ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাড়ে ৫শ’ মণ্ডপে চলছে দুর্গাপূজার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। আগামী ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে পাঁচদিন ব্যাপী শারদীয় দূর্গোউৎসব শুরু হবে। এখন চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের দিনগণনা।
চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৫৫টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা কমেছে ২৪টি। গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৫৭৯টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ( পৌরসভাসহ) ৭০টি, নাসিরনগর উপজেলায় ১৪৫টি, সরাইল উপজেলায় ৪৭টি, কসবা উপজেলায় ৫০টি, আখাউড়া উপজেলায় ১৯টি, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১২টি, বিজয়নগর উপজেলায় ৫২টি, নবীনগর উপজেলায় ১১৯টি ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৪১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে পূজাকে নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও তেমন উচ্ছ্বাস নেই। করোনা ভাইরাসের প্রভাব ও সরকারি নির্দেশনার কারণে তাদের আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে। এবছর প্রতিমার আকার ও মণ্ডপগুলোর প্যান্ডেল অন্যান্য বছরের তুলনায় ছোট করা হয়েছে।

বর্তমানে মণ্ডপগুলোতে চলছে ডেকোরেশন ও প্রতিমাতে রঙের কাজ। প্রতিমা শিল্পীরা প্রতিমাগুলোকে শৈল্পিক রূপ দেয়ার জন্যে শেষ মুহুর্তের তুলির আঁচর ও সাজ-শয্যার কাজ করছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কান্দিপাড়ার প্রতিমা শিল্পী ঝন্টু পাল, সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের হিমাংশু পাল ও রবীন্দ্র পাল জানান, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এবছর প্রতিমার সাইজ ছোট করা হয়েছে। প্রতিমার আকার ছোট হওয়ায় তাদের টাকার পরিমানও অনেক কমে যাবে। তারা জানান, বর্তমানে প্রতিমাতে চলছে রঙতুলি ও সাজ-সজ্জার কাজ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পূর্ব পাইকপাড়ার গগন সাহা বাড়ী রোডের সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারন সম্পাদক আশিষ কুমার সাহা জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে এবছর পূজার আয়োজন অনেকটা কাটছাট করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবছর প্রতিমা ও প্যান্ডেলের আকার ছোট করা হয়েছে। তাছাড়াও সাদামাটা আলোকসজ্জা করা হবে। সাউন্ড সিস্টেম বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন করা হবে।

পূর্বপাইকপাড়া ঐক্যতান যুব সংঘের সভাপতি লিটন সাহা জানান, দশভূযা দেবি দূর্গামায়ের আগমনী বার্তায় ধরনী আজ বেশ পুলকিত। তবে করোনার কারণে এ বছর ভক্তকূলে আনন্দে কিছুটা ভাটা পরেছে। তিনি বলেন, এ বছর পূজায় সব কিছু কাটছাট করা হয়েছে।

পৌর এলাকার পূর্ব পাইকপাড়ার দাস পাড়া সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজক সত্যরঞ্জন দাস জানান, করোনার কারণে এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে পূজা উদযাপন করা হবে।

সনাতনী বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী এবছর আগামী ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপী শারদীয় দূর্গোউৎসব শুরু হবে। ২৩ অক্টোবর শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে মহাসপ্তমী বিহিত পূজা। এই দিনে ষোড়শ উপাচারে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে অষ্টমী, নবমীর পর ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দশমী।

পৌর এলাকার কান্দিপাড়ার শিমু শীল বলেন, করোনার কারণে আমরা সতর্কতার সাথে পূজা করবো। দেশ ও জাতির কল্যান কামনায় প্রার্থনা করবো।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সোমেশ রঞ্জন রায় জানান, এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৫৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর হয়েছিলো ৫৭৯টি মণ্ডপে। এ বছর পূজা কমেছে ২৪টি। তিনি বলেন, আমরা করোনাভাইরাসের কারনে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন করবো। এছাড়া এবছর খরচ কমাতে প্রতিমা ছোট ও ডেকোরেশন কমানো হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, মুখে মাস্ক পরিধান ছাড়া কাউকে মণ্ডপে ঢুকতে দেয়া হবেনা। তিনি জানান, প্রতিটি মণ্ডপেই আমাদের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থাকবে। তিনি মণ্ডপে কেউ যেন বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, এ বছর জেলার পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় ৬শত পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও থাকবে একাধিক মোবাইল টিম। এর পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা সাদা পোশাকে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, পূজা মণ্ডপসহ কোথাও কেউ বিশৃংখলার চেষ্টা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।

বার্তা বাজার / ডি.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর