শেখ হাসিনা শান্তির মানসকন্যা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চতুর্থ বারের মতো নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। যে দেশটিকে তলা বিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করা হতো সেই বাংলাদেশকে জাতিসংঘের বেধে দেয়া তিনটি সূচক (GNI, HAI & EVI) এর সবগুলো পূরণ করতে যোগ্য নেতৃত্ব দেন। যার ফলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জাতিসংঘের তিনটি শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করে।

শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি এনে দিয়েছে। সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘ভ্যাকসিন হিরো’,২০১০ সালে শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ২০১৩ সালে দারিদ্র দূরীকরণ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ‘সাউথ সাউথ’ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ সালে সমাজের নিগৃহীত জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরীকরণে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সাউথ সাউথ কোঅপারেশন ভিশনারি’ অ্যাওয়ার্ড, নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখায় ‘প্ল্যানেট ফিফটি চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে ‘গ্লোবাল উইম্যান্স লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ডসহ আরও নানা সম্মাননা অর্জন করেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার-২০১৮’ প্রদান করে। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চ্যাম্পিয়ন অব স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ইউনিসেফ আয়োজিত ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর), ২০১৯ যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদরদফতরে ‘ইমিউনাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বীকৃতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র সমুন্নত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তাকে বিভিন্ন সময় সম্মানিত করেছে। ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে পার্বত্য শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। দীর্ঘ দুই দশকের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইউনেস্কো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার দেয়।

১৯৯৯ সালে অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র বলেছিলেন, জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনার উদ্যোগ ও নিষ্ঠা বিশ্বে শান্তির সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ক্ষমতার ওই মেয়াদেই জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ ( CERES) মেডেল প্রদান করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালামের নামে প্রতিষ্ঠিত ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজরি কাউন্সিল-এর ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পান। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও পারস্পরিক সন্তোষজনক সম্পর্ক, নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ, নারী ও শিশু এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতায় অবদানের জন্য এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ওই বছরই আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয় ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন।

বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্ব দানের জন্য শেখ হাসিনা গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ‘গ্লোবাল সামিট অব ওমেন’ তাকে এ সম্মাননা দেয়। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হন শেখ হাসিনা। অসহায় মানুষগুলোর প্রতি মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ (মানবতার মা) উপাধিতে ভূষিত হন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ পদক পান। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকং ভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে এ দুটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।

২০১৫ সালে শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দূরদর্শী পদক্ষেপে নেওয়ায় তাকে সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই বছরই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এমডিজি) অর্জনে বিশেষ করে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে অবদানের জন্য জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) ও ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ২০১৯ সালে তাকে এ পদক দেওয়া হয়। নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুবার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ ও ২০১৩ সালে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করে।

বিশ্বের বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি ডক্টরেট ও সম্মাননা পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজ পোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান করে।

১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যালবার্টা ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিবারেল আর্টস এ ভূষিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব ল’ প্রদান করে। ১৯৯৯ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে দেসিকোত্তামা ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে।

শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। তাকে ওই সম্মাননা দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি, ২০০০ সালে ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস সম্মাননা প্রদান করে।

এছাড়া ১৯৯৯ পার্ল এস বাক অ্যাওয়ার্ড, মাদার তেরেসা পদক, এমকে গান্ধী পদক, ২০০৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ পদক, হেড অব স্টেট পদক, ২০১১ ও ২০১২ গ্লোবাল ডাইভার্সিটি অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৭ নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার পান। খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও আইসিটি উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি তাকে সনদ প্রদান করে।

আল্লাহর রহমতে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার যে বিরল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তা সত্যি অবিস্মরণীয় ও অতুলনীয়। কোন অ্যাওয়ার্ড দিয়ে যা তুলনা করা যায়না। আপনি প্রতিনিয়ত দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই আমার দৃষ্টিতে আপনি- ‘HASINA THE HUMANITY, HASINA THE PROSPERITY’।উপহারস্বরূপ হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত একটি উপাধি দিচ্ছি- ‘শান্তির মানসকন্যা’ (DAUGHTER OF PEACE)। আমার এ উপাধি আপনি গ্রহণ করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি আশা করি, বিশ্বাস করি এবং সারা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনাকে যেন অবশ্যই ‘শান্তিতে’ নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

লেখক : এম. আবির হাসান ইবনে হাবিব, শ্রেণীঃ এমবিএ, ক্রমিক নং- ০০০২৭, ঢাকা কমার্স কলেজ।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর