধ সভাপতি মনিরুজ্জামান মামলাটি আপীল করেন। সুপ্রীম কোর্ট ৬ আগস্ট তারিখে শুনানি অন্তে পূর্বের আদেশ বহাল রাখেন।

সুপ্রীম কোর্টের আদেশ পূনর্বহালের পরে পূর্বের তারিখ দেখিয়ে গত ৬ থেকে ১২ জুলাই তারিখের মধ্যে বিদ্যালয়ের বাইরে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ইমদাদ সরকারের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে তিনটি অবৈধ মিটিং দেখিয়ে বর্তমান প্রধান শিক্ষক একেএম ফজলুল হককে কারণ ছাড়াই নিয়ম বর্হিভুতভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং ইতোপূর্বে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত থাকা দুই শিক্ষক মো. খায়রুল ইসলাম ও সাইদুর রহমানকে পুনর্বহাল করেন। সেই সাথে সহকারী শিক্ষক আফজাল হোসেনকে ভারপ্রপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করেন।

হাইকোর্টের আদেশপ্রাপ্ত হবার পরে এবং অবৈধ সভাপতি মনিরুজ্জামানের গৃহীত সিদ্ধান্তের পরেও ৭ জন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারীসহ মোট ১১জন জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরে গত জুন ও জুলাই মাসের বেতন ভাতা উত্তোলন করি। কিন্তু ওই চারজন শিক্ষক অপর ৭ জন শিক্ষকের নামে জেলা প্রশাসক বরাবরে মিথ্যা তথ্য ও কাগজপত্র উপস্থাপন করে অভিযোগ আনেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক দুই পক্ষের কাছেই ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং জবাব প্রদানের জন্য পত্র প্রেরণ করেন। এমতাবস্থায়, প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার জবাব দাখিল করি।

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব ইমদাদ সরকার বিদ্যালয়ে নিজের পছন্দমত সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মনোনীত করতে ওই চারজন শিক্ষককে বিভিন্ন প্রলোভন ও কুপরামর্শ দিয়ে বিদ্যালয়টির পরিবেশ বিনষ্ট করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক।‘

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘মনিরুজ্জামান একজন সহকারী শিক্ষক এটা আমার জানা ছিল না। অনেকেই নিজেদের পদ গোপন করে কাগজ পাঠায়। স্থানীয় সংসদের ডিও লেটারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলের কাজ ডিও লেটার দিয়ে হয় না। তবে যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে আমরা সেটা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

বার্তা বাজার / ডি.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর