সাতক্ষীরায় ওষুধ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

শেখ আমিনুর হোসেন,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে মাটির নিচে পুঁতে রাখা বিপুল পরিমান ওষুধ উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনের পিছনে সেপটি ট্যাংকের কাছে মাটির নিচে পুঁতে রাখা ওষুধের স্যাম্পল পুলিশ নিয়ে এলেও প্রায় সব ওষুধই সেখানে পড়ে রয়েছে। কয়েকজন আনসার সদস্য এলাকাটি ঘিরে রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওষুধ চুরির ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যেয়ে তা প্রত্যক্ষ করার পর সেসব ওষুধ পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হবে।

ওষুধ চুরির বিষয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, তিনি পাঁচ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) মো. বদিউজ্জানকে আহবায়ক করে অপর সদস্যরা হলেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষের প্রতিনিধি এবং ইউএনও সদর দেবাশীষ চৌধুরী। জেলা প্রশাসক জানান, আগামি সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটির তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহজাহান আলি জানান, তার নির্দেশে একই বিষয়ের ওপর তিন সদস্যর আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউরোলজি বিভাগের ডা. রুহুল কুদ্দুসকে আহবায়ক করে কমিটির অপর সদস্যরা হলেন ডা. প্রবীর কুমার বিশ্বাস ও ডা. আক্তারুজ্জামান। এ কমিটিও আগামি সাতদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেবে বলে কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গ জানতে চাইলে তত্ত্ব্বাবধায়ক ডা. শাহজাহান আলি জানান, উদ্ধার হওয়া কোনো ঔষুধের গায়ে সরকারি সিল নেই। এতে লাল সবুজ চিহ্নও নেই।

এ ঔষুধ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোরের নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যে গজ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করি তা থান কাপড়ের তৈরি। অথচ যা পাওয়া গেছে তা কাগজের। তা ছাড়া স্টোর থাকা কোনো ওষুধ খোয়া যায়নি বলে আমি স্টোর কীপার আহসান হাবিব ও স্টোর অফিসার বিভাস চন্দ্র’র কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ওষুধ ক্রয় বা গ্রহনের পর তা সার্ভে কমিটি দিয়ে পর্যবেক্ষন করানো হয়।

সেসব তালিকা অনুসরন করলে পরিস্কার হবে যে এ ওষুধ সরকারি নয়। এমনকি তার স্টোর থেকে তা খোয়া যায়নি। তিনি বলেন ঘটনা যে বা যারাই ঘটাক তা ঘটেছে তিনি সাতক্ষীরায় যোগদানের আগে। তিনি বলেন, আমি এখানে যোগ দান করছি ২০১৭ এর ১৪ অক্টোবর।এদিকে বর্তমান সিঙ্গাপুর অবস্থানরত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল ওষুধ চুরির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন অতি দ্রুত তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইন আমলে আনতে হবে।

তিনি বলেন সরকার ওষুধ দেয় বিনামূল্যে রোগীদের মাঝে বিতরনের জন্য। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ এ ওষুধ বিক্রি করে খায়। তিনি তাদের দেশের শত্রু বলে সমালোচনা করেন। এদিকে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক এড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন ‘ ওষুধ চোরদের যে কোনো মূল্য ধরে জনগনের সামনে আনতে হবে। তাদের তুলতে হবে বিচারের কাঠগোড়ায়’। তিনি এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন বলেও উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপুর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে সেপটিক ট্যাংকের কাছ থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় ১০ বস্তা ওষুধ উদ্ধার করা হয়। এদিন বৃষ্টির পানিতে ওষুধ ভর্তি বস্তাগুলি বেরিয় পড়লে তা সবার নজরে আসে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় এসব ওষুধ, ক্যানালা, জিপসানা, গজ ব্যান্ডজ ও চিকিৎসা সামগ্রী । বেরিয় পড়া এসব ওষুধ ফের মাটি চাপা দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের সাথে দরকষাকষির সময় তা জানাজানি হয়ে যায়।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর