‘শাহপরাণের মাজার জিয়ারত করে ওই দম্পতি এমসি কলেজে থেমেছিল’

সপ্তাহের পবিত্র দিন শুক্রবার বিকালে ছুটি পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেট কারে করে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাসা থেকে রওনা দেন হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করতে। সন্ধ্যার আগেই জিয়ারত শেষ করে রওয়ানা দেন বাড়ির দিকে।

রাত পৌনে ৮টার দিকে তারা মহাসড়কসংলগ্ন এমসি কলেজের প্রধান ফটকে এসে পৌঁছান। সেখানে অনেক দোকানপাট, মানুষেরও প্রচুর ভিড়। সড়কের একপাশে গাড়ি দাঁড় করে স্বামী সিগারেট কিনতে নামেন।

তিনি কিছুদূর যাওয়ার পরই গাড়ি ঘিরে ফেলে ৪ যুবক। তারা ওই তরুণীবধূকে লক্ষ্য করে নানা অশ্লীল মন্তব্য শুরু করে। দ্রুত ছুটে আসেন স্বামী। তিনি এর প্রতিবাদ করেন। তখন তাকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়। স্বামীকে রক্ষায় গাড়ি থেকে নেমে আসেন স্ত্রীও। এরপরই এক যুবক উঠে বসে গাড়ির চালকের আসনে। অন্য ৩ জন স্বামী-স্ত্রীকে গাড়িতে উঠতে বাধ্য করে। এরপর দ্রুত গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এমসি কলেজের প্রধান ফটক থেকে কয়েকশ মিটার দূরে অবস্থিত ছাত্রাবাসের একেবারের শেষ প্রান্তের ৭ নম্বর ব্লকে।

গাড়ির পেছনে পেছনে মোটরসাইকেলে আসে আরও কয়েকজন। সেখানে স্বামীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে অন্ধকার-নির্জন এলাকায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। আর গাড়ির ভেতরেই পালা করে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে ৪ জন।

ওই ৪ জন হলো ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১ নম্বর আসামি সাইফুর রহমান (২৮), ২ নম্বর আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), ৩ নম্বর আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি (২৫) ও ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর (২৫)। এরপর বিধ্বস্ত স্বামী-স্ত্রীর টাকা, স্বর্ণালঙ্কারও লুটে নেওয়া হয়। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে দলবদ্ধ ধর্ষণ ঘটনায় দায়ের মামলার এজাহারের বিবরণ, আদালতে ধর্ষিতার দেওয়া ২২ ধারার জবানবন্দি এবং বাদীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

১২৮ বছরের সুপ্রাচীন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে এই দলবদ্ধ ধর্ষণ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উঠেছে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড়। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন সবাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটও ঘটনার পরপরই জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে। র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারসহ বিভিন্ন কৌশলে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা শুরু করে। আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য সীমান্তগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টায় ঘটনার সঙ্গে জড়িতরাও কম সময়ের ব্যবধানে একে একে ধরা পড়তে থাকে। ইতিমধ্যে মামলার এজাহারনামীয় আসামি সাইফুর, রনি, অর্জুন ও রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া রনির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত রাজন ও আইনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিধ্বস্ত স্বামী-স্ত্রী পায়ে হেঁটে ছাত্রাবাসের ফটকে এসে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় টিলাগড় পয়েন্টে যান এবং ফোন করে পুলিশকে বিষয়টি জানান। এরপর পুলিশ স্বামী-স্ত্রীকে নিয়ে ফের ছাত্রাবাসে যায়। সেখানে যাওয়ার পর পুলিশের উপস্থিতিতে হৃদয় পারভেজ নামের ওই ছাত্র জানায় চিৎকার শুনে সে এগিয়ে গেলে তার রুমমেট মাহবুবুর রহমান রনি তাকে ধমক দিয়ে ফেরত পাঠায়। এরপর সেখানে রনি ও তার সঙ্গীদের ছবি দেখানো হলে স্বামী-স্ত্রী মিলে আসামিদের শনাক্ত করেন।

এদিকে এ ঘটনায় গত রবিবার আদালতে ভিকটিম ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। শাহপরান থানার জিআরও পীযূষ দেবনাথ জানান, ভিকটিম আদালতকে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। এ বিবরণ আর মামলার এজাহারের বিবরণ প্রায় একই রকম বলেও তিনি জানান।

মামলার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা বিচার চাই, যারা আমাদের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে তাদের শাস্তি চাই। এমন শাস্তি চাই যাতে আর কোনো নারীর জীবনে এমন বিভীষিকা নেমে না আসে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধর্ষণকাণ্ডে সরাসরি ৪ জন জড়িত। এরা পালা করে ধর্ষণ করেছে। অন্যরা সহযোগিতা করেছে।’

সূত্র-দেশ রুপান্তর।

বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর