মেটালের কৃষিযন্ত্রে ভাগ্য বদলে গেল সংগ্রামী পরিমল বানুর

বগুড়ার শিবগঞ্জের গৃহবধূ পরিমল বানু। উপজেলার জানগ্রামের বাসিন্দা মোসলেম মণ্ডলের ঘরে কিশোরী বধূ হয়েই আগমন ঘটেছিল তার। স্বামী নিজের ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে আর ঘরের সাথে থাকা চালকল দিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে বেশ সুখের সংসার ছিল তার। কিন্তু জন্ডিসে স্বামীর মৃত্যুতে কপাল পুড়লো তার।

স্বামির মৃত্যুর পর দুই ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে যেন অকুল পাথারে ভেসে গেলেন পরিমল বানু। তবুও ২০০৪ সালে চেয়েছিলেন স্বামীর পুরোনো ট্রাক্টর চালিয়ে ভাগ্য ফেরাবেন। কিন্তু দেনার দায়ে সেটাও হাত ফসকে বেড়িয়ে যায়।

নিজের কিশোর ছেলে সাগরকে তখন দুবাই পাঠান পরিবারের কাজ করতে। পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে কিশোর সাগর নিজেকে ভাসিয়ে দেন কষ্টের সাগরে। পরিমলের কোলে তখন ৭ বছর বয়সের আলামিন আর ৪ বছরের ছোট মেয়ে শান্তনা আক্তার।

তখন ছোট্ট আলামিনও বাস্তবতাটা বুঝতেন। পুরোনো ট্রাক্টর নিয়ে শিশু আলামিন মাঠে যাওয়া শুরু করেন। কিন্তু আলামিনের ট্রাক্টরের চাকা ঘুরিয়ে অর্জন করা টাকায় চলছিল না সংসার। ছিল দেনার চাপও। সব ভেবে পরিমল বানু সেটিও বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বিক্রির টাকা দিয়ে ধার-দেনা শোধ করে বছর ঘুরতেই ২০০৬ সালে স্থানীয় কৃষি অফিসে আবার নতুন ট্রাক্টরের জন্য আবেদন করেন তিনি। নতুন ট্রাক্টর পেয়ে একটু একটু করে আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেন তিনি।

তবুও বাধা ছিল নানা রকম। শুরুতে সাধারণ কৃষকরা কাজের জন্য এমন আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করতে চাইতেন না। কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারলেন যে মেটালের এই ট্যাফে ট্রাক্টর ব্যবহার করে কম সময়ে জমি চাষাবাদ করা যায়, তখন তারাও আগ্রহী হয়ে ওঠে এই যন্ত্রে। নিজের জমির সাথে সাথে পরিমল বানু গ্রামের আরও কৃষকদের জমি চাষ করতে শুরু করেন।

পরিমল বানুর ট্রাক্টর শিবগঞ্জের মাটি পেরিয়ে চষতে শুরু করে টাঙ্গাইল, নাটোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়ার চাষের জমি। দূরদুরান্তের কৃষি পেশার মানুষ কৃষিতে এমন আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার নিয়ে জানতে পরামর্শ নিতে আসেন পরিমল বানুর পরিবারের কাছে।

সাগর মায়ের এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে দেশে ফিরে আসেন। সহযোগী হন মায়ের এই ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ের। প্রতি দুই বছর পর পর পুরাতন মডেলের ট্রাক্টর বিক্রি করে নতুন ট্রাক্টর কিনেছেন তারা। ধীরে ধীরে পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন পরিমল বানু।

বিয়ে দিয়েছেন তিন ছেলেমেয়ের। ছোট মেয়ে স্নাতক করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কুঁড়ে ঘরের বদলে এখন হয়েছে ইটের ঘর, নিজের চাষের কিছু জমি, গোয়ালে দুধেল গরু আর জমির ফসলে ভরেছে বাড়ির উঠান।

গত ১৫ বছরে এ পর্যন্ত মেটালের আইশার ও ট্যাফে ব্র্যান্ডের মোট ১৪টি ট্রাক্টর কিনেছেন পরিমল বানু। সাথে নিয়েছেন ২টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। ইতিমধ্যে আরও একটি হার্ভেস্টারের জন্য আবেদন করেছেন তিনি।

নিজের সেই অসহায় সময়ের কথা এখনও ভোলেননি পরিমল বানু। কিন্তু মেটালের ট্রাক্টরের মত আধুনিক কৃষিযন্ত্র-ই যেন তাকে নিয়ে গেছে সফলতার শিখরে। আগামীতে দেশের আরও অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে যেতে চান তিনি।

বারতাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর